শিক্ষার আলো ডেস্ক
গত বছর আগস্টের কথা। অনলাইন ক্লাসে শিক্ষকের কাছ থেকে একটা ভিন্ন কিছু করার প্রস্তাব পেয়েছিলেন বুয়েটের একদল শিক্ষার্থী। নাসা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ভাবনাটা মেহরাব, তামিমুল, হাসান, ফাবিহা, রাবিব আর জেহাদুলের মনে ধরেছিল তখনই। তাঁরা সবাই কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। এ বছর স্পেস অ্যাপ চ্যালেঞ্জে অনারেবল মেনশন বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন তাঁরা।
করোনায় ক্যাম্পাস বন্ধ। তাই ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করলেন, ভূমিকম্প শনাক্ত করবে এমন একটি অ্যাপ বানাবেন তাঁরা। খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করে প্রতিযোগিতাটির আঞ্চলিক পর্বে জমা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। প্রকল্প পরিকল্পনা জমাদানের শেষ তারিখের আগের দিন বুঝতে পারলেন, তাঁদের এই প্রকল্প প্রতিযোগিতার নির্ধারিত বিষয়ের সঙ্গে ঠিক মিলছে না। দলের সবার মাথায় হাত। ঠিক পরদিন জমাদানের নির্ধারিত তারিখ ১০ দিন পেছানোর খবর তাঁদের জন্য আশার আলো হয়ে এল। ফলে নতুন করে পরিকল্পনা শুরু হলো। এরপর ছয়জন মিলে পরিকল্পনা করলেন, এমন একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বানাবেন, যেখান থেকে মহাকাশের স্যাটেলাইট–সম্পর্কিত নানা তথ্য, সেগুলোর অবস্থান ও কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে।
আঞ্চলিক পর্যায়ে তাঁদের এই পরিকল্পনা বিজয়ী হয়ে স্থান করে নেয় নাসার মূল প্রতিযোগিতায়। স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ নামের এই প্রতিযোগিতার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল প্রায় ১৫০টি দেশের তিন হাজার আট শতাধিক দল। সেখান থেকে বাছাই করা ৪০টি দল চূড়ান্ত পর্বের জন্য মনোনীত হয়। গত ২৮ জানুয়ারি চূড়ান্ত পর্বে ৮টি দলকে গ্লোবাল উইনার ও ৭টি দলকে অনারেবল মেনশন বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়। বাংলাদেশের একক দল হিসেবে অনারেবল মেনশন বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে বুয়েটের ছয় শিক্ষার্থীর এই দল।
ওয়েবসাইটটির ডিজাইন, সফটওয়্যার আর ওয়েব অ্যাপলিকেশনের কাজ করেছেন মেহরাব। অ্যাপ তৈরিতে কাজ করেছেন হাসান মাসুম আর জেহাদুল করিম। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ আর গবেষণার কাজ করেছেন রাবিব যাহিন ইবনে মমিন। ফাবিহা তাসনীম জানান তিনি তামিমুল এহসানকে সঙ্গে নিয়ে প্রকল্পের বিস্তারিত বিবরণ নিয়ে দুইটি ভিডিও বানিয়েছেন। এ ছাড়া তামিমুল স্যাটেলাইটের অবস্থাননির্দেশক যন্ত্রটিও তৈরি করেছেন।
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের উপদেষ্টা আরিফুল হাসান বলেন, ‘নাসার এই আয়োজনকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যাকাথন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতগুলো দেশের মধ্যে চূড়ান্ত পর্বে আমাদের দেশের এত বড় অর্জন অবশ্যই একটি গর্বের বিষয়।’ এবারের সাফল্যের মধ্য দিয়ে পরের প্রতিযোগিতাগুলোয় আরও ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখছেন আরিফুল। তিনি জানান, ইতিমধ্যে ৫০টি দল নিয়ে পরবর্তী প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। দেশব্যাপী এই প্রতিযোগিতা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টাও চলছে।
Discussion about this post