নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনার সংক্রমণ রোধে একবারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে রোটেশনভিত্তিক ক্লাসে জোর দেওয়ার পক্ষে তারা। শিশুদের সুরক্ষায় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানারও পরামর্শ তাদের। এরইমধ্যে যে কোনো সময় স্কুল খুলে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।
করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কওমি মাদ্রাসা ছাড়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এরপরও ছুটি বাড়বে বলে ধারণ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন করোনার টিকা নিয়ে মঙ্গলবার বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সব শিক্ষককে টিকা দিয়ে নিতে। যে কোনো সময় স্কুল খুলে দেব আমরা, আমার কোনো শিক্ষক যাতে টিকার আওতার বাইরে না থাকে। শিক্ষকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। সাত দিনের মধ্যে তাদের টিকা নেওয়া শেষ করব।’
এ পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্কুল খুলতে হলে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষকে টিকা দিতে হবে। পাশাপাশি কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। শিশুদের সংক্রমণ এড়াতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সময় এখনো আসেনি বলে তারা মনে করছেন। রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ কমছে, টিকাদানও শুরু হয়েছে। তবে দেশ করোনাভাইরাসমুক্ত হয়েছে বলা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘এখনই স্কুল খুলতে হলে বিস্তারিত পর্যালোচনা করতে হবে। স্কুল খোলার আগে সব প্রস্তুতি নিতে হবে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এরপরও কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে হবে। স্কুলের সঙ্গে হাসপাতালের নিবিড় যোগাযোগ রাখতে হবে।’
এদিকে করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি’র পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে, শিক্ষার্থীরা করোনার টিকা না পেলে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ খোলা কঠিন। তাদের সভায় ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলেও কোনো কাজ হয়নি। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হলে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকে টিকা দিতে হবে।’ স্কুল খোলার পর সংক্রমণের হার বাড়তে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
আর স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ এ প্রসঙ্গে বলেন, দাপ্তরিক কার্যক্রমে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। স্কুল খুলতেও এমন ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দরিদ্র শিক্ষার্থীরা ঝরে যাচ্ছে। অনেকে ভার্চুয়াল গেমে আসক্ত। অনেকে কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা দেওয়া উচিত। সব স্কুল একসঙ্গে না খুলে পর্যায়ক্রমে খোলা যায়।’ এছাড়া রোটেশনভিত্তিক ক্লাস নেয়ার পক্ষে তিনি।
Discussion about this post