মো. জহিরুল ইসলাম
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) প্রজাতন্ত্রের কর্মে এন্ট্রি লেভেলে নিয়োগের জন্য সাধারণত দুই ধরনের পরীক্ষার আয়োজন করে- ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার। নন-ক্যাডার পরীক্ষায় সাধারণত মোট ৩৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং তুলনামূলকভাবে সময় কম লাগে। পক্ষান্তরে বিসিএস ক্যাডার পরীক্ষায় মোট ১৩০০/১৫০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে চূড়ান্তত ফল প্রকাশ করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। দক্ষতা ও যোগ্যতার বিচারে নিঃসন্দেহে যারা বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তারা এগিয়ে থাকেন। তাই যারা বিসিএস পরীক্ষার কঠিন ধাপগুলো সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েও পদ স্বল্পতার কারণে চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন না, তাদের জন্য সরকার কর্তৃক জারিকৃত নন-ক্যাডার পদের নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা-২০১০ এবং সংশোধিত বিধিমালা-২০১৪ অনুযায়ী সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে শূন্য পদের চাহিদা পাওয়া সাপেক্ষে পিএসসি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে চূড়ান্ত সুপারিশ করে। ৩১তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারে নিয়োগ শুরু হয় এবং উল্লেখযোগ্য হারে শুরু হয় ৩৪তম বিসিএস থেকে। এর মধ্যে ৩৫তম এবং ৩৭তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে আবেদনকারী বেকারদের প্রায় শতভাগ চাকরি পেয়েছে।
পিএসসি ৩৮তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল ২০১৭ সালের ২০ জুন। বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর ২০২০ সালের ৩০ জুন ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে পিএসসি। এতে ২,২০৪ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে এবং ৬,১৭৩ জনকে নন-ক্যাডার তালিকায় রাখা হয়। ৩৮তম বিসিএসে আবেদন করার সময় যে প্রার্থীর বয়স ২৭ বছর ছিল, চূড়ান্ত রেজাল্ট পেতে তার বয়স ৩০ বছর অতিক্রম হয়ে গেছে। ফলে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স আর না বাড়ালে সেই প্রার্থীরা আর কোনো সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারবে না। আর যারা একেবারে বয়সের শেষ মুহূর্তে আবেদন করেছিল তাদের কথা তো বলাই বাহুল্য। অর্থাৎ ৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে একটি চাকরিই তাদের একমাত্র ভরসা।
গত বছরের শেষের দিকে একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে সরকারি চাকরিতে শূন্য পদের সংখ্যা তিন লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির পদ ৫০ হাজার ৯৩০টি, দ্বিতীয় শ্রেণির ৫৫ হাজার ৪৫৭টি। বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য থাকায় ৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডার প্রার্থীদের মধ্যে নূ্যনতম একটা চাকরি পাওয়ার আশা সঞ্চার হয়েছে।
সাধারণত একটি বিসিএসের নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে পরবর্তী বিসিএসের চূড়ান্ত রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। সেই হিসাবে ৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগ চলমান থাকবে ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত রেজাল্ট প্রকাশের পূর্ব দিন পর্যন্ত। কারণ ৩৯তম বিসিএস বিশেষ ছিল। পিএসসি ইতোমধ্যে ৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় তালিকায় সুপারিশকৃত প্রথম শ্রেণির মোট ৯৮৪ জনকে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে বলেছে। পিএসসির এ উদ্যোগ বাস্তব ও যুক্তিসংগত। আশা করি কাগজপত্র জমা না দেওয়ার কারণে যতগুলো পদ শূন্য হবে, পিএসসি ৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে পরবর্তী সুপারিশের সময় ওই পদগুলো অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং এই ধারা সকল নিয়োগের ক্ষেত্রে অব্যাহত রাখবেন। এতে করে সব বেকার প্রার্থীর চাকরি পাওয়া সহজ হবে এবং নিয়োগের পর আর কোনো পদ শূন্য থাকবে না। ফলে সরকারি সময় ও অর্থের অপচয় হবে না। উপরন্তু জনগণ সেবা পাবে। আর যারা প্রথম তালিকায় সুপারিশ পেলেন, তাদের ওপর দাবি হলো, যদি সুপারিশকৃত পদে যোগদান না করেন, তাহলে শুধু শুধু কাগজপত্র জমা দিয়ে অন্য একজনকে বঞ্চিত করবেন না।
বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগ নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা ৩৪তম বিসিএস থেকে। আমি ৩৪তম, ৩৬তম এবং ৩৮তম বিসিএসে নন-ক্যাডার তালিকাভুক্ত। এসব অভিজ্ঞতার মধ্যে ৩৬তম বিসিএস নন-ক্যাডারের একটা বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাই। ৩৬তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগের জন্য আমার বিষয় বা সাবজেক্ট সম্পর্কিত ও অন্যান্য কিছু বিষয় সম্পর্কিত প্রায় ১৫০টির মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদ অনেক সময় ও শ্রম ব্যয় করে দুটি অধিদপ্তর থেকে পিএসসিতে পাঠানোর জন্য সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে যথাসময়ে পদগুলো না পাঠানোর কারণে ওই পদগুলো ছাড়াই পিএসসি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সুপারিশ করে। পিএসসির প্রদত্ত সুপারিশে ওই পদগুলো না থাকায় পরে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা শুধু একটি দপ্তরের একটি পদের চিঠির ভুলের কারণে সবগুলো পদ পিএসসিতে না পাঠিয়ে আটকে রাখেন। অথচ পদপ্রত্যাশী অনেক প্রার্থীর চাকরিতে প্রবেশের বয়স অতিক্রম হয়েছিল। এ ব্যাপারে সংশ্নিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান থাকবে- যেন অসচেতনতা, অনিচ্ছাকৃত অসতর্কতা কারও কান্নার কারণ না হয়।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) তার সামগ্রিক কাজের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষিত দক্ষ মানবসম্পদের হৃদয়ে এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে জ্যোতি বা আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে স্বমহিমায়। পিএসসির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ পেয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ড. মোহাম্মদ সাদিকের মতো বর্তমান চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইনও বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে নিয়োগের ধারা অব্যাহত রাখবেন।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন
Discussion about this post