খেলাধূলা ডেস্ক
হতাশার মাঝে আশার আলো। ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশ দল প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চ্যালেঞ্জও জানাতে পারবে না, একটা সময় মনে হচ্ছিল এমনটাই।
ক্যারিবীয়দের ৪০৯ রানের জবাবে ১৫৫ রানের মধ্যেই যে ৬ উইকেট হারিয়ে বসেছিল টাইগাররা। ছিল ফলোঅনের শঙ্কাও। তবে সেই শঙ্কা সহজেই দূর করেছেন লিটন দাস আর মেহেদি হাসান মিরাজ। দুর্দান্ত জুটিতে দলকে ফলোঅন থেকে বাঁচানোই শুধু নয়, লড়াইয়েও ফিরিয়েছেন তারা।
৬ উইকেটে ২৭২ রান নিয়ে চা-বিরতিতে গেছে টাইগাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস থেকে ১৩৭ রানে পিছিয়ে স্বাগতিক দল। লিটন-মিরাজ দুজনই হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন।
ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফসেঞ্চুরি তুলে লিটন অপরাজিত আছেন ৬৬ রানে। মিরাজ পেয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি। তিনি ৫৩ রান নিয়ে ব্যাট করছেন। তাদের ব্যাটেই ঢাকা টেস্টে এখন বড় কিছুর স্বপ্ন টাইগারদের।
টপঅর্ডারের চার ব্যাটসম্যানের উইকেট হারিয়ে প্রথম দিন বাংলাদেশ করেছিল ৪ উইকেটে ১০৫ রান। মাত্র ৭১ রানে চতুর্থ উইকেট পতনের পর ফলোঅনের শঙ্কা দেখা দিলেও শেষ বিকেলে আশা দেখান মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিকুর রহীম। তাদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দিন শেষের ২০.১ ওভারে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। আশা ছিল দ্বিতীয় দিনও তারা এ ধারা বজায় রাখবেন।
আগেরদিন ৬১ বলে ৫ রান মিঠুন আজ দিনের প্রথম ওভারেই দৃষ্টিনন্দন কভার ড্রাইভে হাঁকান নিজের ইনিংসের প্রথম চার। অন্যপ্রান্তে মুশফিকও খেলতে থাকেন ইতিবাচকভাবে। কোপটা বেশি পড়ছিল পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের ওপরই। তার গতিময় বোলিংয়ে রান তোলার কাজটা যেন সহজ হয় মুশফিক-মিঠুন জুটির।
এছাড়া বাঁহাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিকানের বোলিংয়েও বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নিজের পরিকল্পনা ও ইচ্ছা পরিষ্কার করে দেন মুশফিক। পরে কর্নওয়াল আক্রমণে এলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে মিডউইকেট দিয়ে চার মারেন মিঠুন। কিন্তু অতিরক্ষণাত্মক থেকে হুট করে আক্রমণাত্মক হওয়াটাই বিপদ ডেকে আনে মিঠুনের জন্য।
দিনের দশম ও ইনিংসের ৪৬তম ওভারের প্রথম বলটি আলতো করে লেগসাইডে খেলার চেষ্টা করেছিলেন মিঠুন। কিন্তু বল তার ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে চলে যায় শর্ট মিডউইকেটে। দারুণভাবে সেই বলটি তালুবন্দী করেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েট। সমাপ্তি ঘটে মিঠুনের দুই বাউন্ডারির মারে খেলা ৮৬ বলে ১৫ রানের ইনিংসের।
মিঠুন ফেরার আগেই ক্যারিয়ারের ২২তম ফিফটি তুলে নিয়েছিলেন মুশফিক। তবে হাফসেঞ্চুরির পর তেমন উদযাপন করেননি তিনি, ব্যাটটাও ওপরে তুলেননি, শুধু ড্রেসিংরুমের অভিবাদনের জবাবটা দিয়েছিলেন হাত উঁচিয়ে। মুশফিক যেন বোঝাতে চেয়েছিলেন, ফিফটিতেই শেষ হয়ে যায়নি তার কাজ।
কিন্তু তার খেলায় দেখা গেল এর পুরোপুরি ভিন্ন চিত্র। কর্নওয়ালের বলে সুইপ করতে গিয়ে অল্পের জন্য লেগ বিফোরের হাত থেকে বেঁচে যান তিনি। এরপর তার ব্যাট ছুঁয়ে যাওয়া একটি বল বেরিয়ে যায় লেগস্লিপের একদম পাশ দিয়ে।
অন্তত দুইবার এমন হওয়ার পরেও সতর্ক হননি মুশফিক। ম্যাচের অবস্থা ও পরিস্থিতি না বুঝেই খেলেন রিভার্স সুইপ। যেখানে ছিল না টাইমিংয়ের ছিটেফোঁটাও। যে কারণে তার ব্যাটের সামনের অংশে লেগে বল চলে যায় শর্ট কভারে দাঁড়ানো কাইল মায়ারসের হাতে এবং অপমৃত্যু ঘটে মুশফিকের ৫৪ রানের ইনিংসের।
১৫৫ রানে নেই ৬ উইকেট। ঢাকা টেস্টে ফলোঅন এড়াতে তখনও ৫৫ রান দরকার বাংলাদেশের। ব্যাটিং ধস থামাতে না পারলে সেটাও সম্ভব বলে মনে হচ্ছিল না। তবে লিটন দাস আর মেহেদি হাসান মিরাজের দায়িত্বশীলতায় ফলোঅন এড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে টাইগাররা।
Discussion about this post