এই সপ্তাহেই মাঠে নামছে বার্সেলোনা-পিএসজি, লিভারপুল-লাইপজিগ, পোর্তো-জুভেন্টাস ও সেভিয়া-বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। স্বাভাবিকভাবেই, বার্সেলোনা-পিএসজি ম্যাচ নিয়েই উত্তেজনা সবচেয়ে বেশি। আর হবে না-ই বা কেন? এক দলে মেসি-গ্রিজমান, আরেক দলে এমবাপ্পে-ইকার্দির এই মুখরোচক লড়াইয়ের শেষে হাসে কোন দল, সেটা দেখার আগ্রহ সবারই। যদিও নেইমার ও আনহেল দি মারিয়ার মতো খেলোয়াড় এই ম্যাচে খেলতে পারবেন না।
তাতে কী হয়েছে? মেসিরা মোটেও ম্যাচটাকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না। গত কয়েক ম্যাচে বার্সার খেলা দেখেই মনে হচ্ছে, এই ম্যাচকে ঘিরেই প্রস্তুতি চলছে রোনাল্ড কোমানের দলের। পিএসজির বিপক্ষে নামার আগে সর্বশেষ ম্যাচেও বার্সা যেন পিএসজিকে হুংকারই দিয়ে রাখল! ক্যাম্প ন্যু-তে কাল লিগে আলাভেসকে ৫-১ গোলে হারিয়েছেন মেসিরা। জোড়া গোল করে ধ্বংসযজ্ঞে নেতৃত্ব মেসিই দিয়েছেন, সঙ্গী হিসেবে পেয়েছিলেন পর্তুগিজ উইঙ্গার ফ্রান্সিসকো ত্রিনকাও ও লেফটব্যাক জুনিয়র ফিরপোকে। আর তাতেই পিএসজিকে যেন হুংকার দেওয়া হয়ে গেল—‘সাবধান থাকো, আমরা আসছি!’
৪-৩-৩ ছকে মেসিকে স্ট্রাইকার হিসেবে মাঠে নামিয়েছিলেন কোমান। মিডফিল্ডে রিকি পুচ ও সের্হিও বুসকেতসের সঙ্গী হয়েছিলেন নবাগত আয়লাই মরিবা। ওদিকে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং খেলেছেন সেন্টারব্যাক হিসেবে। মেসির দুপাশে খেলছেন গ্রিজমান ও ত্রিনকাও। দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বার্সেলোনা, কিন্তু গ্রিজমানের শটটা ব্লক করে দেন আলাভেসের রাইটব্যাক মার্তিন আগিরেগাবিরিয়া। তবে সাতাশ মিনিটে আরেকটু হলেই পিছিয়ে পড়ছিল বার্সা। আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার রদ্রিগো বাত্তালিয়ার এক দূরপাল্লার শট বেশ কসরত করেই থামাতে হয় বার্সার জার্মান গোলকিপার মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেনকে।
কিন্তু এরপরই গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে বার্সা। বিশেষ করে দলের দুই তরুণ। ডান প্রান্ত থেকে আয়লাই মরিবার এক পাস থেকে বাঁ পায়ের দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে গোল করে বসেন ত্রিনকাও। ৩৩ মিনিটে এই ত্রিনকাওর কল্যাণেই ব্যবধান দ্বিগুণ করে ফেলছিল বার্সা, কিন্তু অফসাইডের বাঁশি সে যাত্রায় বাঁচিয়ে দেয় আলাভেসকে। চার মিনিট পর আবারও অফসাইডের খাঁড়ায় পড়ে বার্সা। মেসির এক দুর্দান্ত গোল অফসাইডের কারণে বাতিল করে দেন রেফারি।
তবে বার্সার অধিনায়ককে বেশিক্ষণ গোলহীন থাকতে হয়নি। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ দিকে বক্সের বাইরে থেকে মেসির নেওয়া বাঁ পায়ের জোরালো এক শট বারে লেগে জালে জড়ায়, ২-০ স্কোরলাইন নিয়েই বিরতিতে যায় বার্সেলোনা। ৫৮ মিনিটে ব্যবধান কমান আলাভেসের উইঙ্গার লুইস রিওকা। এই গোল খেয়েই যেন আরেকটু গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে বার্সা। মুহুর্মুহু আক্রমণে আলাভেসের হাই লাইন রক্ষণকে যন্ত্রণা দিতে থাকে কাতালানরা। শেষমেশ মেসির সহায়তায় ৭৩ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ত্রিনকাও।
এক মিনিট পরই জোড়া গোল হয়ে গেল মেসিরও। গ্রিজমানের কাছ থেকে বল নিয়ে বক্সের বাইরে বাঁ পা দিয়ে গোলার মতো যে শটটা নিয়েছিলেন, তা আটকানোর সাধ্য হয়তো বিশ্বের কোনো গোলকিপারেরই থাকার কথা নয়। ৮০ মিনিটে গ্রিজমানের পাস থেকেই গোলের খাতায় নাম তোলেন লেফটব্যাক ফিরপো।
মাঠে শিষ্যদের গর্জন দেখেই কি না, ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে জোর শোনা গেল কোচ রোনাল্ড কোমানের গলাও। পিএসজিকে এখন হারানোর ব্যাপারে বেশ আশাবাদী এই ডাচ কোচ, ‘আমার দল বেশ ভালো খেলছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী, পিএসজিকে আমরা হারাতে পারব। আমরা আজকে যে দলের বিপক্ষে খেলেছি, তাদের রক্ষণভাগ বেশ শক্তিশালী, তাই এদের বিপক্ষে এত ভালো করা আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’
পিএসজির দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় নেইমার ও আনহেল দি মারিয়া চোটে। তাতে কি ম্যাচটা বার্সেলোনার জন্য একটু সহজই হয়ে গেল? কোমান মানছেন না সেটা, ‘ওদেরও বেশ কিছু খেলোয়াড় চোটে আছে, আমাদেরও বেশ কিছু খেলোয়াড় চোটাক্রান্ত। তাই আমার কাছে দুই দলকে সমানই লাগছে। পরের রাউন্ডে যেতে হলে আমাদের অবশ্যই ভালো খেলতে হবে।’
লিগে এই নিয়ে টানা সাত ম্যাচ জেতা হয়ে গেছে বার্সেলোনার। দলটা খেলছেও সুন্দর। নিজেদের এমন দুরন্ত ফর্মই আশাবাদী করে তুলেছে কোমানকে, ‘আমরা বেশ ভালো ফর্মে আছি এখন। বেশ কয়টা জয় তুলে নিয়েছি। মেসিও দুর্দান্ত ফর্মে আছে। আমি জানি, ও আমাদের দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ও দলে থাকলে সবকিছুই সহজ হয়ে যায়।’
মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটায় পিএসজির মুখোমুখি হবে বার্সেলোনা। ম্যাচটা হবে বার্সার মাঠ ক্যাম্প ন্যু-তেই।
Discussion about this post