খেলাধুলা ডেস্ক
২০১৯ বিশ্বকাপ সামনে রেখে ইংল্যান্ডে অনুশীলন শিবিরের সূচি চূড়ান্ত ছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু শিবিরের সময় দেখা গেল অনেক ক্রিকেটারই নেই সেখানে। কারণ হেড কোচ স্টিভ রোডস তাঁদের ছুটি দিয়েছেন! সেই সময় অবশ্য এটি নিয়ে তেমন কোনো উচ্চবাচ্যই হয়নি। এর ঠিক আগেই বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জেতায় বিষয়টি সবাই একরকম হজমই করে ফেলেছিলেন! তবে উগরে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে বিশ্বকাপে ১০ দলের মধ্যে অষ্টম হওয়ার পরই। খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্মকর্তারাই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেন কোচ ও খেলোয়াড়দের।
সাফল্যে এ রকম অনেক কিছুই চেপে গেলেও ব্যর্থতায় সেগুলো আবার রটিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ এখনো চালু দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট প্রশাসনে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টেস্ট সিরিজের ভরাডুবির পর এরই পুনরাবৃত্তি। এবারও অভিযোগের তীর হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো এবং ক্রিকেটারদের দিকেই। অভিযোগকারী বিসিবি পরিচালক নাঈমুর রহমান। একটি চার দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার আয়োজন টিম ম্যানেজমেন্টের ভেস্তে দেওয়ার ব্যাপারটি প্রকাশ্যে এনেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘টিম ম্যানেজমেন্টই ম্যাচটি খেলতে চায়নি। খেলোয়াড়রাও এর অংশ। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিশ্চয়ই ওদের মতামতও নেওয়া হয়েছে। একই সময়ে ওদের অনেকে দেশের বাইরেও ঘুরতে গিয়েছে।’
টিম ম্যানেজমেন্ট খেলতে চাইল না আর বোর্ডও অনুমোদন দিয়ে দিল? দীর্ঘদিন পর টেস্টে ফেরার আগে প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত করার ব্যাপারটি কেন মেনে নিল ক্রিকেটারদের নিয়োগকর্তা বিসিবি? এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য নাঈমুর আদর্শ ব্যক্তি নন। কারণ জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সরাসরি দেখভালের দায়িত্বে তিনি নেই। যিনি আছেন, সেই ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির প্রধান আকরাম খান অবশ্য চার দিনের ম্যাচ না খেলার ব্যাপারটিতে অন্যায় কিছু দেখছেন না। এই সাবেক অধিনায়কের দাবি, ম্যাচটি খেললেই বরং হিতে বিপরীত হতে পারত, ‘হেড কোচ এই যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে ম্যাচটি খেললে খেলোয়াড়রা মানসিকভাবে আক্রান্ত হতে পারে। কারণ সে ক্ষেত্রে আরো আগেই বায়ো বাবলে (জৈব সুরক্ষা বলয়) ঢুকে পড়তে হতো। ওরা প্রথমে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ খেলেছে। এরপর খেলল বঙ্গবন্ধু কাপ। এই সিরিজের আগে আমরা বায়ো বাবলে ঢুকেছি ১০ জানুয়ারি। চার দিনের ম্যাচ খেললে ডিসেম্বরের শেষ দিকেই বায়ো বাবলে ঢুকে যেতে হতো। তাহলে আরো লম্বা সময় বায়ো বাবলে থেকে ক্রিকেটারদের মানসিক অস্থিরতাও বেড়ে যেতে পারত। কোচের যুক্তি তাই আমার কাছেও যুক্তিসংগত মনে হয়েছিল। বিষয়টি আমার কাছে ঠিক এভাবে এসেছিল বলেই আমি ম্যাচ না খেলার ব্যাপারটি অনুমোদন করেছিলাম।’
আবার ম্যাচ খেললেও সাফল্য সুনিশ্চিত ছিল বলে মনে করেন না আকরাম, ‘এমন তো নয় যে ওই ম্যাচ খেললেই আমরা টেস্ট জিততাম!’ নির্দিষ্ট কারো ওপর দায় চাপানোরও পক্ষপাতী নন তিনি। বরং সে দায় অনেকের ওপরই দিচ্ছেন আকরাম। এমনকি নিচ্ছেন নিজের ওপরও, ‘‘যার যে দায়িত্ব আছে, সেটি নেওয়া উচিত। ব্যর্থ হয়েছি, আমি ব্যর্থতা মেনেও নিচ্ছি। কিন্তু যে যে কারণে ব্যর্থ হয়েছি, সেগুলো আমাকে শোধরাতে হবে। এই যেমন স্পিনিং উইকেট হয়নি। যদিও মাহবুব ভাই (গ্রাউন্ডস কমিটির প্রধান মাহবুব আনাম) বলেছেন যে, ‘আমি তো নির্দেশ দিয়েছিলাম স্পিনিং উইকেট বানানোর।’ এখন কেন হয়নি, সেটিও মাহবুব ভাইয়ের দিক থেকে ব্যর্থতা। টিম ম্যানেজমেন্টেরও ব্যর্থতা কেন অন্যের ওপর বিশ্বাস করে তারা তিন স্পিনার খেলাল? ব্যর্থতায় অনেক পক্ষই জড়িত থাকে। দায়টা সবারই নেওয়া উচিত।’’
Discussion about this post