খেলাধুলা ডেস্ক
চেন্নাই টেস্টে অসাধ্যসাধনের লক্ষ্য নিয়ে নেমেছে ইংল্যান্ড। ৪৮২ রানের লক্ষ্যে নামা সফরকারীরা কালই হারিয়ে ফেলেছে ৩ উইকেট। বাকি দুই দিনে তুলতে হবে ৪২৯ রান। এটা যে প্রায় অসম্ভব, সেটা জানেন সবাই। ভারতের মাটিতে ইংল্যান্ডের রান তাড়ার এ চেষ্টাটা কাল রাত পর্যন্ত টিকে আছে উইকেটে জো রুট আছেন বলে।
গতকাল দিনের শেষ ওভারেই স্বপ্নটা যেতে বসেছিল ইংল্যান্ডের। অক্ষর প্যাটেলের ওভারের প্রথম বলই প্যাডে আঘাত হেনেছিল। ভারতের জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার নিতিন মেনন। ভারত রিভিউ নেয়। রিভিউ দেখায়, বলটা ঠিকই স্টাম্পে লাগত। কিন্তু বল প্যাডে আঘাত হানার সময় বলের পঞ্চাশ ভাগ স্টাম্পের বাইরে থাকায় সিদ্ধান্তটা আম্পায়ার্স কল বলেই জানিয়ে দেন তৃতীয় আম্পায়ার। ফলে, সে যাত্রা বেঁচে যান রুট।
তৃতীয় আম্পায়ার সে সিদ্ধান্ত জানানোর পরও মানতে পারছিলেন না কোহলি। নিজের রাগ–ক্ষোভ সব ঝেড়েছেন মাঠের আম্পায়ার মেননের ওপর। সে ঘটনায় এখন শাস্তি পেতে পারেন কোহলি। অপরাধ গুরুতর ঠেকলে এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞাও জুটতে পারে কোহলির।
৩ উইকেটে ৫২ রান ছিল ইংল্যান্ডের। এমন সময় রুটকে হারিয়ে দিন শেষ করা মানেই ম্যাচ ভারতের পকেটে চলে যাওয়া। এমন অবস্থায় রুটের একটুর জন্য বেঁচে যাওয়া কোহলি সহ্য হয়নি। এমনিতেই মাঠে দর্শক ফিরে পাওয়ার পরই বদলে গেছেন ভারত অধিনায়ক। আবারও সেই আগ্রাসী আচরণ দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধংদেহী হাবভাব তাঁর চলনে। দর্শকদের খেলায় টেনে আনছেন। একটু পর দর্শকদের বাড়তি চিৎকার করতে আহ্বান জানাচ্ছেন। শিস দিচ্ছেন, দুই হাত দিয়ে গর্জন তুলতে ডাকছেন। দিনের শেষ ওভারে তাই একটু বেশিই করে ফেললেন।
সিদ্ধান্তটা আম্পায়ার্স কল। অর্থাৎ নিতিন মেনন যদি সেটা আউট দিতেন, সে ক্ষেত্রে জো রুট রিভিউ নিলেও লাভ হতো না। ফলে, মেননের সিদ্ধান্ত ভারতের বিপক্ষে যাওয়াটাই রুটকে টিকিয়ে দিয়েছে। কোহলির রাগ–ক্ষোভ তাই সব পড়ল মেননের ওপর। কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, সেটা নিয়েও বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেছেন কোহলি। আইসিসির আচরণবিধি অনুযায়ী মাঠে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ দেখালে কিংবা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকক্ষণ আলোচনা চালালে খেলোয়াড়দের শাস্তি দিতে পারেন ম্যাচ রেফারি। আর এই ম্যাচের ম্যাচ রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথ এসব ব্যাপারে বেশ কড়া।
শ্রীনাথ এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটা পরে জানা যাবে। আপাতত ইংল্যান্ডের সাবেক খেলোয়াড় ও বিশ্লেষকেরা কোহলিকে ধুয়ে ফেলছেন। একসময় আইসিসির আম্পায়ার্স কমিটিতে থাকা ডেভিড গাওয়ার যেমন কোহলির এই আচরণকে মানতে পারছেন না। তাঁর ধারণা, এভাবে দর্শক ব্যবহার করে আম্পায়ারদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছেন কোহলি। করনাকালে অধিকাংশ দেশেই স্থানীয় আম্পায়ার ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দর্শককে এভাবে ব্যবহার করাটা লয়েডের কাছে বুদ্ধিদীপ্ত মনে হলেও খেলার নৈতিক দিকটাও ভেবে দেখতে বলেছেন লয়েড, ‘আম্পায়ারের সঙ্গে এভাবে কথা বলতে পারে না সে। দর্শককেও উত্তেজিত করে তুলতে পারে না। ওর উচিত আরও ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করা। ওদের দলের কারও উচিত ওর সঙ্গে কথা বলা এবং ম্যাচ রেফারি নির্ঘাত এ ঘটনা বেশ আগ্রহ নিয়েই দেখেছেন। এটা হিসেব করে করা এবং এটা মোটেও ভালো দেখায় না।’
নাসের হুসেইন এত জটিল বিশ্লেষণে যাননি। খুব সহজভাবেই ভারত ও কোহলির ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছেন। গতকাল সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেয়নি ভারত। জোরালো আবেদনে লাভ না হওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেছে ভারত। সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর ১৫ সেকেন্ড সময় থাকে। যখনই মনে হয়েছে ভারত আর রিভিউ নেবে না, একদম ১৫তম সেকেন্ডে গিয়ে রিভিউর সিদ্ধান্ত নেন কোহলি। হুসেইনের প্রশ্ন, আম্পায়ারের সঙ্গে তর্ক করা ভারত যদি এতই নিশ্চিত ছিল, তাহলে এত দেরি করে রিভিউ নিয়েছে কেন, ‘এটা খুবই অদ্ভুত যে ভারত ও তাদের অধিনায়ক পুরো ১৫ সেকেন্ড সময় নিয়েছে রিভিউ নেবে কি নেবে না, এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। ওরা নিজেরাও জানত না কিসের জন্য রিভিউ নিচ্ছে। এর ফলে সন্দেহ জাগছে ওদের মনেও এটা নিয়ে সন্দেহ ছিল অথচ কোহলি একজন আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠেছে, যিনি কিনা মিলিসেকেন্ড সময় পেয়েছেন একই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। তারা যদি এতই নিশ্চিত ছিল যে এটা আউট, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেওয়া উচিত ছিল। কেন এত সময় লাগল ওদের?’
সাবেক অধিনায়ক কোহলির আচরণেও সমস্যা খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর কথা আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত পছন্দ নাও হতে পারে। এ নিয়ে দলের প্রতিনিধি হয়ে অধিনায়ক কথা বলবেন, এটাও স্বাভাবিক। কিন্তু কোহলি যেভাবে সে কাজটা করেন, সেটা ক্রিকেটের ‘ভদ্রলোক’ ভাবমূর্তির সঙ্গে যায় না, ‘কোহলি আম্পায়ার ও অফিশিয়ালদের সঙ্গে আচরণে সীমা মানছে না। দিনের শুরুতে জো রুটও একটি রিভিউ নিয়ে কথা বলেছে আম্পায়ারের সঙ্গে। কিন্তু সে পুরো সময়টা হাসিমুখে কথা বলেছে। কিন্তু কোহলি যখন আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলে, খুব উত্তেজিত থাকে—যা দেখতে ভালো লাগে না।’
নাসের হুসেইন তবু রাখঢাক করে বলেছেন। তাঁর উত্তরসূরি মাইকেল ভন অত কৌশলী হননি। বিবিসি টেস্ট ম্যাচ সোশ্যালের হয়ে এই ম্যাচের দায়িত্ব পালন করা ভনের কথা, ‘দুঃখিত, এটা হতে পারে না। কোহলির মতো এমন একজনের আম্পায়ারদের ভয় দেখানো মেনে নেওয়া যায় না। এটা হয়তো বাজে সিদ্ধান্ত, কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে এটা করতে পারে না।’
আম্পায়ারদের সঙ্গে তর্ক করে ও বাজে আচরণ প্রথম বা দ্বিতীয় পর্যায়ের অপরাধ। এমন অপরাধে ১ থেকে ৪টি ডেমেরিট পয়েন্ট মেলে খেলোয়াড়ের। গত ২৪ মাসে ভারত অধিনায়ক দুটি ডেমেরিট পয়েন্ট জুটিয়েছেন। ফলে যদি এই ম্যাচে যদি ২টি বা তার বেশি ডেমেরিট পয়েন্ট মেলে, সেটা ৪ ডেমেরিট পয়েন্টের সীমা পেরিয়ে যাবে। আর আচরণবিধিতে ৪ ডেমেরিট পয়েন্ট থাকলে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা জোটে।
এ ব্যাপারে স্পোর্টস মেইল আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আইসিসি জানিয়েছে, ম্যাচ রেফারি শ্রীনাথ এখনো এ ব্যাপারে আইসিসির ক্রিকেট বিভাগের সঙ্গে কথা বলেননি। তবে ম্যাচ রেফারিরা এমন ঘটনায় নিজেদের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য ঘটনার পর আরও ২৪ ঘণ্টা সময় পান।
Discussion about this post