শাফকাত ইসলাম
তাঁকে নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ অটো ফিস্টারের উক্তিটি প্রথমে জেনে আসি চলুন, ‘He was mistakenly born in Bangladesh.’
১৯৬৬ সালের ৯ জুন নারায়নগঞ্জে জন্ম ছেলেটির, ছোটবেলা থেকেই ফুটবলে প্রচুর ঝোঁক। সময় পেলেই বল পায়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়ায়। তখনো কি কেউ জানত, এই ছেলেটিই হয়ে যাচ্ছে উপমহাদেশের সর্বকালের সেরা ডিফেন্ডারদের একজন?
শুরুটা নারায়নগঞ্জ জিলা স্কুলের হয়ে, ন্যাশনাল স্কুল চ্যাম্পিয়নশীপ জিতে। মুন্না হন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। ক্লাব ফুটবলে তাঁর যাত্রা শুরু পাইয়োনিয়ার লীগের দল গুলিস্তান ক্লাবের হয়ে, ১৯৮১ সালে। ১৯৮২ সালে তিনি যোগ দেন দ্বিতীয় বিভাগের দল শান্তিনগর ফুটবল ক্লাবে। সে বছরেই নায়ায়নগঞ্জ বনাম বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলায় সবার নজর কাড়েন তিনি।
১৯৮৩ সালে তিনি যোগ দেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রে, এরপর ১৯৮৫ সালে ব্রাদার্স ইউনিউনে, সেখান থেকে ১৯৮৭ তে ঢাকা আবাহনী লিমিটেডে। এখানেই তিনি বনে যাবেন ক্লাবের এবং দেশের কিংবদন্তি। ১৯৯৮ পর্যন্ত তিনি ছিলেন আবাহনীতে, মাঝে ১৯৯১-৯২ মৌসুমে খেলেছিলেন কলকাতা জায়ান্ট ইস্ট বেঙ্গলের হয়েও। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ তিনি ছিলেন আবাহনীর অধিনায়ক, জেতেন পর পর দুবছর লীগ শিরোপা।
১৯৮৬ সালে তাঁর অভিষেক বাংলাদেশের লাল সবুজ জার্সিতে, দক্ষ নেতৃত্বগুণে দেশের অধিনায়ক হয়ে যেতেও বেশি সময় লাগেনি তাঁর। এসময়েই বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল জিতে নেয় প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা, ১৯৯৫ সালে মায়ানমারে অনুষ্ঠিত ৪ জাতি টাইগার ট্রফি। সাফল্য আসতে পারত সাফ গেমসেও। ফাইনালে ভারতের কাছে ১-০ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হলেও, স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিল আমাদের মুন্নার বাংলাদেশই।
কিডনির রোগের জন্য তাঁর ক্যারিয়ার খুব বেশি দীর্ঘায়িত হতে পারেনি, মাত্র ৩২ বছর বয়সেই অবসর নেন তিনি। অবসরের পর আবাহনীর ম্যানেজার হিসাবেও তিনি জিতে নেন লীগ শিরোপা। অধিনায়ক এবং ম্যানেজার, দুইভাবেই লীগ জেতার অনন্য প্রাপ্তিটাও আছে তাঁর ঝুলিতে।
২০০৫ সালে কিডনি জটিলতার কাছে হার মানেন মুন্না। ১৬ বছর আগের এই দিনে মাত্র ৩৮ বছর বয়সে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। গতবছর তাঁর বাংলাদেশ এবং আবাহনীর ২ নম্বর জার্সিটি নিলামে বিক্রি হয় ৫ লাখ টাকায় যা তাঁর পরিবার দান করেন কোভিড আক্রান্তদের সাহায্যার্থে।
বাংলাদেশ ফুটবলে মুন্নার অবদান কি শুধুই পরিসংখ্যান দিয়ে প্রকাশের মত? আশির দশকে ফুটবলের স্বর্ণযুগের সুচনাতো তাঁর ধরেই। আজ তিনি বেঁচে থাকলে হয়ত হতে পারতেন জাতীয় দলের কোচ, ফুটবলের উদ্দীপনাও হয়ত হারিয়ে যেত না ক্রিকেটের কাছে। এই মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা গভীর শ্রদ্ধা নিয়ে স্মরণ করছি বাংলাদেশ ফুটবলের কিংবদন্তি মোনেম মুন্নাকে, বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে যিনি ভুল করেছিলেন!
Discussion about this post