খেলাধুলা ডেস্ক
বিশ্ব ক্রিকেটে দীর্ঘদিন পার করলেও নাম লেখাতে পারেননি বড় বড় খেলোয়াড়দের কাতারে। আইসিসির সহযোগী (যদিও কিছুদিন পূর্বেই আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে তারা)। দেশের হয়ে খেলায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার সুযোগও তেমন পান না!
তবে যখনি ব্যাট হাতে আইরিশদের হয়ে নেমেছেন প্রতিপক্ষ যেই হোক নিজের নান্দনিক সব ইনিংসে বরাবরই মুগ্ধ করেছেন ক্রিকেট বিশ্বকে। তার প্রতিভা, যোগ্যতা কিংবা সামর্থ্য নিয়ে কারোই প্রশ্ন থাকার কথা না। বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যান্য ক্রিকেটারদের নিয়ে যেভাবে মাতামাতি হয়, সহযোগী দেশের হওয়ায় তিনি অনেকটা আড়ালেই থাকেন।
বলছিলাম আইরিশ সেনসেশন, ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়ানো বিশ্ব ক্রিকেটে এক দূর্ভাগা পল স্টার্লিংয়ের কথা।
সদ্য সমাপ্ত আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত টি-টেন লিগে টিম আবুধাবির হয়ে ৯ ম্যাচে ২৬ গড়ে করেছেন ২০৯ রান। প্রায় ২৩০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন তিনি। ব্যাট হাতে বাংলা টাইগার্সের বিপক্ষে রয়েছে অপরাজিত ৬৪ রানের দূর্দান্ত এক ইনিংস। ঠিক এর আগের সিরিজেই আরব আমিরাতে আফগানিস্তান ও আরব আমিরাতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে মোট তিনটি শতক গড়েন যার মধ্যে শেষ দুই ওয়ানডেতেই করেন দুই শতক!
সদ্য ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এর ১৪ তম আসরের নিলামে খেলোয়াড়দের সংক্ষিপ্ত প্রকাশ করেছে আইপিএল কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক লিস্টে স্টার্লিং এর নাম থাকলেও ২৯২ জনের তালিকায় জায়গা হয়নি তাঁর।
গত জানুয়ারি মাসের ‘আইসিসি প্লেয়ার অব দ্যা মান্থ’ পুরষ্কারের জন্য মনোনিত সেরা তিন খেলোয়াড়ের একজন ছিলেন তিনি। শেষ ইংল্যান্ড সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ১৪২ রানের দূর্দান্ত এক ইনিংসে খেলে আইরিশদের পক্ষে জয় তুলে নেন স্টার্লিং! ভারতের মাটিতেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে করেছেন দূর্দান্ত ব্যাটিং। বর্তমান অন্যতম সেরা লেগী রাশিদ খানের বিপক্ষেও ভয়- ডরহীন ব্যাটিং করেছেন এই আইরিশ ব্যাটসম্যান। তবুও কেনো সুযোগ পান না বড় কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে?
তার পুরো নাম পল রবার্ট স্টার্লিং জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯০ সালের তিন সেপ্টেম্বর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজন তিনি! স্পোর্টিং ফ্যামিলি থেকেই ক্রিকেটে আসেন তিনি। তার বাবা পেশায় স্কুল শিক্ষক হলেও, তিনি স্কুল লেভেলে ছিলেন ক্রিকেট খেলোয়াড়। পরবর্তীতে তিনি রাগবি ইউনিয়নের রেফারিও ছিলেন! পল স্টার্লিংয়ের বড় ভাই রিচার্ড ব্রায়ান স্টার্লিং আইরিশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ২০০৫-০৬ বিশ্বকাপে অংশ নেন।
২০০৮ সালে ১৭ বছর বয়সে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক হয় স্টার্লিংয়ের। ২০০৯ সালের আইসিসি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের উদ্ভোধনী ম্যাচে কেনিয়ার বিপক্ষে মেইডেন শতক গড়েন তিনি। এরপর একই বছর ডিসেম্বরে মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্লাব মিডলসেক্সের সাথে তিন বছরের চুক্তি করেন স্টার্লিং। বর্তমান ইংলিশ অধিনায়ক ও সাবেক আইরিশ খেলোয়াড় ইয়ন মরগানের সতীর্থ ছিলেন তিনি।
২০১০ সালে আইসিসির ইমার্জিং খেলোয়াড় ও সহযোগী দেশের মধ্যে সেরা খেলোয়াড়ের জন্য মনোনীত হন তিনি। তিনিই একমাত্র সহযোগী দেশের খেলোয়াড় হিসেবে এই ক্যাটাগরিতে মনোনীত হন। ২০১০ সালে কানাডার বিপক্ষে ১৩৪ বলে ১৭৭ রানের দূর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন পল! ওয়ানডেতে আইরিশদের পক্ষে এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৭০ বলে শতক হাকান স্টার্লিং, যা কিনা বিশ্বকাপ ইতিহাসের চতুর্থ দ্রুততম শতক। মাত্র ২২ বছর বয়সেই ওয়ানডেতে ৫টি শতক করেন এই আইরিশ সেনসেশন। তখন এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনি সেরা ১০ খেলোয়াড়দের মধ্যে থাকতে চান। ২০১৩ সালে ২২ বছর বয়সেই ওয়ানডে ব্যাটসম্যান র্যাঙ্কিয়ে তিনি অষ্টম স্থানে উঠে আসেন।
২০১৪ ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে ৬ ম্যাচে প্রায় ৪৪ গড়ে চার ফিফটিতে করেন ৩৫১ রান! ২০১৫ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৮৪ বলে ৯২ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে জয় তুলে নেন স্টার্লিং। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সিলেট রয়েলস, খুলনা টাইটান্সের হয়ে খেললেও এখনো সুযোগ পাননি আইপিএলের মঞ্চে। শুধু ব্যাট হাতেই নয় বল হাতেও স্টার্লিংয়ের রয়েছে ওয়ানডেতে ৪৩ ও টি-টোয়েন্টি তে রয়েছে ১৭ উইকেট।
যখনি খেলার সুযোগ পেয়েছেন নিজের সেরাটা দিয়ে নিজেকে জানান দিয়েছেন। তবুও বিশ্বক্রিকেটে মূল্য পান না স্টার্লিংয়ের মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা! যেখানে আইপিএলে ডার্সি শর্ট, এলেক্স ক্যারির মতো খেলোয়াড়েরা সুযোগ পান কারণ তারা অস্ট্রেলিয়ার, যেখানে প্রতি সিজনেই পার্ফম না করেও চড়া মূল্য বিক্রি হন ম্যাক্সওয়েল-হেটমায়াররা! সেখানে স্টার্লিংয়ের মতোন খেলোয়াড়েরা নিলামের জন্যই সুযোগ পাননা। শুধু কি সহযোগী দেশের খেলোয়াড় বলেই এমন বৈষম্য? এতো প্রতিভা, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কি আইপিএল, বিগ ব্যাশের মতো বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার যোগ্যতা রাখেন না স্টার্লিং!
বড় বড় দলের সাথে খেলার সুযোগ হয় না বললেই চলে, আইসিসির সুনজর না থাকা ও গৎবাধা নিয়মের কারণে নিয়মিত খেলা হয় না বিশ্বকাপেও! তাহলে পল স্টার্লিং, কেভিন ও’ব্রায়েন, রায়ান টেন ডেসকাটের মতো খেলোয়াড়েরা আজীবন কি আড়ালে থেকেই পার্ফম করে যাবেন? তাঁরা কি নিজেদের প্রতিভার যথাযথ প্রতিদান কখনো পেয়েছেন?
Discussion about this post