খেলাধুলা ডেস্ক
ভালোবাসা দিবসের ঠিক আগের দিনেই বেদনার এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল লিভারপুলের। সাত মিনিটের মাথায় তিন গোল খেয়ে লেস্টার সিটির কাছে হেরেছিল ৩-১ গোলে। ম্যাচের পর টুইটারে হাজির হয়েছিলেন সালাহ। ভক্ত-সমর্থকদের জানিয়েছিলেন ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়। ঠিক পরের ম্যাচেই সমর্থকদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখলেন সালাহ। গোল করে জেতালেন দলকে। তাও আবার যেমন-তেমন কোনো দল নয়, গতবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালিস্ট জার্মান ক্লাব লাইপজিগকে। সালাহর সঙ্গে সাদিও মানের গোল মিলিয়ে লাইপজিগকে ২-০ গোলে হারিয়েছে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা।
অথচ ম্যাচটা লাইপজিগের ‘হোমে’ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জার্মানিতে কোয়ারেন্টিন-বিষয়ক কড়াকড়ির জন্য উয়েফা ম্যাচটা আর জার্মানিতে আয়োজন করতে চায়নি, এগিয়ে এসেছিল হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে। পুসকাস স্টেডিয়ামের মতো নিরপেক্ষ জায়গা পেয়ে লিভারপুলের যেন অ্যানফিল্ডের কথা মনে পড়ে গেল। খেলা দেখে কে বলবে, এই দলটাই গত প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন ম্যাচে খাবি খাচ্ছে? প্রথম থেকেই লাইপজিগের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে লিভারপুল। জয়টা পেয়েছে যোগ্যতর দল হিসেবেই।
অথচ ম্যাচ শুরুর আগে মনে করা হচ্ছিল, এই ম্যাচেও লিভারপুল হেরে বসবে। আর অমন ভাবনা একদমই অমূলক ছিল না। লাইপজিগের কোচ ইউলিয়ান নাগলসমান শুধু তরুণ কোচদের মধ্যেই নন, বর্তমান বিশ্বের সব কোচের মধ্যেই অনন্য একজন। চেলসি, বায়ার্ন মিউনিখ, রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবগুলো বিভিন্ন সময়ে নাগলসমানকে দলে তো আর এমনি এমনি আনতে চায়নি! তরুণ এই কোচ দলকে খেলানও দুর্দান্তভাবে। কার্যকর প্রেসিং মাথায় রেখে লাইপজিগ যেভাবে ভীতি-জাগানিয়া ফুটবল খেলে, দেখলে ফর্মে থাকা লিভারপুলের কথাই মনে পড়ে যায়। সে দিক দিয়ে ক্লপ-বাহিনী অনেকটা নিজেদের মতো এক দলের মুখোমুখিই হয়েছিল গত রাতে।
কিন্তু লিভারপুলের মতো হাই-প্রেসিং কৌশলে যারা খেলে, তাদের ডিফেন্ডারদের সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। কারণ প্রেসিংয়ের সমন্বয়ে ক্রমাগত আক্রমণ করতে থাকলে প্রতিপক্ষ যদি কোনোভাবে একটু সুযোগও পেয়ে বসে প্রেস ভেঙে ফেলার, তখন যদি ডিফেন্ডাররা নিজেদের কাজ ঠিকঠাক না করতে পারেন, সেটা হয় দুঃস্বপ্নের নামান্তর। গত এক-দেড় মাসে লিভারপুল ম্যানচেস্টার সিটি, সাউদাম্পটনের মতো দলগুলোর কাছে এভাবেই হেরেছে। লাইপজিগও কালকে ঘুরেফিরে এভাবেই হারল। দলটার দুই ডিফেন্ডার লুকাস ক্লস্টারম্যান ও নর্ডি মুকিয়েলের দুই হাস্যকর ভুলের সুবিধা নিয়ে দুই গোল করেছেন সালাহ ও মানে। ৫৩ থেকে ৫৮ মিনিটের মধ্যেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে ম্যাচের ভাগ্য। সে হিসেবে এক মাস ধরে ক্লপ যে যন্ত্রণায় ভুগছিলেন, সে যন্ত্রণায় এবার পুড়ল ক্লপের প্রতিপক্ষ।
এটি নিয়ে এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৪ গোল করা হয়ে গেল সালাহর। এক রবার্ট লেফানডফস্কি ছাড়া আর কেউ এই মিসরীয় উইঙ্গারের চেয়ে বেশি গোল করেননি।
দ্বিতীয় লেগটাও এমন নিরপেক্ষ কোনো মাঠেই হবে। কিন্তু কোন মাঠে, উয়েফা এখনো নিশ্চিত করেনি। যেখানেই হোক, লিভারপুল একটু কম চিন্তা নিয়েই সেখানে খেলতে থাকবে। সঙ্গে থাকবে দুই গোলে এগিয়ে থাকার স্বস্তি।
কিছুদিন আগেই মা এলিসাবেথ ক্লপ মারা গিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে জৈব সুরক্ষা বলয়ের গ্যাঁড়াকলে পড়ে মাকে শেষবারের জন্য দেখতে জার্মানিতে যেতে পারেননি ক্লপ। তার ওপর দলের ভগ্নদশা তাঁর মানসিক অবস্থা খারাপই করে দিয়েছিল। এই জয়ে ‘গুরু’কে অন্তত একটু হলেও স্বস্তি দিতে পারলেন সালাহ আর মানে!
Discussion about this post