বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবসের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ‘টেকসই উন্নয়ন-সমৃদ্ধ দেশ, নিরাপদ খাদ্যের বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে এ বছর দেশে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। খাদ্য নিয়ে সচেতনতা তৈরী করতে দেশে ২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছর ২রা ফেব্রুয়ারি পালন করা হচ্ছে, নিরাপদ খাদ্য দিবস হিসেবে।
এবারে করোনা পরিস্থিতির কারণে দিবসটি পালনে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারের সবসময় একটাই লক্ষ্য ছিলো একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। মনে রাখতে হবে খাদ্যের পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা একান্তভাবে প্রয়োজন। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই পরিকল্পিতভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদন ও পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গবেষণাটা একান্তভাবে প্রয়োজন। একসময় দেশ থেকে চিংড়ি রফতানি হতো। কিন্তু সেখানেও প্রতিবন্ধকতা তৈরী হতো, কেননা সেগুলো যথাযথভাবে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হতো না। এ জন্য খাদ্য পরীক্ষাগার স্থাপন করা জরুরী। কেননা, গবেষণা ছাড়া আসলে কখনো উৎকর্ষ সাধন করা যায় না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন করতে হলেও, গবেষণাটা অত্যন্ত জরুরী। গবেষণার মাধ্যমে যে পরিবর্তন করা সম্ভব, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। আসলে অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক এটা তারা চায় নি কখনো। আমদানির ওপরই তাদের আন্তরিকতা ছিল, তার কারণ ছিল তাদের নিজস্ব কিছু লোক আমদানির মাধ্যমে ব্যবসা করবে। আমি এটা স্পষ্ট করতে চাই যে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসা করতে আসেনি, জনগণের সেবা দিতে এসেছি, সেবক হিসেবে এসেছি। কেননা, নিজেদের আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই আমরা।’
মানুষের সুষম খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া তরান্বিত করার উদ্যোগ নিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিভাবে খাদ্য গ্রহণ করলে সেটি সুষম খাদ্য হবে, সেই প্রচারটা জরুরী। কেননা, একটা সময়ে দেশের মানুষ শুধু লবন-মরিচ দিয়েই ভাত খেতো। কারণ দারিদ্র্যের কষাঘাতে তারা জর্জরিত ছিলো। কিন্তু এখন তো আর সেই অবস্থাটা নেই! এখন যেমন দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। তেমনি সচেতনতাও এসেছে। মানুষ এখন যা আয় করে, সেই টাকা দিয়ে সে ভাতের পাশাপাশি একটু আমিষও খেতে পারে। আমি চাই, তাদের জীবনমান আরো উন্নত হোক, তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাক, মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা আসুক সেই প্রচেষ্টা যেমন আমরা চালাবো। সাথে সাথে যারা খাদ্য গ্রহণ করবেন, তারা যাতে সুষম খাদ্য গ্রহণ করে। সেই বিষয়ে সবাইকে সচেতন করাটা একান্তভাবে জরুরী।’
এ সময় খাদ্যে ভেজালরোধে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের বেশকিছু নির্দেশনা দেন। একই সাথে, ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ার করেন খাদ্যে ভেজাল না দিতে। তিনি বলেন, ‘যারা ব্যবসা করছে তারা দুই পয়সা বেশি কামাই করার জন্য, খাদ্যে ভেজাল দিতে থাকে, পচা-গন্ধওয়ালা খাবারগুলোকে আবারো ব্যবহার করে, এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপ নিয়েও এটিকে প্রতিরোধ করতে হবে।’
তিনি জানান, ‘করোনার মধ্যে ঘরে-ঘরে অনলাইন থেকে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। সেখানেও বেচা-বিক্রি বেড়েছে। কিন্তু সেগুলোর মান ঠিক রয়েছে কিনা, তাও নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।’
এছাড়া, প্রক্রিয়াজাত করা খাবার নিরাপদে পরিবহনের জন্য ডাকবিভাগ বড় ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় রাজধানীতে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় গ্রেডিং স্টিকার দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই উদ্যোগকে সারা বাংলাদশেই ছড়িয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে খাদ্যের বিভিন্ন বিষয় মনিটর করা যেতে পারে বলেও, জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে জনসচেতনতা তৈরী করতে খাদ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত কুইজ ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কার তুলে দেন খাদ্যমন্ত্রীসহ মঞ্চে উপস্থিত মন্ত্রীরা।
Discussion about this post