আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গ্রিস-পর্তুগালের মতো দেশগুলোর কাঁধে ঋণ অনেক বেশি, তবে তাদের ইউরোপীয় প্রতিবেশীরা চাইলে সেই বোঝা নামিয়ে দিতে পারে। ফ্রান্স, স্পেন, এমনকি জার্মানির কাঁধেও রয়েছে নির্দিষ্ট মেয়াদের বিশাল ঋণ। তবে নিজস্ব বিশাল অর্থনীতি আর সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধির কারণে বাজার নষ্ট না করেই সেই চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারে দেশগুলো। শুধু তিন দিক থেকেই বিপদে একটি দেশ- ইতালি। নির্দিষ্ট-অনির্দিষ্ট দুই মেয়াদে বিশাল ঋণ তো রয়েছেই, করোনাভাইরাস মহামারির আগেও তাদের অর্থনীতির অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তবে নতুন প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘির আগমনে নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছে ইতালি।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ইতালির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান দ্রাঘি। বলা হচ্ছে, সরকারপ্রধানের আসনে এই মুহূর্তে ইতালিতে তার চেয়ে উপযুক্ত আর কেউ নেই।
অনির্বাচিত সরকারের প্রধানরা সাধারণত গণতন্ত্রের পরোয়া করেন না। জনগণের সঙ্গে যোগাযোগেও তারা খুব একটা পারদর্শী হন না। তবে প্রধানমন্ত্রী যখন আন্তর্জাতিক ব্যাংকার, তখন জননেতাসুলভ স্লোগান আপনাআপনিই চলে আসার কথা।
ইতালির প্রায় সব কয়টি প্রধান রাজনৈতিক দলের সমর্থন পাচ্ছেন মারিও দ্রাঘি। তিনি শুধু একজন টেকনোক্র্যাটই নন, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও তার দক্ষতা উল্লেখযোগ্য। এক দশক আগে ইউরো সংকটের সময় তিনি এর প্রমাণ রেখেছেন। সেই সক্ষমতা এখন আরও বেশি দরকার পড়বে এ নেতার।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অন্যতম জঘন্য জায়গা ইতালি। ব্যবসার সুযোগের অপ্রতুলতা, গতিহীন ও খামখেয়ালি বিচার ব্যবস্থা, লাল ফিতার দৌরাত্ম এবং চাকরির ক্ষেত্র তৈরিতে নিরুৎসাহিত করা রাজস্ব ব্যবস্থার একটি দেশ এটি। সমৃদ্ধশালী উত্তরাঞ্চল এবং দরিদ্র দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে বহুদিনের ভারসাম্যহীনতা দূর করতে ইতালি সরকারের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তাদের দক্ষিণাঞ্চল বা মেজ্জোজোর্নো গোটা ইউরোপেরই অন্যতম অনুন্নত এলাকা।
এসব সমস্যা সমাধান করা দরকার। কিন্তু একের পর এক দুর্বল জোট সরকারের হাতে তার সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে। এখন মারিও দ্রাঘির সামনে সুযোগ এসেছে ভালো কিছু করার। অন্তত সংসদে তার বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
অসুস্থ ইতালিকে তেঁতো ওষুধ গেলাতে যথেষ্ট পরিমাণে মিষ্টি হাতে পাচ্ছেন দ্রাঘি। এর জন্য বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিতে হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিশ্রুত ৭৫০ বিলিয়ন ইউরো পুনরুদ্ধার তহবিলকে। ইতালি সেখান থেকে আগামী ছয় বছরে ২০০ বিলিয়ন ইউরো পেতে পারে। এর জন্য শর্তও থাকছে সহজ। সহায়তার বেশিরভাগ অর্থ ডিজিটাল অথবা সবুজ প্রকল্পে ব্যয় করতে হবে, সংস্কারের একটি বিস্তৃত কর্মসূচিতে সম্মত হওয়া এর অন্যতম অংশ। এক্ষেত্রে ব্রাসেলসে জমা দেওয়া ইতালির খসড়া পরিকল্পনা ইইউ’র অনেক সদস্য দেশের তুলনায় ভালো।
এরপরও বাড়তি প্রচেষ্টা দেখাতে হবে দ্রাঘিকে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সংসদের এক ভাষণে তেমনই পূর্বাভাস দিয়েছেন তিনি। ইতালির রাজস্ব ব্যবস্থা, আদালত ও জনপ্রশাসন পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। এগুলো সত্যিকারে বাস্তবায়িত হলে হয়তো চেহারাই বদলে যাবে ইতালির। সেক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, এটি পারলে একমাত্র ‘সুপার মারিও’ই পারবেন, নাহলে কেউ না।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
Discussion about this post