আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইরানের পরমাণু কেন্দ্রের উপর জাতিসংঘ আর নজরদারি চালাতে পারবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। জাতিসংঘের সঙ্গে বৈঠকের পরই এমন ঘোষণা দেয় তেহরান। খবর ডয়েচে ভেলের।
আইন হয়েছিল মাসখানেক আগেই। তখনো মার্কিন মসনদে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের পার্লামেন্ট জানিয়েছিল, আমেরিকা তাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা না তুললে ইউরেনিয়ামের মজুত কয়েক গুণ বাড়ানো হবে। পাশাপাশি, দেশের পরমাণু কেন্দ্রে জাতিসংঘের নজরদারি বন্ধ করা হবে।
রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত আমেরিকাকে সময় দেওয়া হয়েছিল ওই আইনে। আজ সোমবার থেকে সেই আইন বলবৎ হবে বলে জানিয়েছে ইরান।
রোববার তেহরানের সঙ্গে এ বিষয়ে জরুরি বৈঠক করেন জাতিসংঘের অ্যাটোমিক ওয়াচডগের প্রধান রাফায়েল গ্রসি। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, ‘তেহরানের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো গেছে। আগামী কয়েকমাস জাতিসংঘ আগের মতো না হলেও ইরানে পরমাণু-কেন্দ্রের খবরাখবর নিতে পারবে।’
তবে তেহরানের সঙ্গে জাতিসংঘের বৈঠকে ঠিক কী আলোচনা হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। গ্রসি এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাননি। তিনি কেবল জানিয়েছেন, পরমাণু-কেন্দ্রে নজরদারির জন্য ইরানে জাতিসংঘের যে প্রতিনিধিরা ছিলেন, এখনই তাদের ইরান দেশ থেকে বের করে দেবে না। আগামী অন্তত তিন মাসের জন্য ইরানের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো গেছে। জাতিসংঘ আগের মতো না হলেও, ইরানের পরমাণু-কেন্দ্রের খবরাখবর রাখতে পারবে। এর চেয়ে বেশি বৈঠকের বিষয়ে আর কিছু জানাননি তিনি।
অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ রোববার ইরানের জাতীয় টেলিভিশনে জানিয়েছেন, ‘জাতিসংঘ ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে ক্যামেরা বসিয়ে রেখেছিল। সোমবার (আজ) থেকে সেই ক্যামেরার ফুটেজ আর তাদের দেওয়া হবে না।’ অর্থাৎ, তেহরান স্পষ্ট করে দিয়েছে, পরমাণু কেন্দ্রে আর সরাসরি নজরদারি চালাতে পারবে না জাতিসংঘ।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ইরান শুধু পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাতে পারবে না। তবে আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি চালু রাখার অধিকার সে দেশের রয়েছে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চিকিৎসার মতো ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তি কাজে লাগানো যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আমেরিকার উপর চাপ সৃষ্টি করতেই ইরান এই চরম পদক্ষেপ নিয়েছে। সাময়িক একটি সমঝোতা হলেও আগামী তিনমাসের মধ্যে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি নিয়ে আমেরিকাকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু চুক্তি থেকে আমেরিকাকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। একই সঙ্গে ইরানের উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে ইউরোপের একাধিক দেশ আপত্তি জানালেও ট্রাম্প কারো কথা শুনতে রাজি হননি। বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরে তার উপর চাপ সৃষ্টি করতেই ইরান এই চরম পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী জো বাইডেন। তবে ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলার ব্যাপারে তার মনোভাব এখনো স্পষ্ট করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ইরানের স্পষ্ট বক্তব্য, আমেরিকাকে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে হবে এবং ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।
Discussion about this post