নিজস্ব প্রতিবেদক
গত এক যুগ ধরে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এসএসসি ও এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এবার করোনার কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এ পরীক্ষা পিছিয়ে যথাক্রমে আগামী জুন ও আগস্ট মাসে নেওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সেজন্য এসএসসির ৬০ দিন ও এইচএসসি ৮৪ দিন ক্লাস ধরে পরিমার্জিত সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করেছে শিক্ষাবোর্ড।
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে এমনটি ধরেই এ ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী। সরকারি বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ২৪ মের পর খোলা হবে এমন ঘোষণার পর এ দুটি পরীক্ষা জুন ও জুলাইয়ে হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বোর্ড কর্মকর্তারা।
শিক্ষাবোর্ড ও এনসিটিবি কর্মকর্তারা বলছেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে এমনটি ধরে এ ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু বর্তমান ছুটি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মার্চ মাসেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে কি না তাও অনিশ্চিত।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী জানান, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এক লাখ ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ হাজার ৫২৪ জন শিক্ষককেও ভ্যাকসিনের আওতায় এনেই হল ও ক্যাম্পাস খোলা হবে। আর ১৭ মের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও করোনার টিকা নিতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষকের সংখ্যা চার লাখ ছয় হাজার ৪৭৯ জন। আর কর্মচারীর সংখ্যা এক লাখ ৬২ হাজার ৮৬১ জন। শিক্ষক-কর্মচারী মিলিয়ে পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩০ জন। এর সঙ্গে মাধ্যমিকের যেসব শিক্ষা কর্মকর্তা রয়েছেন তা যোগ করলে পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৪৩০ জন।
মন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার টিকা না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না এটা বলা যায়। অন্যদিকে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করা নিয়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশের প্রায় এক মাস হতে চললেও শ্রেণিকক্ষে সরাসরি ক্লাস শুরু হয়নি। ২৩ মে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার ঘোষণার পরে ঈদের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই। ঈদের পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী ক্লাস নিয়ে আগস্টের আগে এসএসসি ও সেপ্টেম্বরের আগে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না।
এদিকে সরাসরি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু না হওয়ায় পরীক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আগেই সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করায় কোচিং ও প্রাইভেট ব্যবসা চলছে জমজমাট। অনেক পরীক্ষার্থী এরই মধ্যে প্রাইভেট টিউটর ও অনলাইনে কোচিং করে কোর্সও শেষ করে ফেলেছে।
জানা গেছে, গত ২৭ জানুয়ারি এনসিটিবিতে কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, স্কুল খোলার পর সরাসরি শ্রেণিকক্ষে এসএসসির ৬০ দিন ও ৮৪ দিন এইচএসসির ক্লাস করানোর পর ওই সিলেবাসের ওপর প্রশ্ন তৈরি করে এ দুটি পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। মন্ত্রী বলেছিলেন, যদি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যায় তবেই এটা কার্যকর হবে।
এ অবস্থায় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা জুন ও আগস্টে হবে কি না জানতে চাইলে ঢাকা আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এসএম আমিরুল ইসলাম বলেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি খুললে সম্ভব ছিল। এখন যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে বিলম্ব হচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই এসএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে যাবে। কারণ, শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন যে না পড়িয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে না।
সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী ৬০ দিন ক্লাস নিয়ে এসএসসি, ৮৪ দিন ক্লাস নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে তখন থেকে এ দিন গণনা শুরু হবে। একটি পরীক্ষা শেষ করে আরেকটি পরীক্ষা আয়োজন করতে অন্তত এক মাস সময় দরকার
এনসিটিবির ওই বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী জানান, যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি হবে তাতে ৯ মে এসএসসি ও ১৫ জুন এইচএসসির সব ক্লাস শেষ করতে হবে এবং জুনে এসএসসি ও জুলাই বা আগস্টে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে যতটুকু সিলেবাস পড়ানো যাবে ততটুকু সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হবে।
এ সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে পরীক্ষা প্রশ্ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হবে। এইচএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের বিষয়ে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮৪ দিন ক্লাস করানো হবে। মোট ৫০৪টি ক্লাস হবে। গড়ে ৩৮টি ক্লাস পাবে।
এর আগে ২৫ জানুয়ারি গড়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ এসএসসি সিলেবাস কমিয়ে শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার পরও শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, তিন মাসের এ সিলেবাস এক বছরেও শেষ করা সম্ভব নয়। এরপর মন্ত্রী সেই সিলেবাস আরো সংক্ষিপ্ত করে নিদিষ্ট ক্লাস ও দিন উল্লেখ করে দেন।
শিক্ষামন্ত্রীর এমন নির্দেশনার পর এনসিটিবির বিশেষজ্ঞরা এসএসসি-এইচএসসির প্রত্যেকটি শ্রেণিতে দুই দিন ওয়ার্কশপ করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেন। বিষয় প্রতি সর্বোচ্চ ৩০টি কর্ম দিবস ক্লাস নেওয়া হবে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় এনসিটিবিতে আয়োজিত এক সভায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাস এনসিটিবির পক্ষ থেকে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদের কাছে তুলে দেওয়া হয়।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুত কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সঙ্গে সভা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। কমিটি মতামত দিলেই শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হব। ঈদের আগে শুরু হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
Discussion about this post