মৌসুমের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে ফর্ম খুঁজে পেয়েছে বার্সেলোনা। লিগ টেবিলে আতলেতিকোর সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান অনেক ঘুচিয়ে ফেলা দলটি আজ তাই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থক বনে গিয়েছিল। কারণ, আজ যদি রিয়াল মাদ্রিদ নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারাতে পারত, তাহলে যে স্প্যানিশ লিগের দৌড়ে আরও সুবিধা হতো বার্সেলোনার।
গতকাল ওসাসুনার বিপক্ষে ম্যাচের আগেই বার্সেলোনা কোচ রোনাল্ড কোমান বলেছিলেন এ ম্যাচে কোন দলের ভালো চাইছেন। শত্রুতা ভুলে দলের শিরোপা জেতার সম্ভাবনা জাগানোর কথা যাঁরা ভাবছেন, সেই সব বার্সা সমর্থক আজ রিয়ালের জয়ই চেয়েছিলেন। রিয়াল জয় পায়নি। তবে বার্সা–সমর্থকদের ইচ্ছা কিছুটা হলেও পূরণ করেছে। শেষ মুহূর্তের গোলে আতলেতিকোর মাঠ থেকে ১-১ গোলে ড্র করে ফিরেছে জিনেদিন জিদানের দল। আর তাতেই লা লিগা জমে গেল দারুণভাবে।
ম্যাচের প্রথমার্ধে মাঠে রিয়াল মাদ্রিদ ছিল। তবে সেটা জার্সির রং দেখে চিনতে হচ্ছিল। পুরো দলের খেলায় কোনো প্রাণ ছিল না। আক্রমণে যেন ছিল একটাই পরিকল্পনা—বল নিয়ে বক্সের আশপাশে সময় কাটাও, এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাস দাও, এরপর বক্সে ক্রস করো। বক্সে থাকা একমাত্র খেলোয়াড় করিম বেনজেমা কখনো বল পাচ্ছিলেন, কখনো পাচ্ছিলেন না। কিন্তু সেই সব আক্রমণের শেষ পরিণতি? লক্ষ্যে কোনো শটই ছিল না রিয়ালের!
সে তুলনায় আতলেতিকোর খেলায় ছিল দারুণ পরিকল্পনা। দুর্দান্ত গতিতে আক্রমণে উঠছিল দলটি। প্রথম ১০ মিনিটে বেশ কয়েকবারই ভয় দেখিয়েছে রিয়ালকে। আর পুরস্কার পেয়েছে ১৫তম মিনিটে। পাল্টা আক্রমণে উঠেছিল আতলেতিকো, সে আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে ভুল করে বসেন রিয়ালের সেন্টারব্যাক নাচো ফার্নান্দেজ।
মার্কোস ইয়োরন্তের পাস থেকে বল পান আতলেতিকো স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ, তাঁকে আটকাটে মাঝমাঠেই ট্যাকল করে বসেন নাচো। ট্যাকল ভুল হলো। সুয়ারেজ ছুটে বেরিয়ে যান। রিয়াল গোলকিপার থিবো কোর্তোয়াকে এরপর কোনো সুযোগই দেননি সুয়ারেজ।
রিয়ালের একাডেমিতে বেড়ে ওঠা ইয়োরন্তের পাস থেকে গোল করছেন বার্সায় কিংবদন্তি বনে যাওয়া সুয়ারেজ, তা-ও রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে আতলেতিকোর জার্সিতে, দুই বছর আগে এমন কিছু কেউ ভাবতে পেরেছিল?
গোল খাওয়ার পরও রিয়ালের ঘুম ভাঙার কোনো চিহ্ন ছিল না। ৪৪ মিনিটে রিয়াল একটি পেনাল্টির আবেদন করেছিল। বক্সে আতলেতিকো ডিফেন্ডার ফেলিপের হাতে বল লেগেছিল। ভিএআর রেফারিকে আমন্ত্রণও জানিয়েছিল সিদ্ধান্ত আরেকবার ভেবে দেখার। কিন্তু রেফারি হার্নান্দেজ হার্নান্দেজ রিয়ালের পক্ষে পেনাল্টি দেননি।
বিরতি থেকে ফেরার পরও ম্যাচ একই ছন্দে এগোচ্ছিল। রিয়াল বলের দখল রেখেছিল। ডান প্রান্ত থেকে মাঝমাঠে দুবার পাস দিয়ে বাঁ প্রান্তে নেওয়া এরপর ক্রস করার চেষ্টা অথবা বাঁ প্রান্ত থেকে ওভাবে ডান প্রান্তে বল নিয়ে আবার ক্রসের চেষ্টা—রিয়ালের আক্রমণ মানেই যেন ছিল এমন। এর মাঝেই রিয়ালকে দুবার বাঁচিয়ে দিয়েছেন গোলকিপার কোর্তোয়া। ৫৩ ও ৫৪ মিনিটে ডাবল সেভ করেছেন বেলজিয়ান গোলকিপার।
ক্রস-ক্রস খেলার চেষ্টা ৭০ মিনিটের পর একটু কমায় রিয়াল। একটু মাঝমাঠ দিয়ে আক্রমণের চেষ্টা করায় ৮০ মিনিটের পর বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগও সৃষ্টি হয়। আর এরই ফল মেলে ৮৮ মিনিটে।
কাসেমিরোর সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে বক্সে ঢুকে পড়েন বেনজেমা। ততক্ষণে মাঝমাঠ থেকে উঠে ‘দ্বিতীয় স্ট্রাইকার’ হিসেবে খেলতে থাকা কাসেমিরো দারুণ পাস পাঠান বেনজেমাকে। এর কিছুক্ষণ আগেই দুবার সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ বেনজেমা এবার আর কয়েক গজ দূর থেকে ব্যর্থ হননি। ১-১–এ শেষ হয় ম্যাচ।
এই ড্রয়ে বার্সার চেয়ে ৩ পয়েন্ট এগিয়ে থাকল আতলেতিকো। ২৬ ম্যাচ শেষে দুইয়ে থাকা বার্সেলোনা ও তিনে থাকা রিয়ালের পয়েন্ট যথাক্রমে ৫৬ ও ৫৪। এক ম্যাচ কম খেলে আতলেতিকো ৫৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে।
Discussion about this post