শিক্ষার আলো ডেস্ক
আজ (৯ মার্চ ,মঙ্গলবার ) দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর ৯০তম জন্মদিন । ১৯৩২ সালের এই দিনে ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এই গুণী শিল্পী। প্রায় ছয় দশকের বেশি একাগ্র শিল্পচর্চায় দেশের চারুকলার জগৎ সমৃদ্ধ করে গেছেন তিনি।
নিরন্তর নিষ্ঠা আর সাধনায় অনুপ্রাণিত করেছেন বহু শিক্ষার্থী ও শিল্পীকে। বাংলার আবহমান নিসর্গ প্রকৃতি, নদী-বৃক্ষ-মানুষ ক্যানভাসের পর ক্যানভাসে তাঁর তুলিতে বাঙ্ময় হয়ে ধরা দিয়েছে। ষাটের দশক থেকে দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁর অবিনাশী চিত্রকর্ম প্রেরণার অন্তহীন উৎস হিসেবে কাজ করেছে। বাঙালি ও বাংলার রূপ ও বৈচিত্র্য গভীর সংবেদনায় কাইয়ুম চৌধুরীর পটে উদ্ভাসিত হয়েছে।
স্কুলজীবন থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল কাইয়ুম চৌধুরীর। ফলে স্কুল সার্টিফিকেট শেষ করেই ১৯৪৯ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের প্রতিষ্ঠিত ঢাকার আর্টস ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। তিনি ১৯৫৪ সালে ঢাকার গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। দেশের এই শীর্ষ শিল্পপীঠে ৩৭ বছর শিক্ষকতার পর ১৯৯৭ সালে অবসরে যান তিনি।
পাঁচটি একক চিত্রপ্রদর্শনী এবং দেশ-বিদেশে বহু দলবদ্ধ প্রদর্শনীতে অংশ নেন তিনি। দীর্ঘ কর্মজীবনে চিত্রকর্মের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতে প্রচ্ছদ অলংকরণসহ সৃজনশীলতা ও মননশীলতার বিকাশে অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন তিনি।
তেল রঙ, জল রঙ, কালি-কলম, মোমরং, রেশমছাপ ইত্যাদি নানা মাধ্যমে কাইয়ুম চৌধুরী কাজ করেছেন। তার প্রকটি প্রবণতা জ্যামিতিক আকৃতির অনুষঙ্গ। বস্তুতঃ তার ছবি নকশা প্রধান। বর্ণিল পটভূমিতে মোটাদাগের নকশা তার প্রধানতম অঙ্কনশৈলী। অন্যদিকে কাইয়ুম চৌধুরীর চিত্রাবলী বর্ণোজ্জ্বল;- এই দিক থেকে আঁরি মাতিসের সঙ্গে তার সমিলতা লক্ষ্যণীয়। লাল, নীল, সবুজ এই তিনটি রং তিনি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করে থাকেন। এই বর্ণভঙ্গী তার চিত্ররীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তার ক্যানভাসের আয়তন প্রায়শঃ বর্গাকার। এছাড়া তার চিত্রাবলিতে এদেশের লোকশিল্পসুলভ পুতুল, পাখা, হাঁড়ি, শীতলপাটি, কাঁথা ইত্যাদির পুনঃপৌণিক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ২০১০ সালে সুফিয়া কামাল পদক লাভ করেন । প্রতিক্রিয়ায় শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘এমন একজন মহীয়সী নারীর নামাঙ্কিত পদক আমাকে প্রদান করা হয়েছে, জানি না আমি এর যোগ্য কি না। আমি এর জন্য আনন্দিত এবং গর্বিত। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কাছে আমি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কাইয়ুম চৌধুরীর ৭৮তম জন্মবার্ষিকীতে সৈয়দ শামসুল হক বলেন, সত্যিকার অর্থে বিশ্বমানের শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, সত্যজিত রায়ের পর গ্রাফিক্স কিংবা প্রচ্ছদ শিল্পকে তিনি অন্যরকম অবস্থানে নিয়ে গেছেন। কামাল লোহানী বলেন, কাইয়ুম চৌধুরী আমাদের চলার পথে সংগ্রামী সাথী। অধ্যাপক বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীর বলেন, তার মতো বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তিনি ২০১৪ সালে শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদকেও ভূষিত হয়েছেন। এছাড়া শিল্পকর্মে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদক, শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন ক্ষণজন্মা এই শিল্পী।
২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা আর্মি স্টেডিয়ামে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে বক্তব্য দেওয়ার সময় মঞ্চেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
Discussion about this post