ড. মিল্টন বিশ্বাস , অধ্যাপক, কলামিস্ট
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩০৫৩ দিনের কারাজীবনে অনেক জন্মদিন কেটেছে দেওয়াল ঘেরা অন্ধকার কক্ষে।যেমন, ১৭ই মার্চ ১৯৬৭ সালের শুক্রবারে লিপিবদ্ধ ‘কারাগারের রোজনামচা’য় প্রকাশিত বিবরণটি তিনি নিজে লিখে গেছেন।
‘আজ আমার ৪৭তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনে ১৯২০ সালে পূর্ব বাংলার এক ছোট্ট পল্লীতে জন্মগ্রহণ করি। আমার জন্মবার্ষিকী আমি কোনোদিন নিজে পালন করি নাই-বেশি হলে আমার স্ত্রী এই দিনটাতে আমাকে ছোট্ট একটি উপহার দিয়ে থাকত। এই দিনটিতে আমি চেষ্টা করতাম বাড়িতে থাকতে। খবরের কাগজে দেখলাম ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগ আমার জন্মবার্ষিকী পালন করছে। বোধ হয়, আমি জেলে বন্দি আছি বলেই। আমি একজন মানুষ, আর আমার আবার জন্মদিবস! দেখে হাসলাম। মাত্র ১৪ তারিখে রেণু ছেলেমেয়েদের নিয়ে দেখতে এসেছিল। আবার এত তাড়াতাড়ি দেখা করতে অনুমতি কি দিবে? মন বলছিল, যদি আমার ছেলেমেয়েরা ও রেণু আসত ভালই হত। ১৫ তারিখেও রেণু এসেছিল জেলগেটে মণির সাথে দেখা করতে।
ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি নূরে আলম—আমার কাছে ২০ সেলে থাকে, কয়েকটা ফুল নিয়ে আমার ঘরে এসে উপস্থিত। আমাকে বলল, এই আমার উপহার, আপনার জন্মদিনে। আমি ধন্যবাদের সাথে গ্রহণ করলাম। তারপর বাবু চিত্তরঞ্জন সুতার একটা রক্তগোলাপ এবং বাবু সুধাংশু বিমল দত্তও একটি শাদা গোলাপ এবং ডিপিআর বন্দি এমদাদুল্লা সাহেব একটা লাল ডালিয়া আমাকে উপহার দিলেন। আমি থাকি দেওয়ানী ওয়ার্ডে আর এরা থাকেন পুরানা বিশ সেলে। মাঝে মাঝে দেখা হয় আমি যখন বেড়াই আর তারা যখন হাঁটাচলা করেন স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য।
খবরের কাগজ পড়া শেষ করতে চারটা বেজে গেল। ভাবলাম দেখা আসতেও পারে। ২৬ সেলে থাকেন সন্তোষ বাবু, ফরিদপুরে বাড়ি। ইংরেজ আমলে বিপ্লবী দলে ছিলেন, বহুদিন জেলে ছিলেন। এবারে মার্শাল ল’ জারি হওয়ার পরে জেলে এসেছেন, ৮ বৎসর হয়ে গেছে। স্বাধীনতা পাওয়ার পরে প্রায় ১৭ বৎসর জেল খেটেছেন। শুধু আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সময় মুক্তি পেয়েছিলেন। জেল হাসপাতালে প্রায়ই আসেন, আমার সাথে পরিচয় পূর্বে ছিল না। তবে একই জেলে বহুদিন রয়েছি। আমাকে তো জেলে একলাই অনেকদিন থাকতে হয়েছে।
আমার কাছে কোনো রাজবন্দিকে দেওয়া হয় না। কারণ ভয় তাদের আমি খারাপ করে ফেলব, নতুবা আমাকে খারাপ করে ফেলবে। আজ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন, ২৬ সেলে যাবেন। দরজা থেকে আমার কাছে বিদায় নিতে চান। আমি একটু এগিয়ে আদাব করলাম। তখন সাড়ে চারটা বেজে গিয়েছে, বুঝলাম আজ বোধ হয় রেণু ও ছেলেমেয়েরা দেখা করার অনুমতি পায় নাই। পাঁচটাও বেজে গেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে জমাদার সাহেব বললেন, চলুন আপনার বেগম সাহেবা ও ছেলেমেয়েরা এসেছে। তাড়াতাড়ি কাপড় পরে রওয়ানা করলাম জেলগেটের দিকে। ছোট মেয়েটা আর আড়াই বৎসরের ছেলে রাসেল ফুলের মালা হাতে করে দাঁড়াইয়া আছে। মালাটা নিয়ে রাসেলকে পরাইয়া দিলাম। সে কিছুতেই পরবে না, আমার গলায় দিয়ে দিল। ওকে নিয়ে আমি ঢুকলাম রুমে। ছেলেমেয়েদের চুমা দিলাম। দেখি সিটি আওয়ামী লীগ একটা বিরাট কেক পাঠাইয়া দিয়াছে। রাসেলকে দিয়েই কাটালাম, আমিও হাত দিলাম। জেল গেটের সকলকে কিছু কিছু দেওয়া হলো। কিছুটা আমার ভাগ্নে মণিকে পাঠাতে বলে দিলাম জেলগেটে থেকে। ওর সাথে তো আমার দেখা হবে না, এক জেলে থেকেও।
আর একটা কেক পাঠাইয়াছে বদরুন, কেকটার উপর লিখেছে ‘মুজিব ভাইয়ের জন্মদিন’। বদরুন আমার স্ত্রীর মারফতে পাঠাইয়াছে এই কেকটা। নিজে তো দেখা করতে পারল না, আর অনুমতিও পাবে না। শুধু মনে মনে বললাম, তোমার স্নেহের দান আমি ধন্যবাদের সাথে গ্রহণ করলাম। জীবনে তোমাকে ভুলতে পারব না। আমার ছেলেমেয়েরা বদরুনকে ফুফু বলে ডাকে। তাই বাচ্চাদের বললাম, তোমাদের ফুফুকে আমার আদর ও ধন্যবাদ জানাইও’।
এভাবে বাইরের জগতের মুক্ত জীবনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত বঙ্গবন্ধু বিমর্ষ হয়েছেন দিনের পর পর।তাঁর কারাজীবনের অনেক কিছুই অসমাপ্ত আত্মজীবনী (২০১২), কারাগারের রোজনামচা (২০১৭) ও আমার দেখা নয়া চীন (২০২০) গ্রন্থে বিবৃত হয়েছে।গ্রন্থ তিনটির বিষয়বস্তু পর্যালোচনায় দেখা যায় তাঁর সংগ্রাম, অধ্যবসায় ও আত্মত্যাগের মহিমা বর্তমান প্রজন্মের জন্যও অভিনব। তবে ত্রয়ী গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর কষ্টে যাপিত জীবনের প্রতিচ্ছবি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। কারাবন্দি জীবনের একাকিত্বের মুহূর্তগুলো ভরে তুলেছিলেন আত্মজীবনী লেখায় নিজেকে নিয়োজিত করে। যদিও তা সমাপ্ত করে যেতে পারেননি। তিনি কারাগারে বসে রোজনামচাও লিখেছেন। তাঁর ত্রয়ী গ্রন্থ বাংলা কারাসাহিত্যের অন্যতম সংযোজন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত কারাগারে বন্দি অবস্থায় লিখে গেছেন তাঁর কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা, যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে পাশে ছিলেন। একইসঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বিশেষ মাত্রা পেয়েছে। এছাড়া আছে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকা-, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশবিভাগ পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা।
কারাগারের রোজনামচায় ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ কালপর্বের কারাস্মৃতি স্থান পেয়েছে। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার সময় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কারাগারে তাঁর লেখা দুটি এক্সারসাইজ খাতা জব্দ করে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এবং পুলিশের বিশেষ শাখার সহায়তায় উদ্ধারকৃত একটি খাতার গ্রন্থরূপ বাংলা একাডেমি প্রকাশিত কারাগারের রোজনামচা। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা উত্থাপনের পর বারবার গ্রেফতার হন। ওই সময়ের বন্দিজীবনের দিনলিপি উঠে এসেছে বইটিতে। বঙ্গবন্ধু কারান্তরীণ থাকাকালীন প্রতিদিন ডায়েরি লেখা শুরু করেন। এজন্য কারাগারের রোজনামচায় জেলজীবনের অনুপুঙ্খ বিবরণ রয়েছে। অর্থাৎ জেলখানায় সংঘটিত বিভিন্ন কথা ও কাজের মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা সবিস্তারে উপস্থাপিত। কারা-জীবনে তিনি সীমাহীন নির্যাতন, কষ্ট, অপমান, অবহেলা সহ্য করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর মতো মহান নেতার সংস্পর্শে এসে একজন কুখ্যাত চোর কীভাবে জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তন এনে আলোর পথে যাত্রা শুরু করে, সে সত্যও বইটিতে অভিব্যক্ত। জেলখানায় কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হয় তাঁকে। তবুও তাঁর লেখায় কৌতুকবোধের অভাব হয়নি। তাই রোজনামচায় বঙ্গবন্ধুর জেলজীবনের কষ্টের পাশাপাশি রসবোধের পরিচয়ও ব্যক্ত হয়েছে। শামসুজ্জামান খান লিখেছেন- ‘বঙ্গবন্ধুর নির্মোহ বিবরণ কারাগারের কথা, বন্দি ও কারাগারের কর্মী-কর্মকর্তা এবং আশপাশের লোকজনের কথাই উঠে আসে। আর আসে তাঁর পড়াশোনার কথা এবং বিশেষভাবে দেশে কী হচ্ছে তার জন্য উদ্বেগ। কারাসাহিত্য আমরা যতটা পড়েছি বঙ্গবন্ধুর মতো এতটা অনুপুঙ্খভাবে অন্য কোনো বইয়ে পাইনি।
এ বইয়ে দেখা যায় রাজবন্দি ছাড়াও তিনি সাধারণ কয়েদিদের খোঁজখবর নিচ্ছেন নিবিড় অনুসন্ধিৎসায়। বিভিন্ন দাগি আসামির কথা তাদের জীবন কেন এমন হলো, সেটা যত্ন ও সংবেদনশীলতায় বোঝার প্রয়াসও রয়েছে লেখায় গভীরভাবে। কখনো পকেটমারের, কখনো গোয়েন্দা বাহিনীর লোকেরা অপরাধীদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে কিছু টাকা-পয়সা এদিক-সেদিক করে ভাগাভাগির মাধ্যমে কীভাবে দুষ্কর্মগুলো সেরে নেয় সে কথা। আবার কারাগারে ভুক্তভোগীর একাকিত্ব, নিঃসঙ্গতা, অসহায়ত্ব, পরিবার বিচ্ছিন্নতার মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক বেদনা। এই বই হয়ে ওঠে পূর্ববাংলার নির্যাতিত মানুষের কারা নির্যাতনের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু শুধু তাঁর নিজের কারা নির্যাতনের কথা বলেননি, পূর্ববাংলার নানা শ্রেণি-পেশার ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নির্যাতনের কথা তাঁর বইয়ে বাক্সময় করে তুলেছেন।
কারাগারের রোজনামচায় কারাগারের ভেতরের খুঁটিনাটি বিষয় রয়েছে। কখনো সেটি রহস্যময়, কখনো হাসির উদ্রেক করে, কখনো নিষ্ঠুরতার চরম উদাহরণ। এসব বিষয়কে এতটা বাস্তবধর্মী করে এতটা একনিষ্ঠ মানবিক বোধে তিনি তুলে এনেছেন, যা ভেবে বিস্মিত হতে হয়। কারাগারের ইতিহাসের নানা টেকনিক্যাল পরিভাষা যেমন দফা, কেষ্টাকল, শয়তানের কল, জলভরি দফা, বন্দুক দফা, ডালচাকি দফা, ছোকরা দফা ইত্যাদি তাঁর বইকে দিয়েছে এক অনন্যতা। এসব অদ্ভুত, বিচিত্র দফার কথা আমরা আগে কেউ জানতাম না এবং এসব দফা বাংলাদেশের জেলেই উদ্ভাবিত। কোনো কোনো দফা নিয়ে হাসি পায়, কোনো কোনো দফা পড়লে মনে হয় কীসব কিম্ভূতকিমাকার ব্যাপার জেলের ভেতরে। আবার ওখানে পাগলদের জন্য যে সেল রয়েছে সেটার বর্ণনাও দিয়েছেন।
তাদের যে চিৎকার, উদ্ভট আচরণ, নানা অদ্ভুত কা-কারখানা লেখক তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন কখনো মানবিক চেতনায় কখনো মৃদু রসিকতায়। কখনো তাদের জন্য দুঃখ পেয়েছেন। কখনো পাগলদের সেলের পাশেই তাঁর সেল নির্ধারণ করা হয়েছে, ঘুমের কষ্ট হয়েছে ইত্যাদি তিনি যেমন তুলে আনার চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে তাঁর পালিত একটা মোরগের কথা আছে। মোরগটা যখন হাঁটছে তখন তাঁর মনে হয়েছে মোরগটা এক রাজকীয় ভঙ্গিতে গৌরবের সঙ্গে ঝুঁটি ফুলিয়ে বীরের মতো হেঁটে যাচ্ছে। তাঁর নির্জন সেলের পাশেই ছিল গাছ, সেই গাছে দুই হলুদ পাখি বসতো। পাখি দুটি প্রতিদিন দেখে তিনি আনন্দিত হতেন। পরে পাখি দুটি না আসায় দুঃখ পেয়েছেন। পশু-পাখির প্রতি তাঁর যে প্রেম-ভালোবাসা এটিও চমৎকারভাবে তাঁর লেখায় ফুটে উঠেছে। এছাড়া তিনি বাগান করতে ভালোবাসতেন, ফুলের গাছ লাগাতেন। এতে তাঁর প্রকৃতি, গাছপালা, পশুপাখির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পায়।
আবার কখনো দেখা যাচ্ছে, একটা গেছো গিরগিটির সঙ্গে যুদ্ধ হচ্ছে দাঁড়কাকের সেটাকে তিনি প্রতীকীভাবে সামরিক শাসকদের সঙ্গে সাধারণ মানুষদের সংঘর্ষের তুলনা করছেন। এইসব মিলিয়ে কারাগারের রোজনামচা গ্রন্থে তিনি রাজনীতি, সমাজ, দুঃশাসন ও স্বৈরাচারের নানারকম ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন। এ বইয়ের নামকরণ করেন শেখ রেহানা।’(শামসুজ্জামান খান, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম অর্জন, ২০২০)
১৯৫২ সালের চীন ভ্রমণের কাহিনি আমার দেখা নয়াচীন। বঙ্গবন্ধু এটি রচনা করেছিলেন ১৯৫৪ সালে যখন কারাগারে। তাঁর লেখা খাতাটির ওপর গোয়েন্দা সংস্থার সেন্সর ও কারা-কর্তৃপক্ষের যে সিল দেয়া আছে তা থেকেই সময়কালটা জানা যায়। শেখ মুজিবের বয়স তখন ৩২ বছর। কারাগারে বসে লেখা বলে এটিও কারা-সাহিত্যের অন্যতম দৃষ্টান্ত। গ্রন্থটির সূচনায় জেলে থাকার কথা লিখেছেন তিনি ‘১৯৫২ সালে জেল হতে বের হলাম, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পর। জেলে থাকতে ভাবতাম আর মাঝে মাঝে মওলানা ভাসানী সাহেবও বলতেন, ‘যদি সুযোগ পাও একবার চীন দেশে যেও।’ অল্পদিনের মধ্যে তারা কত উন্নতি করেছে। চীন দেশের খবর আমাদের দেশে বেশি আসে না এবং আসতে দেওয়াও হয় না। তবুও যতটুকু পেতাম তাতেই মনে হতো যদি দেখতে পেতাম কেমন করে তারা দেশকে গড়েছে! ৭৩ পৃষ্ঠায় তিনি চীনের সেলুনওয়ালার পরিচয় জিজ্ঞাসার উত্তরে মনে মনে বলেছেন ‘… মনে মনে বলি, আমার আবার পরিচয়? পথে পথে ঘুরে বেড়াই, বক্তৃতা করে বেড়াই। আর মাঝে মাঝে সরকারের দয়ায় জেলখানায় পড়ে খোদা ও রসুলের নাম নেবার সুযোগ পাই। এই তো আমার পরিচয়।’ প্রকাশিত গ্রন্থটির খাতা পরিচিতি অংশে আছে ‘তরুণ জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালের অক্টোবর মাসে পিস কনফারেন্স অব দি এশিয়ান এন্ড প্যাসিফিক রিজিওন্স-এ পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে নয়াচীন সফর করেন। সেই সময়ের স্মৃতিনির্ভর এ ভ্রমণকাহিনি ১৯৫৪ সালে কারাগারে রাজবন্দি থাকাকালে তিনি রচনা করেন। ১৯৫৭ সালে পূর্ব-বাংলার শ্রমমন্ত্রী থাকাকালে পাকিস্তান সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে তিনি আরো একবার চীন সফর করেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর গভীর ধারণার পরিচয় পাওয়া যায় এ লেখায়। সদ্য বিপ্লবের পর গণচীনের শাসনব্যবস্থা ও মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে গভীর আগ্রহ ও ঔৎসুক্যের পরিচয় আছে এ লেখায়। মুক্ত মন ও তীক্ষ্ণ অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে দেখা ঘটনার প্রাঞ্জল বর্ণনায় এ রচনা খুবই আকর্ষণীয়। চীন, রাশিয়া বা আমেরিকার মূল্যায়নে তাঁর বোধের স্বচ্ছতা ও সত্যনিষ্ঠা আমাদের মুগ্ধ করে। তরুণ বয়সেই যে তিনি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এক অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতায় রূপান্তরিত হচ্ছিলেন এ বই তাঁর উজ্জ্বল নিদর্শন। এ লেখার সঙ্গে প্রসঙ্গক্রমে নিজের দেশ ও মানুষের অবস্থার কথাও তিনি তীক্ষèভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ শক্তি ও গভীর উপলব্ধি তাঁর রচনাকে সমৃদ্ধ করেছে।’
আমার দেখা নয়া চীনে জেলজীবনের প্রসঙ্গ
জেল-জুলুমের পরও রাজনীতিতে আদর্শবাদিতা বজায় রেখেছিলেন সে সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর অভিব্যক্তি ‘আমি ভাবলাম, লোকটা অন্ধ। আমরা রাজনীতি করি, আমাদের লোভ মোহ দিয়া ভোলানো সোজা না। তাহলে পূর্ব বাংলার মুসলিম লীগওয়ালারা তা পারতো। মনে করে ভাবলাম, ‘জেলে দিয়া, মিথ্যা মামলার আসামি বানিয়ে, ইউনিভার্সিটি থেকে বহিষ্কৃত করে নানা প্রকার অত্যাচার করেও আমাদের মতের পরিবর্তন করা যায় নাই।’ দেখা যায়, হংকং-এ থেকে কম্যুনিস্ট বিরোধী হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ, চীনের অনেক বড় বড় লোক কম্যুনিস্ট জুজুর ভয়ে হংকং-এ আশ্রয় নিয়েছে। তবে আস্তে আস্তে তাদের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ছে। অনেকে আবার হুজুগে এসে বিপদে পড়েছে। এইভাবে, বহুলোক হংকংয়ে সামান্য জায়গায় এসে আশ্রয় নিয়েছে। যা হোক, ফেরার পথেও দুইদিন হংকংয়ে ছিলাম, তাই হংকং পর্ব শেষ করে নয়াচীনে ঢুকবো। (পৃ ২৭)
নিরাপত্তা আইনে নিজের জেল খাটার ঘটনা স্মরণ করেছেন চীনকে দেখার ঘটনা বর্ণনা করার সময় ‘আর হতভাগাদের ছেলেমেয়েরা কিছুদিন মহাজনের বাড়ি কাজ করে, কিছুদিন ভিক্ষা করে জীবন রক্ষা করে, তারপর একদিন গ্রাম ছেড়ে পেটের তাগিদে অন্য কোথাও চলে যায়। আর ফিরে আসে না। এই যাওয়াই শেষ যাওয়া হয়। বোধ হয়, প্রকৃতির কোলে চিরদিনের জন্য আশ্রয় নেয়। তাদের ছেলেমেয়েগুলি না খেয়ে থাকতে থাকতে একদিন ব্যারাম হয়ে মারা যায়। আমরা বলি অসুখ হয়ে মারা গেছে। কিন্তু না খেতে না খেতে যে ব্যারাম হয়, তারপর মারা যায়, একথা আমাদের দেশে বলে না। কারণ, সরকারের থেকে খবর নিলে জানা যায় যে, না খেয়ে মরে নাই, ব্যারাম হয়ে মারা গেছে। যদি কেউ না খেয়ে মরার খবর দেয় তবে তার কৈফিয়ত দিতে কাজ সারা হয়ে যায়। আর যদি কোনো খবরের কাগজে প্রকাশ পায়, তবে কাগজআলার কাগজটা দেশের নিরাপত্তার নামে বন্ধ করে দেওয়া হয়্ আর বেচারার আমার মতো নিরাপত্তা আইনে জেল খাটতে খাটতে জীবন শেষ হয়ে যায়।’ (পৃ ৯৩)
জেলে থাকার সময় সিপাহিদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক সম্পর্ক ছিল তার দৃষ্টান্ত রয়েছে এ গ্রন্থে তাহলেই গরিব কর্মচারীরা কোনোমতে বাঁচতে পারে। তাদের ছেলেমেয়েদের ফ্রি শিক্ষার বন্দোবস্ত করা উচিত এবং সাথে সাথে তাদের জন্য অল্প খরচে বাড়ির বন্দোবস্ত করে দেওয়া উচিত- যাতে তাদের বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ি ঠিক করতে না হয়। আমি যখন জেলে ছিলাম এক সিপাহি আমাকে বলেছিল যে, ‘৬০ টাকা বেতন, তার মধ্যে বাসা ভাড়া দিতে হয় ১৮ টাকা। কারণ যে সামান্য কয়েকটা সরকারি বাড়ি আছে তাহা অন্য সিপাহিদের দেওয়া হয়েছে। আমাকে দেওয়া হয় নাই। কারণ আমি বড় কর্তাদের দালালি করতে পারি নাই।আমি বললাম, তাদের যদি না দেওয়া হতো তাহলে তো তাদেরও আপনার মতো দশা হতো। তাই একই কথা। এটা সত্য কথা যে একদিনে হয় না, কিন্তু সুষ্ঠু কর্মপন্থা থাকা দরকার।’(পৃ ১০৩)
কয়েক বছর রাজবন্দি থাকার পর জেলের অভ্যন্তরে দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত মানুষদের দেখতে পেয়েছেন। আর পাকিস্তানি রাষ্ট্রযন্ত্রের দুর্নীতির ভয়ঙ্কও অবস্থা সম্পর্কে লিখেছেন ‘১৪ বৎসরে রাজনীতিতে আমার শিখবার ও দেখবার যথেষ্ট সুযোগ হয়েছে। পূর্বে শুনতাম, দারোগা পুলিশের মতো ঘুষ কেউ খায় না। তারপর শুনতাম, সিভিল সাপ্লাইয়ের মতো ঘুষ কেউ খায় না, তারপর শুনতাম কাস্টমস অফিসারদের মতো ঘুষ কেউ খায় না। আমি কয়েক বৎসর রাজবন্দি হিসেবে জেল খেটেছি, তাতে দেখেছি জেলখানার ঘুষের মতো বৈজ্ঞানিকভাবে ঘুষ বোধ হয় কোনো ডিপার্টমেন্টের কর্মচারীরা নিতে জানে না। কোনো দুর্নীতি দমন বিভাগের কর্মচারীর উপায় নাই যে সে ঘুষ ধরে! জেলখানা, পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, সিভিল সাপ্লাই ডিপার্টমেন্ট, কাস্টম্স, কোর্ট-কাচারি, সাব রেজিস্ট্রার অফিস, ইনকাম ট্যাক্স, কারো চেয়ে কেউ কম না, এই ধারণাই আমার শেষ পর্যন্ত হয়েছে। জাতির নৈতিক পরিবর্তন ছাড়া ও সুষ্ঠু কর্মপন্থা ছাড়া দেশ থেকে দুর্নীতি ও ঘুষ বন্ধ করা সম্ভব হবে না। এই দুর্নীতি কঠোরভাবে দমন করা দরকার। নিরাপত্তা আইন যদি ব্যবহার করতে হয় তবে এদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করলে বোধ হয় জনসাধারণ এই নিরাপত্তা আইনের কোনো সমালোচনা করতো না। সকলের চেয়ে দুঃখের কথা হলো, অনেক দুর্নীতিপরায়ণ নেতা দেশে আছে যারা শাসকগোষ্ঠীর সাথে হাত মিলাইয়া চোরাকারবার করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপায় করে। যখন তাদের বিরুদ্ধে কোনো সৎ কর্মচারী মামলা দায়ের করতে চায় তখনই বড় বড় মন্ত্রীরা এই সমস্ত কর্মচারীদের বদলি করে মামলা ধামাচাপা দেয়।’(পৃ ১০৪)
কারাগার
কারাগার আধুনিক সভ্যতায় বন্দিদের সংশোধন ও সুপ্রশিক্ষিত করে সভ্য সমাজের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন কারণে মানুষ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে। আইন অনুসারে শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি তাকে সংশোধন করে গড়ে তোলার দায়িত্ব কারা-বিভাগের। আমাদের এই অঞ্চলে কারাগার ব্যবস্থা চালু হয় ব্রিটিশ আমলে।
কারাগার-এর সংজ্ঞার্থ : কারা আইন ১৮৯৪ ১ম অধ্যায়ের ৩ ধারায় বলা হয়েছে কারাগার অর্থ কোনো জেলখানা বা স্থান যা স্থায়ী বা সাময়িকভাবে সরকারের সাধারণ বা বিশেষ আদেশে অথবা আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বন্দিদের আটক রাখার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এই উদ্দেশ্যে এর অংশস্বরূপ ব্যবহৃত সকল জমি ও স্থাপনাও অন্তর্ভুক্ত হবে। কিন্তু অন্তর্ভুক্ত হবে না : ক) কেবল পুলিশের হেফাজতে বন্দিদের আটকের জন্য কোনো স্থান। খ) কোনো স্থান, যা ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৫৪১ ধারার অধীনে সরকারের বিশেষ আদেশে স্থাপিত। গ) কোনো স্থান যা সরকারের সাধারণ বা বিশেষ আদেশে সাব-সিভিয়ারি জেল হিসেবে ঘোষিত হবে।
ভারতবর্ষে সম্রাট অশোকের (৩০৪ খ্রিষ্টপূর্ব-২৩২ খ্রিষ্টপূর্ব) সময়ে মৃত্যু দ-াদেশপ্রাপ্ত বন্দিদের তিন দিন একটা কুঠুরিতে বেঁধে রাখা হতো। মধ্যযুগে মুগল আমলে কেল্লাসমূহে ছোট আকারে কিছু কয়েদখানা ছিল, যা কর্তা ব্যক্তিদের মৌখিক হুকুমে নিয়ন্ত্রিত হতো। এ ধরনের কয়েদখানার অবস্থিতি ১৭৯৩ সাল থেকে জমিদারি ব্যবস্থাপনাতেও ছিল। তবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে কারা ব্যবস্থাপনা নতুন আঙ্গিকে বিস্তৃতি লাভ করে।
কারাগারের ইতিহাস
১৫৫২ সালে লন্ডনে St. Brigetos Well প্রাসাদটি প্রথম কারাগার হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৫৯৭ সালে ব্রিটিশ সরকার এ ধরনের আরো কয়েকটি কারাগার প্রতিষ্ঠা করে এবং ১৬০০ সালে লন্ডনের প্রত্যেক কাউন্টিতে কারাগার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে কারাগারগুলির বন্দিদের দৈহিক পরিশ্রম করতে হতো। আঠার শতকে ইংল্যান্ডে Goal বা জেলখানা মৃত্যুকুঠুরি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রায় আলো বাতাসহীন ঘরে নারী-পুরুষ সবাইকে একত্রে রাখা হতো। ফলে অনেক মহিলা সে সময়ে নিগৃহীত হওয়ায় এ ব্যবস্থার পরিবর্তন করা হয়। সমাজ-সংস্কারক জন হাওয়ার্ড ১৭৭৩ সাল থেকে ১৭৯০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় কারাগারসমূহ পরিদর্শন করেন। তিনি বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে অনেক লেখালেখি করেন। ফলে কারা ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু পরিবর্তন সূচিত হয়। ১৮১২ সালে ইংল্যান্ডে Millbank নামে প্রথম জাতীয় কারাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র ১৭৯০ সালে ফিলাডেলফিয়া অঙ্গরাজ্যে Walnut Street Jail নামে প্রথম রাষ্ট্রীয় কারাগার নির্মাণ করে। ১৭৯৬ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে এবং ১৮২৯ সালে ম্যারিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে কারাগার স্থাপিত হয়। পরবর্তীকালে সেখানে বন্দিদের জন্য স্কুল তৈরি করা হয়। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে স্থাপিত কারাগারে ১৮৩২ সালে বন্দিদের ভালো আচরণের জন্য মাসে ২ দিন জেল মওকুফ ও খারাপ আচরণের জন্য কয়েক ধরনের শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা ছিল। ভারমোন্ট কারাগারে ১৮৩১ সালে প্রথম আত্মীয়-স্বজনদের চিঠি লেখার সুযোগ দেয়া হয়।(সূত্র, এ. এস. এম জহুরুল ইসলাম, বাংলাপিডিয়া, ২০১৪)
ফরাসি লেখক-বুদ্ধিজীবী মিশেল ফুকোর (১৯২৬-১৯৮৪) শৃঙ্খলা ও শাস্তি : জেলখানার জন্ম (১৯৭৫) বইটিতে প্রকাশ্য গণশাস্তি থেকে কারাগারের শৃঙ্খলামূলক শাস্তির উদ্ভব ও বিবর্তনের নতুন বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন। তাঁর গ্রন্থে কারাগার ব্যবস্থায় ক্ষমতা চর্চা তথা কয়েদিদের ওপর ক্ষমতা বিস্তারের অনুপুঙ্খ আলোচনা রয়েছে।আসলে হাজতি ও কয়েদি হিসেবে জেলখানায় বন্দিরা আসে। ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে এদেরকে সিভিল বন্দি, বিচারাধীন বন্দি, মহিলা বন্দি, ২১ বছর নিম্ন বয়সের পুরুষ বন্দি, বয়ঃসন্ধিতে উপনীত না হওয়া পুরুষ বন্দি এবং অন্যান্য সাজাপ্রাপ্ত পুরুষ বন্দি হিসেবে ভাগ করা হয়। যে সব বন্দিদের বিচারকার্য শেষ হয়নি বা নির্ধারিত তারিখে যাদের আদালতের সম্মুখে হাজির করা হয় তারা ‘হাজতি বন্দি’ হিসেবে পরিচিত। আর বিচার শেষে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে যারা কারাগারে আটক থাকে তারা কয়েদি বন্দি। শারীরিক যোগ্যতা ও পূর্ব অভিজ্ঞতা বিবেচনায় কয়েদিরা বিভিন্ন কাজ করে। এসব কাজের মধ্যে ওয়ার্ড পরিচালনা, বন্দিদের পাহারা, কারা হাসপাতালের রাইটার, পত্র লেখক, রান্না, পানি সরবরাহ, ধোপা, বই বাঁধাই, নাপিত, সুইপার, উৎপাদন বিভাগের বিভিন্ন ট্রেড অর্থাৎ কাঠ, বেত, বাঁশ, তাঁত, মোড়া, সেলাই, কামার ইত্যাদি। হাজতি বন্দিদের সাধারণত কোনো কাজ করানো হয় না। বন্দিদের নামের আদ্যাক্ষরের ক্রমানুসারে বয়স ভেদে তাদের পৃথক ওয়ার্ডে রাখা হয়। কারাবিধি মতে একজন বন্দির ঘুমানোর জন্য ৩৬ বর্গফুট জায়গা আবশ্যক। কিন্তু স্থানাভাবে পৃথিবীর অনেক কারাগারের বন্দিগণ পালাক্রমে ঘুমায়।
জেলখানার বন্দিদের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ৩ বার খাবার দেয়া হয়। সকালের নাস্তায় গুড় ও রুটি, দুপুর ও রাতের খাবারে ভাতের সাথে মাংস বা মাছ, সবজি বা ডাল। অপেক্ষাকৃত মর্যাদাসম্পন্ন অর্থাৎ ১ম ও ২য় শ্রেণির বন্দিরা সাধারণ শ্রেণির বন্দি থেকে মানসম্পন্ন খাবার পেয়ে থাকে। তবে জেল হাসপাতালের রোগীদের রোগের ধরন অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হয়। বন্দিদের বিনোদনের জন্য প্রতিটি জেলখানায় ইনডোর ও আউটডোর খেলাধুলার ব্যবস্থা আছে এবং প্রতিটি কারাগারের বন্দি ব্যারাকে টেলিভিশন দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। জেলখানায় বন্দিদের চিকিৎসার জন্য প্রেষণে ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, জেল নার্স দায়িত্ব পালন করে থাকে। প্রতিটি জেলখানায় বন্দিদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল রয়েছে। সেখানে বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি জেলখানায় লাইব্রেরি রয়েছে। কারা প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ নিজেদের বিভিন্ন অভিযোগ বা অসুবিধার কথা দরবার পদ্ধতির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের নিকট তুলে ধরেন।
আদিতে মানুষকে শাস্তি প্রদান ছিল কারাগার সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য, বর্তমানে কারাগার শাস্তি প্রদান ছাড়াও অপরাধীদের সংশোধনাগার হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। বন্দিদের পুনর্বাসন ও সমাজে প্রতিষ্ঠা পাবার লক্ষে প্রতিটি জেলখানায় প্রেষণামূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু আছে। এ প্রশিক্ষণের আওতায় মহিলা বন্দিদের কাঁথা সেলাই, কাগজের প্যাকেট, খাম তৈরি, বাজারের ব্যাগ তৈরি, টেইলারিং ও সূচিশৈলি শিক্ষা দেয়া হয়। পুরুষ বন্দিরা ব্যানার বা সাইনবোর্ড লিখন, মৎস্য চাষ, কাগজের প্যাকেট তৈরি, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি মেরামত বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়। নিরক্ষর বন্দিদের গণশিক্ষার মাধ্যমে অক্ষর জ্ঞান এবং ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়। কারা প্রশিক্ষক ও শিক্ষিত বন্দিদের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বন্দিদের মাঝে এসব কার্যক্রম চালু আছে।
বিভিন্ন আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের দণ্ড কার্যকর জেলখানায় সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশে ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদ- কার্যকরের রেওয়াজ চালু আছে। দেশের প্রতিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং পুরাতন জেলাগুলির জেলখানাতেও ফাঁসির মঞ্চ আছে। উনিশ শতক পর্যন্ত অপরাধীকে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলানো হতো। কিন্তু পরবর্তীতে ফাঁসি কার্যকর করার প্রক্রিয়া কারাগারের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেসব রাজ্যে ‘বন্দুক সংস্কৃতি’ প্রচলিত ছিল সে সব রাজ্যে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৭৬ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী ইনজেকশন প্রয়োগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে। জেলখানায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় কারারক্ষীগণ দায়িত্ব পালন করে থাকে। এ উপমহাদেশে ১৭৮৮ সালে খাকি রঙয়ের হাফ শার্ট, হাফ প্যান্ট পরে কোমরে চামড়ার বেল্ট, পায়ে পট্টি পেঁচিয়ে হাতে বল্লম ও মাথায় পাগড়ি দিয়ে কারারক্ষীগণ দায়িত্ব পালন করত। পরবর্তীকালে কালো ক্যাপ, ফুল হাতা খাকি শার্ট, ফুল প্যান্ট, ওয়েব বেল্ট, বুট পরে ৩০৩ রাইফেল নিয়ে কারারক্ষীরা দায়িত্ব পালন করতে থাকে। বর্তমানে ডিপ-গ্রিন রঙয়ের পোশাক পরে দায়িত্ব পালন করছে।
‘পাগলা ঘণ্টা’ শব্দটি জেলখানায় বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। প্রতিটি জেলখানার প্রধান ফটকে (গেট) এ ঘণ্টা বসানো থাকে। বিশেষ পরিস্থিতিতে এ ঘণ্টা বাজানো হয়। কোনো বন্দি পলায়ন করলে ও কোনো বিদ্রোহ দেখা দিলে সাধারণত এ ঘণ্টা বাজিয়ে সকলকে সতর্ক করে দেয়া হয়। তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
বঙ্গবন্ধুর কারাগারসমূহ
১৯৩৮ সালে নিজ মহকুমা গোপালগঞ্জে হাজতবাস শুরু হয় এরপর বঙ্গবন্ধুকে কারাবাস করতে হয়েছে ফরিদপুর ও খুলনা জেলে। তবে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাঁকে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় রাজবন্দি হিসেবে নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। ১৯৬৬ সালে যশোর, রংপুর, সিলেট এবং ময়মনসিংহে ছয় দফার পক্ষে বক্তৃতা দিয়ে গ্রেফতার হলেও জামিনে ছাড়া পান তিনি। এজন্য ওইসব এলাকার কারাগারে তাঁকে থাকতে হয়নি। উল্লেখ্য, চোখ ও হার্টের চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধুকে ফরিদপুর জেল থেকে ঢাকা জেলে পাঠানো হয়েছিল। জেলে অন্তরীণ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু ঢাকা মেডিকেল কলেজের দোতলায় কেবিন ছিলেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার : ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার বাংলাদেশের প্রথম কারাগার। ১৭৮৮ সালে স্থাপিত হয় এটি। নওয়াব সুবেদার ইব্রাহিম খাঁর নির্মিত কেল্লাটি ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার(পুরানো) হিসেবে পরিচিত। একসময় এ কেল্লার মধ্যে বিচারালয়, টাকশাল, প্রমোদখানা ও শাহী মহল ছিল। ১৭৬৫ সালে লেফটেন্যান্ট সুইলটন আসার পর নায়েব আজিমকে সরিয়ে দেয়া হয়। ১৭৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন আমলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দশটি ওয়ার্ড ছিল। তখন সেখানে গড়ে পাঁচশত থেকে সাড়ে পাঁচশত বন্দি অবস্থান করত। একটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড নির্মাণের মাধ্যমে ১৭৮৮ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যাত্রা শুরু।
পুরানো কারাগারের বর্তমান স্থাপনার মধ্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রয়েছে। যেমন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘদিন বন্দি ছিলেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দেওয়ানি সেলে। তাঁর সে স্মৃতি ধরে রাখতে দেওয়ানি সেলকে ‘বঙ্গবন্ধু কারা স্মৃতি জাদুঘরে’ রূপান্তর করা হয়েছে। এই জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহার্য জিনিসপত্র সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর কারা জীবনের ইতিহাস জানাতে এখানে একটি লাইব্রেরি গড়ে তোলা হয়েছে। সেলের সামনে জাদুঘর প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লাগানো একটি কামিনী ফুলগাছ ও একটি সফেদাগাছ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের যে সেলে নৃশংসভাবে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়, সেই সেলও সংরক্ষণ করা হয়েছে। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার সেল, ফাঁসির মঞ্চ, আমদানি সেল, পুকুরসহ আরো বেশকিছু স্থাপনা সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অবশ্য পুরাতন ভবন ও স্থাপনা ছেড়ে বন্দিদের নিয়ে কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে যাত্রা শুরু করে ১০ এপ্রিল ২০১৬ সালে।
রাজবন্দিদের আটকে রাখার জন্য ১৮১৮ সালে বেঙ্গলবিধি জারি হয়। ১৮৩৬ সালে বিভিন্ন জেলায় এবং মহকুমা সদরে কারাগার নির্মাণ করা হয়। বাংলাদেশের ঢাকা, রাজশাহী, যশোর ও কুমিল্লায় নতুনভাবে কারাগার সে সময়ে নির্মিত। ১৮৬৪ সালে Code of Rules চালুর মাধ্যমে সকল কারাগার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে এক সমন্বিত কার্যক্রম প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৭ সালের এপ্রিলে ভারতের বাঁকুড়ায় কিশোরদের জন্য প্রথম Borstal Institute স্থাপিত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯২৯ সালে অবিভক্ত বাংলায় কলকাতার প্রেসিডেন্সি, আলীপুর, মেদিনীপুর, ঢাকা ও রাজশাহীতে অবস্থিত কারাগারগুলিকে কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে ঘোষিত হয়। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর ৪টি কেন্দ্রীয় কারাগার, ১৩টি জেলা কারাগার এবং ৪৩টি উপ-কারাগার নিয়ে বাংলাদেশ কারাগার-এর যাত্রা শুরু।
বাংলাদেশে তিন ধরনের কারাগার রয়েছে কেন্দ্রীয় কারাগার, জেলা কারাগার ও বিশেষ কারাগার। ১৮৪০ সালে রাজশাহী কারাগার প্রতিষ্ঠিত হয়, যা অবিভক্ত বাংলার প্রাচীনতম কারাগারসমূহের একটি। বেঙ্গল জেল কোড-এর ২য় অধ্যায়ের ৩ নং ধারায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সাথে এ কারাগারের নামও উল্লেখ আছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা অভ্যন্তরে পাকিস্তান আমল ও ব্রিটিশ আমলের কিছু ঐতিহাসিক নির্দশন বিদ্যমান। ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর ৪ টি কেন্দ্রীয় কারাগার, ১৩টি জেলা কারাগার এবং ৪৩ টি উপ-কারাগার নিয়ে বাংলাদেশ জেল (বিডিজে)-এর যাত্রা শুরু। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে বন্দি সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে উপ-কারাগারগুলিকে জেলা কারাগারে রূপান্তর করা হয়৷ বর্তমানে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং ৫৫টি জেলা কারাগার নিয়ে বাংলাদেশ জেলের কার্যক্রম চলমান।
বাংলাদেশে কারাগারের ভিশন ও মিশন : ভিশন রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ। মিশন বন্দিদের নিরাপদ আটক নিশ্চিত করা। কারাগারের কঠোর নিরাপত্তা ও বন্দিদের মাঝে শৃঙ্খলা বজায় রাখা। বন্দিদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা। যথাযথভাবে তাদের বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা এবং আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিশ্চিত করা এবং একজন সুনাগরিক হিসেবে সমাজে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
কেবল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার নয় বঙ্গবন্ধুকে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, খুলনা কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। যেমন, ১৪ মার্চ ১৯৫১ সালে ফরিদপুর পুলিশ সুপার (SDPO) গোপালগঞ্জ জেলা Dacca and Supdt, Police DIB Khulna-কে লেখা রেডিওগ্রাম দ্বারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রহণ ও গ্রেফতার করার কথা জানানো হয়। জেল থেকে লেখা বঙ্গবন্ধুর অপ্রকাশিত পত্রাবলিতেও ১৯৪৯ সালে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ সাবজেলে স্থানান্তর এবং সেখানে তাঁর মতো রাজবন্দির স্থান সংকুলান না হওয়ায় ফরিদপুর জেলা কারাগারে অবস্থানের তথ্য পাওয়া যায়।
ফরিদপুর কারাগার : ফরিদপুর জেলা কারাগারের স্থাপনকাল ১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দ। ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন চলাকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন এবং তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রাখা হয়। সেখানে অবস্থানকালীন তিনি অনশন শুরু করলে ১৮ই ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে তাঁকে ফরিদপুর জেলা কারাগারের স্থানান্তর করা হয়। ফরিদপুর জেলা কারাগারে অবস্থানকালে স্বাস্থ্যের অবনতি হলে ২৬শে ফেব্রুয়ারি এ কারাগার থেকে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৫১ সালেও তাঁকে ফরিদপুর জেলে কয়েকমাস আটক থাকতে হয়। তবে ১৯৪৯ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গোপালগঞ্জ কোর্ট থেকে জামিন দেওয়া হয়। জামিন দেওয়ার পর পুনরায় নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন। তল্লাশি করার কারণে ফরিদপুর জেলে বঙ্গবন্ধু রেগে গিয়েছিলেন। ফরিদপুর জেলে এসে বাবু চন্দ্র ঘোষ ও ফণি মজুমদারের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দেখা হয়।
গোপালগঞ্জ কারাগার : ১৯২৫ সালে গোপালগঞ্জে সিভিল কোর্ট চালু হয়। ক্ষুদ্র পরিসরে কারাগারও সেসময় গড়ে উঠেছে বলে মনে করা যেতে পারে। মধুমতি নদীর কোল ঘেঁষে বিকশিত আজকের গোপালগঞ্জ শহর। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে গোপালগঞ্জ ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমা ও থানাধীন ছিল। ১৮৭০ সালে গোপালগঞ্জ থানা স্থাপিত হয়। ১৮৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এর সীমানা নির্ধারিত হয়। ১৯০৯ সালে সদর মহকুমা থেকে কাশিয়ানী ও মুকসুদপুর থানা এবং মাদারিপুর থেকে গোপালগঞ্জ ও কোটালীপাড়া থানা নিয়ে গোপালগঞ্জ মহকুমা স্থাপিত। ১৯২১ সালে গোপালগঞ্জ শহরের মানে উন্নীত হয়। আদমশুমারি অনুযায়ী তখন গোপালগঞ্জ শহরের লোকসংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪ শত ৭৮ জন মাত্র। ১৯৩৬ সালে মুকসুদপুর থানা বিভক্ত হয়ে কাশিয়ানী থানা গঠিত হয়। গোপালগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয় স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি। ১৯৭৪ সালে গোপালগঞ্জ সদর থানাকে ভেঙে টুঙ্গিপাড়া নামক একটি থানা গঠন করা হয়। গোপালগঞ্জ মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয় ১৯৮৪ সালে। ১৯৩৮ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে ৭দিনের জেল খাটতে হয় এই গোপালগঞ্জেই। ১৯৪৪ সালের দিকেও তাঁকে কয়েকদিন জেলে থাকতে হয়েছে। তবে ১৯৫১ সালে তিনমাসের কারাদণ্ডে প্রথমে গোপালগঞ্জের থানা হাজতে রাখা হয় তাঁকে। পরে খুলনা জেলে স্থানান্তর করা হয়।
খুলনা জেলা কারাগার : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ডাকাতি ও খুনের মামলার আসামি হিসেবে খুলনা জেলে রাখা হয়। ১৯১২ সালে ভৈরব নদের তীর ঘেষে ৬.৩০ একর জমির উপর খুলনা জেলা কারাগারটি স্থাপিত হয়। শুরুতে মাত্র দুটি পুরুষ ওয়ার্ড ও একটি মহিলা ওয়ার্ড নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয় এবং সময়ের বিবর্তনে পর্যায়ক্রমে এটি সম্প্রসারিত হয়। মামলার জন্য গোপালগঞ্জে যাতায়াত সুবিধার্থে ১৯৫১ সালে খুলনা জেলে বঙ্গবন্ধুকে রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়। যাতায়াতের সুবিধার্থে বঙ্গবন্ধুকে ফরিদপুর জেল থেকে খুলনা জেলে শিফট করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে খুলনা জেলে গিয়েছিলেন। খুলনা জেলের সেলগুলোর সামনে ১৪ ফুট দেয়ালের কথা বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছেন। বঙ্গবন্ধু খুলনা জেল কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন ‘অর্ডার যখন আসে নাই, আমাকে ছেড়ে দেন। যদি আমাকে বন্দি রাখেন, তবে আমি বেআইনিভাবে আটক রাখার জন্য মামলা দায়ের করে দিব।’
পাকিস্তানের কারাগার : বঙ্গবন্ধুকে সাড়ে নয় মাস পাকিস্তানের কারাগারের অন্ধকার ঘরে বন্দি রাখা হয়েছিল। লায়ালপুর (বর্তমানে ফয়সালাবাদ) জেলের অপরিসর একটি কুঠুরিতে রাখা হয়েছিলো। তাঁর জগৎ বলতে সেখানে ছিল চার দেওয়াল, একটি জানালা ও একটি উঁচু বিছানা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর তাঁকে সরিয়ে নেয়া হয় কারাগার থেকে দূরে আরো দুর্গম জায়গায়। ২৪ ডিসেম্বর একটি হেলিকপ্টারে বঙ্গবন্ধুকে রাওয়ালপিন্ডির অদূরে শিহালা পুলিশ একাডেমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি শাসক।
একাত্তরে পাকিস্তানের কারাভ্যন্তরে বন্দি ছিলেন ঠিকই; কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তখন জানতেন না তিনি কোন শহরে আছেন। কেবল জানতেন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী তাঁকে বন্দি করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের জেলে রেখেছে। কারাজগৎ জগৎ সম্পর্কে তাঁর ভালোভাবেই ধারণা ছিল, কেননা আগেও তিনি কারাবন্দি ছিলেন। তিনি কারাবাস সম্পর্কে প্রায়শই বলতেন যে, প্রথম দফার স্বল্পকালের কারাবাস ছাড়া তাঁকে কারাগারে বরাবর নিঃসঙ্গ কুঠুরিতে আটক রাখা হয়েছিল। দৈহিকভাবে নির্যাতন করা না হলেও নানাভাবে মানসিক হয়রানি করা হয় তাঁকে। কারা-কর্তৃপক্ষ প্রতি সপ্তাহে বন্দির আচার-আচরণ সম্পর্কে ইসলামাবাদে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাতো। এই রিপোর্টে উল্লেখ থাকতো তিনি কি খাবার খেয়েছেন, তিনি কেমন ঘুমিয়েছেন, সেলের মধ্যে এক দেয়াল থেকে অন্য দেয়াল অবধি পায়চারি করেছেন কি করেননি। বন্দির কথাবার্তা সম্পর্কে জানতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খুব উৎসুক ছিলেন। অবশ্য বঙ্গবন্ধু সেলে প্রবেশকারী গার্ডদের সালামের প্রতি-উত্তর দেওয়া ছাড়া সবসময় নীরবই থাকতেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে দীর্ঘকাল নিঃসঙ্গ এবং বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ না থাকলেও বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে তাঁর আত্মিক যোগাযোগ ছিল- ‘জনগণের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক কখনো ছিন্ন হয়নি, এক মুহূর্তের জন্যও নয়।…যখন বিপদ আমাকে আচ্ছন্ন করতো, আমি বুঝতে পারতাম আমার জনগণ তীব্র যন্ত্রণা ভোগ করছে। যখন আমার মনের দিগন্তে দেখা দিতো চকিত আশার ঝলকানি, আমি জানতাম তারা সেই দুর্ভোগ অতিক্রম করছে।… একে বলতে পারেন প্রজ্ঞা, টেলিপ্যাথি, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কিংবা অন্য যা খুশি তাই। কিংবা সম্ভবত এটা এক ধরনের ঐশী প্রেরণা; আমি যেটা জানি তা হলো আমার মন বলছিল বিজয় আমাদের হবেই। এত বিপুল রক্তদান বৃথা যেতে পারে না। রক্ত সেই অতীব জরুরি তরল, বাঁচিয়ে রাখে জীবনকে এবং এমনি রক্তদান যে আদর্শের জন্য, সেই আদর্শকেও তা বাঁচিয়ে রাখবে।’ বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর পরিবার সম্পর্কে নানা পরস্পরবিরোধী খবর ছড়ানো হতো। বন্দি থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ নিরূপ :
‘সেই সময়ে আমার সেলে যাঁরাই এসেছিলেন তাঁদেরই দেখাতো অনেক কম আস্থাবান ও সুস্থির। আটককারীর ঔদ্ধত্য তাঁদের মধ্যে তেমন প্রকাশ পেতো না। বরং কোনো অজানা দুশ্চিন্তা যেন তাঁদের পীড়িত করতো।…
… এটা আমার কাছে বেশ তাৎপর্যময় মনে হয়েছিল। তাঁদের নিরাপত্তা বিধানে কাজে লাগতে পারে এমন কোনো বিবৃতি আমার কাছ থেকে আদায়ের জন্য উপর্যুপরি প্রয়াস থেকে এর সমর্থন মিলেছিলো। আমি অনুভব করেছিলাম, তাদের নৈরাশ্যজনক অবস্থা সম্পর্কে ক্রমোপলব্ধির এটা একটা ইঙ্গিত। এর ফলে আমার মধ্যে প্রত্যয়ী মনোভাব জেগেছিল যে, আমার দেশে তাদের দিন ভালো যাচ্ছে না। আমি তাদের কথা মান্য করতে অস্বীকার করি। আমি কোনো কিছু বলতে, লিখতে বা সই করতে অস্বীকার করি।’
কারা-সাহিত্য
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিংবা সাহিত্যিকরা তাঁদের ব্যক্তিগত কারা-অভিজ্ঞতাকে বিভিন্ন ঘটনা ও চরিত্রের মধ্য দিয়ে রূপায়ণ করেছেন। কখনো তা লেখকের সমকালীন ইতিহাস ও যুগকে আলোকপাত করে স্মৃতিকথা কিংবা গদ্য রচনায় উপস্থাপিত; কখনো বা বাস্তবতা-নির্ভর কথাসাহিত্যের অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতার কারণে একই রকমের কারাজগৎ বৈচিত্র্য ও অভিনবত্বে নানা বর্ণ ও প্রকৃতিতে স্বতন্ত্র মাত্রা লাভ করেছে। আসলে কারা-সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যের একটি স্বতন্ত্র রূপ হিসেবে স্বীকৃত। লেখক সাধারণ কয়েদির মতো জেলহাজতে বন্দি কিংবা গৃহে অন্তরীণ সে সময় তিনি যে দিনপঞ্জি, স্মৃতিকথা কিংবা সৃষ্টিশীল সাহিত্য রচনা করেছেন তাকে কারা-সাহিত্য বলা হয়। আবার জেলের বাইরে থেকে যে কোনো মুক্ত ব্যক্তিও কারাভ্যন্তরের ঘটনাবলি নিয়ে কারা-সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ব্যক্তির ‘কারাজীবনের অন্তরালের ঘটনা, জেলখানার রীতিনীতি, শাসনপ্রণালি, পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং সেখানকার অন্যান্য বন্দি ও কর্মচারীবৃন্দ’-এর সবকিছু উন্মোচিত হওয়া আবশ্যক। বলা যায় কারা-সাহিত্য কারাগারের ভেতরের চিত্র তুলে ধরে। তবে বন্দিশালা সবসময়ই লেখকের জন্য একটি সংকীর্ণ পরিসর। তাঁর স্বাধীনতা, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ও সমঝোতার সুযোগ সেখানে সংকুচিত। অবশ্য অবারিত তাঁর কল্পনার আঙিনা। অনেক লেখককে পাওয়া যায় যাঁরা বন্দি হওয়ার পূর্বেই লেখনি ধারণ করেছেন। বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলাম এঁদের অন্যতম। তবে তাঁর রাজবন্দীর জবানবন্দী ১৯২৩ সালের ৭ই জানুয়ারি কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে বসে লেখা। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ভারতে নজরুলের মতো অসংখ্য কারাবন্দি তাঁদের জীবনাভিজ্ঞতা লিখে গেছেন।
কেউ কেউ বন্দি জীবনের অভিজ্ঞতায় নির্যাতনের কাহিনি লিপিবদ্ধ করেছেন। আবার স্বাধীন দেশেও বন্দিত্বের যন্ত্রণার কথা লেখা হয়েছে। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী (২০১২), কারাগারের রোজনামচা (২০১৭) ও আমার দেখা নয়াচীন (২০২০) কারা-সাহিত্যের অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রথম গ্রন্থটি তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। দ্বিতীয় এবং তৃতীয়টিও কারাবাসের সময় লিখিত। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার ও বন্দি অবস্থায় করাচী নিয়ে যাবার প্রসঙ্গে এস. এ. করিম উল্লেখ করেছেন ‘করাচী পৌঁছানোর পর বঙ্গবন্ধুকে লায়ালপুর বর্তমানে পাঞ্জাবের ফয়সালাবাদ কারাগারে নেওয়া হয়। তাঁকে একটি অতি ক্ষুদ্র সেলে রাখা হয় যেখান থেকে লোহার শিক দ্বারা বেষ্টিত ছোট্ট ফাঁকা জায়গা থেকে এই বিশ্বজগৎ প্রায় আবছা। প্রচণ্ড গরম অথচ কোনো বৈদ্যুতিক পাখা ছিলো না পরবর্তী সময়ে একটি পুরোনো বৈদ্যুতিক পাখা লাগানো হলো যা মূলত ঘরের গরমকে আরও ছড়িয়ে দেবার জন্যই। এছাড়াও আরও নানা রকমের অত্যাচার ছিলো সেখানে। বঙ্গবন্ধু এসব তোয়াক্কা করেননি, তবে বেদনাবোধ করেছেন বাংলাদেশের জন্য যে বাংলাদেশটি তখন জন্ম নেবার জন্যে লড়ছে।’ কারা-সাহিত্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো ক) কারাসাহিত্যে সমকালীন দেশ ও কালের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। খ) সমাজের অপরাধী জনগোষ্ঠী কারাজগতের জীবন্ত অংশ তেমনি জেলপ্রশাসনের দুর্নীতি ও অত্যাচারী প্রশাসনও তার অঙ্গ। গ) কারাকাহিনিতে রাজনৈতিক চিন্তার বিবর্তনের ইতিহাস নেই; আছে রূপান্তর।
ভারতের সন্ত্রাসবাদী স্বাধীনতাকামীদের আত্ম-উপলব্ধি, আত্মজিজ্ঞাসার প্রকাশ দেখা যায় অনেক রচনায়। ঘ) ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবীদের অমানবিক নির্যাতন করা হতো। সিপাইরা প্রতিনিয়ত রাজবন্দিদের চরমতম অত্যাচারের জাল বিস্তার করত। ঙ) কারা গ্রন্থগুলি যে কোনো দেশের এবং কালের বিপ্লব আন্দোলনে এবং বিপ্লবী প্রেরণার ক্ষেত্রে স্থায়ী উপাদান হিসেবে ভাস্বর। চ) পৃথিবীতে যতদিন কারাগার এবং দ-ব্যবস্থা বর্তমান থাকবে ততদিনই কারাগারের অসামাজিক মানুষগুলিকে কেন্দ্র করে তাদের নিঃসঙ্গতা, একাকিত্ব, ইন্দ্রিয় পীড়ন এবং বিভীষিকাময় মানসিক অবস্থা সাহিত্যের উপাদান হয়ে উঠবে। ছ) পাশবিকতা ও বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রাণের মৃত্যুঞ্জয়ী কণ্ঠ ধ্বনিত হয়েছে কোনো কোনো কারা-সাহিত্যে। জ) পৃথিবীর কোনো কোনো কারারুদ্ধ বিদগ্ধ সাহিত্যিক রাজা বা সরকারের কাছে মার্জনা চেয়ে চিঠি লিখেছিলেন যা ছিল দাসত্ব ও চাটুকারিতার সামিল এবং আত্মবিক্রিত মনোভাবের পরিচায়ক। ঝ) কারা-সাহিত্যে সমাজবিশ্লিষ্ট মানুষের নৈতিকতা অনেক গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে।
উপসংহার
কারাসাহিত্যের বৈশিষ্ট্যানুযায়ী এবং অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ও আমার দেখা নয়া চীন- এই তিনটি গ্রন্থ পর্যালোচনার পর আমরা বলতে পারি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারা-কাহিনিতে অবরুদ্ধ কারাপ্রাচীরে পিষ্ট মানবতা, কয়েদি জীবনের ব্যথা-বেদনার সঙ্গে তাদের সংকীর্ণতা, দলবাজি ও রাজনৈতিক মতান্তরে সৃষ্ট কলহ, শাসকদের স্বার্থবুদ্ধি ও আদর্শচ্যুতি; সর্বোপরি রাজবন্দির পরিবার ও সন্তানদের জন্য মর্মবেদনা প্রাধান্য পেয়েছে। সর্বোপরি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম-ইতিহাস উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর ৩০৫৩ দিনের কারাজীবনের বিবরণ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের ইতিহাসের কথাই বলবে।
লেখক : ইউজিসি পোস্ট ডক ফেলো, বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
Discussion about this post