কোন বিষয়টা দিয়ে তামিম ইকবালকে নিয়ে লেখা শুরু করবো?
লর্ডসের সেই ঐতিহাসিক সেঞ্চুরি, নাকি এশিয়া কাপে চার ফিফটির পর চার আঙুল দেখিয়ে উদযাপন? পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি, নাকি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক হাতে ঐ বীরত্বপূর্ণ ব্যাটিং?
আসলে তামিমের বর্ণিল ক্যারিয়ারে এত রঙ, বুঝতে পারছিলাম না কোন বিষয়টা দিয়ে লেখা শুরু করবো। যাই হোক, যে বিষয়টা দিয়ে ক্রিকেটবিশ্ব তামিমকে চিনেছে, সেটা দিয়েই শুরু করি।
‘সতেরো বছর বয়স্ক এই তরুণের উচিত তার প্রতিপক্ষের অগ্রজ বোলারদের সম্মান দেওয়া।’
উক্তিটি ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপের, ম্যাচটা ছিল ২০০৭ এর ১৭ মার্চ, ভারতের বিপক্ষে। জহির খান, মুনাফ প্যাটেলদের মতো বড় বড় নামগুলোকে পাত্তাই দিচ্ছিলেন না তামিম। দুর্দান্ত সব কাভার ড্রাইভ দেখে মনেই হচ্ছিল না মাত্র সতেরোটি বসন্ত আগে পৃথিবীর আলো দেখেছেন এই তরুণ। ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে লং অনের ওপর দিয়ে মারা ছক্কা দেখে কে বলবে মাত্র দুটো ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের উদ্দেশ্যে বিমানে উঠেছেন এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান! ৫৩ বলে ৫১ রানের ঐ ঝকঝকে ইনিংস শুধু বিশ্বমঞ্চে ভারতের সবচেয়ে তারকাখচিত দলের বিপক্ষে ‘পুঁচকে’ বাংলাদেশের জয়ের মন্ত্রই উচ্চারণ করেনি, তরুণ ভয়ডরহীন এক ওপেনারের আগমনীবার্তাও ধ্বনিত করেছিল। চোখধাঁধানো কাভার ড্রাইভ, আর ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে মনোমুগ্ধকর শট খেলার সক্ষমতার কারণে তামিমের ব্যাটে আগামীর বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ।
কিন্তু হায়, কে জানতো, তামিম ইকবালের ভাণ্ডারে শট আছে ঐ দুটোই! অফ স্ট্যাম্পের বাইরে বল পেলে কাভার ড্রাইভ, আর সুবিধা করতে না পারলে ডাউন দ্য উইকেটে যাওয়া, এর বাইরে কোন শটই ভালো পারতেন না তামিম। বিশেষ করে লেগ স্ট্যাম্পের ওপর করা বলগুলোতে তামিমের দুর্বলতা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রতিপক্ষের বোলাররাও তামিমের এই দুর্বলতা ধরে ফেললেন সহজেই, ঐ বিশ্বকাপের পরের দিকের ম্যাচগুলোতে তাই খুঁজে পাওয়া গেল না প্রথম ম্যাচের বিধ্বংসী তামিমকে। নিজের দুর্বলতা বুঝতে পারলেন তামিমও, অনুশীলনে এই বিষয়টিতে তাই বাড়তি মনোযোগ দিলেন। ‘দুর্বলতার জায়গা শক্তির জায়গায় রূপান্তরিত হওয়া পর্যন্ত’ অনুশীলন করতে লাগলেন। দিনের পর দিন অনুশীলন করে গেছেন, কোচ জেমি সিডন্সও এই সময়ে খুব সাহায্য করেছিলেন তামিমকে। একের পর এক বল এসে আঘাত করেছে শরীরে, বলের আঘাতে কালো কালো ছোপ পড়ে গেছে পাঁজরে, তবুও তামিমের লড়াই থামেনি। দাঁতে দাঁত চেপে অনুশীলন করে গেছেন তামিম, প্রতিপক্ষের বোলারদের ছোঁড়া গোলার জবাব দিতে হবে না!
এই জবাব দেওয়ার বিষয়টা তামিম খুব ভালোভাবে করেছিলেন ২০১০ সালে। তাও একটি নয়, দুটো ক্ষেত্রে। ঐ বছরে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ইংল্যান্ড, চট্টগ্রাম টেস্টে ইংরেজ বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে ৮৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তামিম। ফিল্ডিংয়ে থাকা কেভিন পিটারসেন সেই সময়ে টিটকিরি দিয়ে বলেছিলেন, ‘এখানে তো খুব মারছো, ওল্ড ট্রাফোর্ডে আসো, মজাটা টের পাবে।’ ঐ মুহূর্তে তামিম কোন জবাব দেননি। অবশ্য জবাব দেবেন কীভাবে, তামিম তো জানতেনই না যে কয়েক মাস পরে ইংল্যান্ড সফরে যাবে বাংলাদেশ!
পিটারসেনকে তামিম জবাবটা দিয়েছিলেন, কয়েক মাস পরে। একের পর এক ধেয়ে আসা ‘ইংরেজ’ বাউন্সারের বিপক্ষে করেছিলেন পাল্টা আক্রমণ। ওল্ড ট্রাফোর্ডেই, ইংল্যান্ডের সবচেয়ে গতিময় উইকেটে ইংরেজ বোলারদের বিপক্ষে তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পর সেই ‘ট্রেডমার্ক’ লাফ, মুখে কিছু না বলেও তামিম ব্যাট হাতে যেন বলে দিয়েছিলেন অনেক কিছু। পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি, তাও আবার ইংলিশ কন্ডিশনে ইংরেজ বোলারদের বিপক্ষে ছড়ি ঘুরিয়ে, উইজডেনের বর্ষসেরার তালিকায় তামিমের নামটা আসা অবধারিতই ছিল। উইজডেনের তৎকালীন সম্পাদক শিল্ড বেরীও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন তামিমের।
‘পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি’ বলতেই মনে পড়লো, আগের ম্যাচেই তো দুর্দান্ত আরেকটি সেঞ্চুরি ছিল তামিমের। সেটা তো আরো বেশি ‘বিশেষ’, ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত লর্ডসে। এই সেঞ্চুরির দ্বারাও একজনকে জবাব দিয়েছিলেন তামিম, সাবেক ইংরেজ ক্রিকেটার জিওফ বয়কটকে। ম্যাচের আগের দিন একটি টিভি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের টেস্ট খেলার যোগ্যতা নিয়ে যা-তা বলেছিলেন বয়কট, যা দেখে ভেতরে ভেতরে ফুঁসছিলেন তামিম। অবধারিত জবাবটা এলো দ্বিতীয় ইনিংসে। ৯৪ বলে সেঞ্চুরি সম্পন্ন করলেন তামিম, লর্ডসে তৎকালীন দ্বিতীয় দ্রুততম। টিম ব্রেসনানের বলে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে চার মেরে সেঞ্চুরি তুলে নিলেন, এরপরই দুই হাত দিয়ে করলেন বিখ্যাত সেই উদযাপন। না, বয়কটকে উদ্দেশ্য করে ঐ উদযাপন নয়, ঐ উদযাপনের পেছনের গল্পে আসছি একটু পরে। বয়কটের চাঁছাছোলা বক্তব্যের জবাব তামিম দিয়েছিলেন ঐ দিনের শেষে সংবাদ সম্মেলনে, দারুণ একটা মন্তব্য করে, ‘আমাদের তো সময় দিতে হবে। আপনি একটা চকলেট ফ্যাক্টরি দিয়ে তো দশ বছরের মধ্যে ক্যাডবেরী বানানোর আশা করতে পারেন না’।
লর্ডস টেস্টের প্রথম ইনিংসে ফিফটি পেয়েছিলেন তামিম, আউট হয়েছিলেন ৫৫ রান করে। ড্রেসিংরুমে ফিরে অনেকটা রসিকতার সুরেই অ্যাটেনডেন্টকে বলেছিলেন ফিফটির জন্য একটি অনার্স বোর্ড বানাতে। জবাবে অ্যাটেনডেন্ট হেসে বলেন, ‘অনার্স বোর্ডে নাম লেখাতে হলে সেঞ্চুরিই লাগবে’। তামিমও জবাব দিয়েছিলেন, ‘ঠিক আছে, আমি সেঞ্চুরিই করবো।’ কথা রেখেছিলেন তামিম, দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করে তাই ঐ অ্যাটেনডেন্টকে ইশারা করেছিলেন অনার্স বোর্ডে নাম লেখার জন্য।
একে তো লর্ডস ‘লর্ডস’ই, তা ছাড়াও লর্ডসের ঐ সেঞ্চুরিটা তামিমের জন্য বিশেষ। লর্ডসের প্রসঙ্গ এলেই তামিমের মনে পড়ে যায় বাবা ইকবাল খানের কথা। নিজে ফুটবলার হলেও ক্রিকেট ভালোবাসতেন তিনি, লর্ডসে অনুষ্ঠিত কোন ম্যাচ টিভিতে সম্প্রচারিত হলেই ছেলেকে দেখাতেন, ‘এটা হলো লর্ডস, এখানেই শুরু হয়েছিল ক্রিকেট’। ছেলেদের ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্ন ছিল ইকবাল খানের, দুই ছেলে নাফিস ইকবাল আর তামিম ইকবাল বাবার সেই স্বপ্ন পূরণও করেছেন। তামিমের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা অবশ্য দেখে যেতে পারেননি তাঁর বাবা, তবুও তামিম এখনো প্রায়ই বলেন, ‘আব্বুর স্বপ্ন পূরণের জন্যই আমি ক্রিকেট খেলি’। প্রতিটি দুর্দান্ত ইনিংসের পর বহুল প্রচারিত বিজ্ঞাপনের সেই ডায়ালগটা তাই তামিমের নিজের ক্ষেত্রেই একটু পাল্টে যায়, ‘আমি জিতলে জিতে যায় বাবা’।
দুর্দান্ত ইনিংসের কথা যখন আসলোই, তামিমের জন্য দুর্দান্ত একটা টুর্নামেন্টের কথা না বললেই নয়। এসিয়া কাপ, ২০১২। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অফফর্মে থাকা তামিমকে বাদ দেওয়ার হঠাৎ তোড়জোড় শুরু হলো। শেষ পর্যন্ত চাচা আকরাম খানের প্রচ্ছন্ন অবস্থানের কারণে তামিম দলে থেকে গেলেন। বাকিটা ইতিহাস, ফাইনালসহ এশিয়া কাপের চার ম্যাচেই তামিম অর্ধশতক তুলে নিলেন। ফাইনালে ফিফটি পাওয়ার পর করেছিলেন বিখ্যাত সেই উদযাপন, এক-দুই-তিন-চার। সেসময়ে তামিমের ঐ পারফরম্যান্সে সবাই দারুণ সন্তুষ্ট হলেও ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে তামিম ভাবতেই পারেন, শুধু চারটি ফিফটিই পেয়েছেন তিনি, কিন্তু পরিণতবোধের অভাবে হারিয়েছেন চারটি সেঞ্চুরি।
হ্যাঁ, এই বিষয়টি তামিমের মধ্যে স্পষ্টভাবে দেখা যায় ২০১৫ এর বিশ্বকাপের পর। বিশ্বকাপের বাজে পারফরম্যান্স আর সামাজিক মাধ্যমে সভ্যতার মাত্রা ছাড়ানো সমালোচনার পর তামিম বদলে গেলেন। এই ‘ধনাত্মক’ বদলে যাওয়ায় অবশ্য সাহায্য করেছিলেন তাঁর ‘গুরু’ মাশরাফিও। তবে এই বদলের ফলাফল হাতে হাতে পেয়েছিল বাংলদেশ। বিশ্বকাপ-পরবর্তী সিরিজগুলোতে অসাধারণ ব্যাটিং করলেন তামিম। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে তুলে নিলেন জোড়া সেঞ্চুরি, ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সৌম্যের আড়ালে চলে গেলো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল তামিমের অবদানগুলো। পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টের কথাও এক্ষেত্রে না বললেই নয়। ২৯৬ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশ ম্যাচ বাঁচিয়ে ফেলেছিল তামিম আর ইমরুলের দুর্দান্ত ব্যাটে ভর করে। ইমরুল দেড়শ’ রানে থেমে গেলেও তামিম থামেননি ডাবল সেঞ্চুরির আগে। ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে রাজকীয় ভঙ্গিতে তুলে নিয়েছেন টেস্টে নিজের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি, ঘরের মাটিতে যা দলের প্রথমও বটে।
তবে বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার পুরোপুরি তামিম-নির্ভর হয়ে পড়ে ২০১৬ সাল থেকে। অপর ওপেনার হিসেবে সৌম্য-ইমরুল এবং তিন নম্বরে নামা সাব্বিরের ধারাবাহিক অফফর্মের কারণে দলীয় বড় সংগ্রহের জন্য তামিমের বড় ইনিংস খেলা ছিল অপরিহার্য। তামিমও তাঁর ওপরে রাখা আস্থার প্রতিদান দিতে লাগলেন, ধুমধাম মেরে আউট না হয়ে নজর দিলেন বড় ইনিংস খেলার দিকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে সেঞ্চুরি পেলেন, মেহেদী মিরাজ মোট বারো উইকেট না পেলে হয়তো ম্যান অব দ্য ম্যাচই হয়ে যেতেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ইনিংসে ৭৮ ও ৭১ করেও সাকিবের অবদানের জন্য আবারো পেছনে পড়ে গেলেন। তবে শ্রীলঙ্কার মাটিতে নিজেদের শততম টেস্টে তাঁর দুর্দান্ত ব্যাটিংকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি কেউ।
দেশে-বিদেশে, টেস্টে বা ওয়ানডেতে তামিমের এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকে। ঘরের মাঠে সেঞ্চুরি তুলে নেন আফগানিস্তান আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, জোড়া সেঞ্চুরি আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেও। আর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি তো আরেক কাঠি সরেস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর লড়াকু ৯৫ করেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, ফিফটি পেয়েছিলেন সেমিতে ভারতের বিপক্ষেও। টি-টোয়েন্টিতেও তুলে নিয়েছিলেন দেশের প্রথম সেঞ্চুরি, ’১৬ বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে। সব মিলিয়ে তামিমের জন্য প্রস্তুত ছিল ’১৯ বিশ্বকাপের মঞ্চ।
না, তামিম পারেননি। সব ফরম্যাট মিলিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক বিশ্বকাপে কোন সেঞ্চুরি তো করতে পারেননিই, বরং হতাশ করেছেন প্রচণ্ডভাবে। দলকে শুরুর দৃঢ়তা প্রদান করতে গিয়ে তাঁর অতিরিক্ত ডট বল খেলার প্রবণতা ভীষণ সমালোচিত হয়েছে। বড় স্কোর করতে গিয়ে নিম্নগামী স্ট্রাইক রেটের কারণেও তোপের মুখে পড়তে হয়েছে তামিমকে।
তবে এ সবই এখন অতীত। বিশ্বকাপের হতাশাকে ঝেড়ে ফেলে বাংলাদেশ নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে, আর সেই স্বপ্নে, মাশরাফি-পরবর্তী যুগে তামিমই এখন বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের কাণ্ডারী। স্থায়ী অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর প্রথম সিরিজেই জিতেছেন তামিম, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় তাই বুক বাঁধতেই পারে বাংলাদেশী সমর্থকেরা।
লেখা প্রায় শেষ। এই শেষাংশে তামিম ইকবালকে নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। বাংলাদেশের ব্যাটিং রেকর্ডের প্রায় সবগুলোই তামিমের দখলে। ঘরের মাঠে বা পরের মাঠে, যে ফরম্যাটেই হোক না কেন, তামিমের একটি দুর্দান্ত শুরু এখনো নির্ভরতা দেয় বাংলাদেশকে। এই নির্ভরতা তামিম নিজেই অর্জন করে নিয়েছেন, তাঁর পরিণতবোধের মাধ্যমে, স্ট্রাইক রেট কমিয়ে ইনিংস বড় করার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। এই সিদ্ধান্তে আখেরে দলের জন্য লাভই হয়েছে, বাংলাদেশের জয়ের ম্যাচগুলোতে তামিমের অবদানেই তা স্পষ্ট। তবে টি-টোয়েন্টির এই মারদাঙ্গা ক্রিকেটের যুগে স্ট্রাইক রেট কমানোটা দলের জন্য ভালো হবে কিনা, সেটি নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টকে চিন্তা করতেই হবে।
পাশাপাশি এটাও বলতেই হবে, তামিম ইকবালের মতো ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার বাংলাদেশের খুব কম ক্রিকেটারই হয়েছেন। তামিমের প্রতিটি বাজে পারফরম্যান্সের পর সমালোচনার নামে কখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামিমের পরিবারকে আক্রমণ করা হয়েছে, আবার কখনো ‘ডটবাবা’, ‘ম্যাগি নুডুলস’ প্রভৃতি উপাধি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তামিমের মানের একজন ক্রিকেটারের জন্য এই উপাধিগুলো কতটা প্রাপ্য, সেটি নিয়ে বোধ হয় ভক্ত-সমর্থকদের চিন্তা করার সময় এসেছে।
তবে ‘তথাকথিত’ ভক্ত-সমর্থকেরা যাই বলুন না কেন, দিন শেষে তামিম ইকবাল শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটের পরিসংখ্যানের পাতাকে উজ্জ্বল করেননি, দর্শকদের দিয়েছেন নিখাদ বিনোদন। সেটা জহির-মুনাফদের বিপক্ষে ডাউন দ্য উইকেটে এসে হোক, ব্যতিক্রমী সব উদযাপনের মাধমে হোক, অথবা লকডাউনে দেশী-বিদেশী বিখ্যাত ক্রিকেটারদের সাথে লাইভ আড্ডার মাধ্যমে হোক। তবে বাংলাদেরশের ক্রিকেটে তামিমের সবচেয়ে বড় অবদানটা বোধ হয় এখনো বাকি।
তামিম ইকবাল… ওয়ানডে অধিনায়ক… ২০২৩… বিশ্বকাপ জয়…
উপরের শব্দগুলোকে একই সুতোয় গাঁথতে পারলেই হলো, এক হাতে ব্যাটিংয়ের চেয়ে বেশি বীরত্বপূর্ণ হবে সেই গল্পটা।
তামিম, পারবেন তো?
জন্মদিনে অনেক অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।
শুভ জন্মদিন, তামিম ইকবাল।
Discussion about this post