খেলাধূলা ডেস্ক
শুরুতে সাবধানী খেললেন অধিনায়ক তামিম, মাঝে তাকে সঙ্গ দিলেন সৌম্য সরকার ও মুশফিকুর রহীম। আর শেষে প্রায় একাই ঝড়ো ব্যাটিং করলেন মোহাম্মদ মিঠুন, খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। অধিনায়ক তামিমের পঞ্চাশতম পঞ্চাশের পর মিঠুনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে ৬ উইকেটে ২৭১ রানের সংগ্রহ।
ডানেডিনে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ট্রেন্ট বোল্টের তোপে পড়ে মাত্র ১৩১ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। আজ ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় ম্যাচে তাকে সামলে নিয়েছে বাংলাদেশ। যার ফলে এসেছে আগের ম্যাচের দ্বিগুণের বেশি দলীয় সংগ্রহ। ডানহাতি পেস বোলিংয়ে ভয় ঢোকালেও খুব বেশি সমস্যা করতে পারেননি ম্যাট হেনরি।
এ ম্যাচেও টস জিতে বাংলাদেশকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় নিউজিল্যান্ড। নিজেদের ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শুরু করেছিলেন অধিনায়ক তামিম। কিন্তু সেটি ধরে রাখতে পারেননি লিটন। ম্যাট হেনরির করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে এক্সট্রা বাউন্স করা ডেলিভারিতে পুল খেলতে চেষ্টা করেন লিটন। কিন্তু ব্যাটে-বলে ঠিকভাবে সংযোগ হয়নি।
যে কারণে ধরা পড়ে যান শর্ট স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো উইল ইয়ংয়ের হাতে। রানের খাতাই খুলতে পারেননি এ ড্যাশিং ওপেনার। মাত্র ৪ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারালেও পরে বিপদ সামাল দিয়েছেন তামিম ও সৌম্য। প্রথম পাওয়ার প্লে’তে ম্যাট হেনরি ও ট্রেন্ট বোল্টের বিপক্ষে বেশ ভুগতে হলেও, নিজেদের উইকেট হারাননি এ দুজন। এ জুটির দেখেশুনে খেলার বদৌলতে প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ২৬ রান করতে পারে বাংলাদেশ।
তবে এরপর থেকে হাত খুলতে শুরু করেন দুজনই। যার ফলে পরের দশ ওভার থেকে বাংলাদেশ পায় ৫৯ রান। কিন্তু সাজঘরে ফিরে যান সৌম্য। ইনিংসের ২১তম ওভারের প্রথম বলে উইকেট ছেড়ে এগিয়ে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিংয়ে শিকার হন ৪৬ বলে ৩২ রান করা সৌম্য। তার বিদায়ঘণ্টা বাজান বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনার।
দলীয় ৮৫ রানের মাথায় সৌম্যের বিদায়ের পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে দারুণ খেলেছিলেন মুশফিকুর রহীম ও তামিম ইকবাল। তাদের জুটির রান পৌঁছে গিয়েছিল পঞ্চাশের দোরগোড়ায়। কিন্তু তখনই ক্রিকেট মাঠে ফুটবলের স্কিল নিয়ে হাজির হন নিউজিল্যান্ডের অলরাউন্ডার জিমি নিশাম।
ইনিংসের ৩১তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি আলতো করে খেলেন মুশফিক। বল বেশিদূর যায়নি, ছিল স্ট্যাম্পের পাশেই। রানের সুযোগ ভেবে দৌড় শুরু করেন তামিম। কিন্তু পপিং ক্রিজে পৌঁছানোর আগেই বলের ওপর ছোট্ট কিকে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন নিশাম। রিপ্লে’তে দেখা যায় তামিমের ব্যাট তখন পপিং ক্রিজের বেশ বাইরে।
নিশামের এই চতুরতায় সমাপ্তি ঘটেছে বাংলাদেশ অধিনায়কের ১১ চারের মারে ১০৮ রানের খেলা ৭৮ রানের ইনিংসের, ভেঙেছে ৪৮ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের পঞ্চাশতম পঞ্চাশ পূরণ করার পর হাত খুলে খেলছিলেন তামিম। মাইলফলক পূরণের পর ২৪ বল থেকে তুলে নিয়েছিলেন ২৮ রান।
যা সম্ভাবনা জাগায় তার ১৪তম সেঞ্চুরির। কিন্তু শেষপর্যন্ত আর সম্ভব হলো না এটি। ৭৮ রানের ইনিংসটি খেলার পথে দুইবার আউট হওয়ার খুব কাছ থেকে বেঁচে গেছেন তামিম। প্রথমে ট্রেন্ট বোল্টের ওভারে তাকে কট বিহাইন্ড আউট দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে নিজের উইকেট বাঁচান তামিম। রিপ্লে’তে দেখা যায় সেটি তামিমের থাই প্যাডে লেগে জমা পড়েছে উইকেটরক্ষক টম লাথামের হাতে।
পরে কাইল জেমিসনের ওভারে ফিরতি ক্যাচই দিয়ে বসেছিলেন তামিম। সেটি তালুবন্দীও করেছিলেন জেমিসন। কিন্তু ফলো থ্রু’তে তার হাতে থাকা বল মাটিতে স্পর্শ করলে বেঁচে যান ৩৪ রানে ব্যাট করতে থাকা তামিম। আর এ সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার করে পরে তুলে নিয়েছেন ফিফটি।
২১২ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তামিমের এটি ৬৩তম পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস। এর মধ্যে ১৩টি রয়েছে সেঞ্চুরি। আর বাকি ৫০টি পঞ্চাশ রানের ইনিংস। সেঞ্চুরি কিংবা ফিফটির পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের আর কেউই তামিমের ওপরে নেই। এই ইনিংস খেলার পথে দুইটি রেকর্ডে সাকিব আল হাসানকে পেছনে ফেলেছেন তামিম।
এতদিন ধরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫টি পঞ্চাশ রানের ইনিংস ছিল তামিম ও সাকিবের। আজ সেটি ছাড়িয়ে ষষ্ঠ পঞ্চাশ রানের ইনিংস খেললেন তামিম। শুধু তাই নয়, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের মালিকও হয়ে গেলেন তামিম। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিতে সাকিব করেছেন ৬৩৯ রান। এখন সেটি ছাড়িয়ে ৬৫৫ রান হয়ে গেছে তামিমের।
অধিনায়কের উইকেট হারানোর পর ব্যাটিংয়ে আসেন মিঠুন, সঙ্গী হিসেবে তখন ধুকতে থাকা মুশফিক। সতীর্থকে আরামে খেলার সুযোগ দিয়ে শুরু থেকেই হাত খুলে মারতে থাকেন মিঠুন। তামিম যেখানে শেষ করেন, ঠিক সেখান থেকেই যেন শুরু করেন ৩০ বছর বয়সী এ ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
ইনিংসের ৪০ ওভার পেরিয়ে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক। রানের জন্য হাঁসফাঁশ করতে করতে অযথাই স্যান্টনারের বলে বড় শট খেলতে চান তিনি। কিন্তু সেই শটে ছিল না টাইমিংয়ের ছিটেফোঁটাও। ফলে বল চলে যায় মিড অনে দাঁড়ানো হেনরি নিকলসের হাতে, ইতি ঘটে মুশফিকের ৫৯ বলে ৩৪ রানের ইনিংস।
একপ্রান্তে মুশফিক রান করতে বেগ পেলেও, মিঠুন ছিলেন শুরু থেকেই সাবলীল। মুখোমুখি নবম বলে প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান তিনি, যেটি ছিল আবার ছক্কার মার। সেই যে শুরু, ইনিংসের বাকি সময় আর কোনো সমস্যাই হয়নি মিঠুনের। মুশফিকের সেরা ফর্মের অভাবটা বেশ ভালোভাবেই পূরণ করেছেন তিনি।
জিমি নিশামের করা ৪৫তম ওভার থেকে ইনিংসের সর্বোচ্চ ১৯ রান করে বাংলাদেশ। সেই ওভারের শেষ দুই বলে ছয় ও চার হাঁকান মিঠুন। ওভারের শেষ বলটি ছিল কোমরের ওপরে ওঠা নো বল, ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কা মেরে নিজের পঞ্চাশ তুলে নেন মিঠুন। এটি তার ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ ফিফটি।
পরে ফ্রি-হিট বলটি ওয়াইড লং অফ দিয়ে চার মেরে পূর্ণ ফায়দা নেন মিঠুন। কিন্তু আশানুরূপ খেলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। তার কাছ থেকে ঝড়ো ক্যামিওর আশা থাকলেও ইনিংসের ৪৮তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ১৮ বলে ১৬ রানের বেশি করতে পারেননি। পরে নামা শেখ মেহেদি এক ছয়ের মারে ৫ বলে করেন ৭ রান।
ফলে শেষ ওভারে দায়িত্ব বর্তায় মিঠুনের কাঁধেই। নিশামের করা এই ওভার থেকে বাংলাদেশ পায় ১২ রান। ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে ২৭১ রানে পৌঁছে মিঠুন। তিনি শেষপর্যন্ত ৬ চারের সঙ্গে ২ ছয়ের মারে ৫৭ বলে ৭৩ রান করে অপরাজিত থাকেন।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ২ উইকেট নিয়েছেন মিচেল স্যান্টনার। এছাড়া ম্যাট হেনরি, ট্রেন্ট বোল্ট ও কাইল জেমিসন নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।
Discussion about this post