খেলাধুলা ডেস্ক
আজ চতুর্থ দিনের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের করণীয়ও ঠিক করে দিয়েছেন গত মাসে বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেকে চোখধাঁধানো ডাবল সেঞ্চুরিতে দলকে জেতানো মেয়ার্স, ‘আমাদের শুধু (চতুর্থ দিন সকালে) দ্রুত দুটি উইকেট তুলে নিতে হবে। তাহলেই সবকিছু অন্য রকম লাগবে।’
অপরাজিত ৬৬ রানের একটা জুটিতে দিন শেষ করেছে শ্রীলঙ্কা। হাতে এখনো ৬ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে রান হয়ে গেছে ২৫৫। ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে এরই মধ্যে ১৫৩ রানে এগিয়ে গেছে লঙ্কানরা। কিন্তু অ্যান্টিগায় সিরিজের প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিনে আজ দুই দল যখন মাঠে নামবে, তখন কি বলা যাবে যে শ্রীলঙ্কা এগিয়ে আছে?
শেষ সেশনে ৪৩ বল আর ১৯ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারানোতেই শ্রীলঙ্কার দাপটটা অনেকটা কমে গেছে এই টেস্টে, এর মধ্যে দুই উইকেট নিয়েছেন হঠাৎ বোলিংয়ে আসা মেয়ার্স! না হলে দ্বিতীয় উইকেটে ওশাদা ফার্নান্দো ও লাহিরু থিরিমান্নের ১৬২ রানের জুটি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভয়ই ধরিয়ে দিচ্ছিল!
আগের দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিনটা শেষ করেছিল প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেটে ২৬৮ রান নিয়ে। তৃতীয় দিনে কাল শ্রীলঙ্কার প্রথম কাজ ছিল ক্যারিবীয়দের বাকি দুই উইকেট দ্রুত তুলে নেওয়া। বিশ্ব ফার্নান্দো নিশ্চিত করলেন, ১২ বলের বেশি ফিল্ডিং করতে হচ্ছে না লঙ্কানদের।
দিনের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে তৃতীয় বলেই বিশ্ব ফার্নান্দো ফিরিয়ে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করা রাকিম কর্নওয়ালকে (৬১)। তিন বল পর শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে ফিরিয়ে দিলেন শূন্য রানেই! ১০২ রানে এগিয়ে থেকে প্রথম ইনিংস শেষ করে ক্যারিবীয়রা।
কেমার রোচের বলে স্লিপে ক্যাম্পবেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে (৩) যখন ফিরে যান, শ্রীলঙ্কার রান তখন মাত্র ৮। কিন্তু সেখান থেকে ওশাদা-থিরিমান্নের দারুণ জুটিতে ঘুরে দাঁড়ানো।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা আগের দুদিনের মতো সুইং পাননি, সে কারণে অনেকটা সময় অফ স্টাম্পের বাইরে ক্রমাগত লাইন-লেংথ ঠিক রেখে লঙ্কানদের চাপে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। দিনের শেষভাগে আবার বাউন্সারে ঘায়েল করতে চেয়েছেন। কিন্তু ওশাদা-থিরিমান্নেও দাঁতে দাঁত চেপে দারুণ লড়েছেন। অপেক্ষা করেছেন বাজে বলের।
সুযোগ যে একেবারেই আসেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য, তা নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সে সুযোগ নিতে পারেনি। ১৭ রানে লেগ স্লিপে জেসন হোল্ডারের হাত ফসকে যায় ওশাদার ক্যাচ। এরপর আর কোনো সুযোগ না দেওয়া ওশাদা শেষ পর্যন্ত ৯ রানের জন্য ৮ টেস্টের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা পাননি। হোল্ডার কাল রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পেরেছেন কি না, কে জানে!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের রীতিমতো খাটিয়ে মেরেছেন ওশাদা-থিরিমান্নে জুটি। থিরিমান্নে ৭৬ রান করতে বল খেলেছেন ২০১টি, ওশাদার ৯১ রান এসেছে ১৪৯ বলে। থিরিমান্নে খেটেখুটে রানই বেশি করেছেন, চার মেরেছেন ৪টি। ওশাদার চার ১১টি।
৩০১ বল আর ১৬২ রানের জুটিটা শেষ পর্যন্ত ভেঙেছে অপ্রত্যাশিত এক হাতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েইটের দারুণ চাল বলতে পারেন এটিকে, কিংবা বলতে পারেন উপায়ান্তর না দেখে ‘অন্য রকম কিছু হওয়া’র আশা। ইনিংসের ৫১তম ওভারে তিনি নিয়ে আসেন কাইল মেয়ার্সকে—ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সপ্তম বোলার! তাঁর প্রথম বলেই উইকেট! উইকেটকিপার জশুয়া দা সিলভার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ওশাদা।
নিজের পরের ওভারে আবার আঘাত মেয়ার্সের। ওশাদা ফেরার ১৬ বল আর ৮ রান পর ফিরে গেলেন চারে নামা দিনেশ চান্ডিমাল (৪), দা সিলভাকে ক্যাচ দিয়েই। তার ২৮ বল পর, স্কোরবোর্ডে আর ১১ রান যোগ হওয়ার পর ফিরে গেছেন থিরিমান্নে। কেমার রোচের বলে বোল্ড হয়ে। ১ উইকেটে ১৭০ থেকে হঠাৎ ৪ উইকেটে ১৮৯ হয়ে গেল শ্রীলঙ্কা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন হয়তো আবার ম্যাচে দারুণভাবে ফিরে আসার আশা দেখছে!
দেখারই কথা। ক্রিজে তখন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও অভিষিক্ত পথুম নিশঙ্কা। শ্রীলঙ্কার লাইনআপে এরপর নিরোশান ডিকভেলা ছাড়া বাকি চার ‘ব্যাটসম্যান’ হলেন সুরঙ্গা লাকমল, লাসিথ এমবুলদেনিয়া, দুষ্মন্ত চামিরা ও বিশ্ব ফার্নান্দো। তার মানে, এক-দুই উইকেট ফেলে দিলেই দেখা মিলবে লেজের।
কিন্তু শ্রীলঙ্কার লেজটাকে ‘লুকিয়ে’ রাখলেন ডি সিলভা-নিশঙ্কা। ডি সিলভা দিন শেষে অপরাজিত ৪৬ রানে, নিশঙ্কা ২১ রানে। জুটি হয়ে গেছে ৬৬ রানের, এর মধ্যে এই জুটির জন্য ১৩৫ বল করে ফেলতে হয়েছে ক্লান্ত হয়ে পড়া ক্যারিবীয় বোলিং লাইনআপকে।
Discussion about this post