আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মিয়ানমারে তৎকালীন নির্বাচিত সরকারের শাসনামলে ২০১৭ সালে রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর শুরু হয়েছিল সামরিক বাহিনীর বর্বর নির্যাতন। তাদের হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণের মুখে টিকতে না পেরে সেসময় বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। তখন এর বিরোধিতা করা বা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি মিয়ানমারের ‘গণতন্ত্রপন্থী’ নেতাদের। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর তাদের অনেকেই এখন রোহিঙ্গাদের ‘ন্যায়বিচার’ ও প্রত্যাবাসনের কথা বলছেন।
বুধবার মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরোধী এক নেতা রীতিমতো শপথ করে ঘোষণা দিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী সামরিক জেনারেলদের যুদ্ধপরাধের বিচার না করা পর্যন্ত তারা শান্ত হবেন না।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাসহ জান্তাবিরোধী একটি গোষ্ঠীর পক্ষে এই ঘোষণা দেন তিনি। পেশায় চিকিৎসক এ নেতা নিজেও সামরিক বাহিনীর কাছে নিপীড়িত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।
ডা. সাশার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনেছে দেশটির জান্তা সরকার এবং তিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমার সেনাদের বর্বর নির্যাতন, লুটপাট, ধর্ষণ ও গণহত্যার অভিযোগে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। এতে সমর্থন রয়েছে বাংলাদেশ, ওআইসিসহ আরও অনেক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার। তবে সেই মামলার অভিযোগগুলোর বিষয়ে কখনোই খুব একটা গুরুত্ব দিতে দেখা যায়নি মিয়ানমারের তৎকালীন ‘গণতান্ত্রিক’ সরকারকে। বরং রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে আইসিসিতে মিয়ানমারের হয়ে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন দেশটির ‘শান্তিতে নোবেলজয়ী’ নেতা অং সান সু চি।
অভ্যুত্থানের পর থেকেই জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে মিয়ানমারের জনগণ। প্রায় প্রতিদিনই চলছে বিক্ষোভ-সংঘর্ষ। বিক্ষোভ দমনে কড়া অবস্থান নিয়েছে সামরিক বাহিনীও।
অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস নামে একটি স্থানীয় সংগঠনের তথ্যমতে, মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে এপর্যন্ত অন্তত ২৭৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। বন্দি হয়েছেন আরও অসংখ্য মানুষ।
এ অবস্থায় মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেতারা এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার রাস্তা খুঁজছেন। আইসিসির মাধ্যমে কোনওভাবে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত করা যায় কিনা তার পথ খুঁজছেন এসব নেতা।
সম্প্রতি জান্তা সরকারের সঙ্গে প্রকাশ্যে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়া জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি কিয়াও মো তুন বলেছেন, অভ্যুত্থানের জেরে সহিংসতায় দায়ী ব্যক্তিদের কীভাবে বিচারের আওতায় আনা যায়, তার পথ খুঁজছে দেশটির ক্ষমতাচ্যুত আইনপ্রণেতাদের একটি কমিটি। এর মধ্যে আইসিসি অন্যতম।
মো তুন বলেন, আমরা আইসিসির সদস্য দেশ নই। তারপরও… আইসিসিতে মামলা নেওয়ার জন্য আমাদের সবধরনের উপায় ও পথ খোঁজা দরকার।
সূত্র: রয়টার্স
Discussion about this post