খেলাধূলা ডেস্ক
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ আগেই হেরে বসে ছিল বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে একটি জয়ের খোঁজে ছিল টাইগাররা। যাতে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীটা রাঙানো যায় অন্তত একটি জয়ে। কিন্তু ভাগ্য বদল হলো না বিশেষ দিনটিতেও।
ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে আজ শুক্রবার তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি ছিল তামিম ইকবালদের জন্য হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই। দুই ম্যাচ হারায় আগেই সিরিজ হার নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের।
আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ৩১৮ রান তুলে নিউজিল্যান্ড। এতে জয় তুলে নেওয়ার লক্ষ্যটা বাংলাদেশের জন্য বেশ কঠিন ছিল।
আর ৩১৯ রানের সেই লক্ষ্য তাড়ায় একাই লড়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৭৩ বলে ৭৬ রান সংগ্রহ করেছেন। ৬টি বাউন্ডারির আর ৪টি ছক্কার মেরেছেন।বলতে গেল ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে বাঘের গর্জন একাই দিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
৪২.৪ ওভারে ১৫৪ রানে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশের ইনিংস। অর্থাৎ ১৬৪ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় নিয়ে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করল নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ডের ছুড়ে দেওয়া ৩১৯ রানের লক্ষ্য ছোঁয়ার মিশনে শুরুতেই কিউই পেসারে বিধ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। শুরুতেই অধিনায়কের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
দলীয় সংগ্রহ ৫০ রান তুলতেই ৪ উইকেট খু্ঁইয়ে ফেলে বাংলাদেশ দল। টপঅর্ডারের ৩ ব্যাটসম্যানই কিউই পেসার ম্যাট হেনরির শিকারে পরিণত হন।
গত ম্যাচে ৭৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা বাংলাদেশ অধিনায়ক আজ কিছুই করতে পারেননি। ৯ বল মোকাবিলা করে মাত্র ১ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন।
নিউজিল্যান্ড সফরে সাকুল্যে তার সংগ্রহ দাঁড়াল মাত্র ৯২ রান। প্রথম ম্যাচে ১৩ ও দ্বিতীয়টিতে ৭৮ রান করেছিলেন টাইগার অধিনায়ক। আজ আর দুই অঙ্কেও যেতে পারেননি তিনি।
দলীয় ১০ রানের মাথায় অধিনায়ক তামিমকে হারায় বাংলাদেশ। ম্যাট হেনরির একটি লেন্থ বল ডিফেন্ড করতে গিয়ে ল্যাথ্যামের ক্যাচে পরিণত হন তামিম।
এরপর অধিনায়ককে অনুসরণ করেন ওয়ানডাউনে নামা সৌম্য সরকার। তিনি টেকেন মাত্র ৬ বল। অধিনায়কের মতো ১ এক রানে আউট হন তিনিও। ম্যাট হেনরির শর্ট লেন্থ বলকে ফাইনলেগে পাঠাতে গিয়ে বোল্টের হাতে তালুবন্দী হন।
দলীয় ১৮ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের।
অপরপ্রান্ত ভালোই খেলে যাচ্ছিলেন ওপেনার লিটন দাস। তামিম ও সৌম্যর পর উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে স্কোরবোর্ডে ২৬ রান তোলেন।
এর মধ্যে ২১ বলে ২১ রানই তার। কিন্তু এমন সেট হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি লিটন। দলীয় ২৬ রানের মাথায় আউট হন লিটন। স্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ট্রেন্ট বোল্টের একটি লেন্থ বল খেলতে গিয়ে থার্ডম্যানের হাতে ক্যাচে পরিণত হন লিটন।
দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে একহাতে দেখার মতো ক্যাচ নিয়েছেন বোল্ট।
লিটন সাজঘরে ফেরার পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন মুশফিক ও মিঠুন। এ জুটি যোগ করতে পারে মাত্র ২২ রান। দলীয় ৪৮ রানের মাথায় কাইল জেমিসনের বলে স্কয়ার লেগে দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিচেল সান্টনারের হাতে ধরা পড়েন মিঠুন।
গত ম্যাচে ৭৩ রান করা মিঠুন আজ করলেন মাত্র ৬ রান। ৩৪ বল মোকাবিলায় এ রান সংগ্রহ করেন তিনি।
মিঠুনের পর মুশফিককে সঙ্গ দিতে নামেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু এই অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান তাদের অভিজ্ঞতার ঝুলি খুলে তেমন কিছুই করতে পারেননি।
এ জুটিতে যোগ হয় মাত্র ২৯ রান। ২৩তম ওভারে জিমি নিশামের প্রথম বলেই কট এন্ড বোল্ড হন মুশফিক। পুল করতে গিয়ে বোলারের হাতেই ক্যাচ দেন মুশফিক। ৪৩ বলে ২১ রানে সমাপ্তি ঘটে মুশফিকের ইনিংসের।
এক বল বিরতি দিয়েই মেহেদী হাসান মিরাজকে শিকার করেন নিশাম। পয়েন্টে ঠেলে দেওয়া লো ক্যাচ তুললে দুর্দান্তভাবে তা লুফে নেন কনওয়ে। রানের খাতা না খুলেই বিদায় নেন এ স্পিন অলরাউন্ডার।
৭৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা বাংলাদেশ। ৩১৮ রানের জবাবে ১০০ রান জমা করতে পারবে কি না সেটাই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।
সেই প্রশ্নকে আরও যৌক্তিক করেন তরুণ মেহেদী হাসান। নিশামের পরের ওভারের শিকার তিনি। ল্যাথামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৩ রান করেই সাজঘরের পথ ধরেন তিনি।
৮২ রান জমা করতেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
বোলার তাসকিনকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আউট হয়ে হোয়াইটওয়াশের লজ্জার ক্ষণকে আরও কমিয়ে আনলেন তাসকিন।
স্ট্যাম্পের ওপর করা হেনরির লেন্থ বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে এক্সট্রা কভারে ক্যাচ তুলে দেন তাসকিন। কনওয়ে তা খুব সহজের তালুবন্দী করেন। ২২ বলে ৯ রান করেন তাসকিন।
এর আগের ওভারে বোল্টের বলে সৌভাগ্যক্রমে বাউন্ডারি পান রিয়াদ। তিন অংকের ঘরে পৌঁছতে পারে বাংলাদেশ। ৮ উইকেট হারিয়ে ১০৩ রান জমা করতে পারে বাংলাদেশ।
তাসকিনের পর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গী হন পেসার রুবেল। হারের ব্যবধান কতো কমানো যায় সেই লক্ষ্যেই ক্রিজে টিকে থাকেন মাহমুদউল্লাহ।
রুবেল ও শেষ ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজুরের আউটের পর ১৫৪ রানে থেমে যায় বাংলাদেশ।
এ হারের পর ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ৫ উইকেট শিকার করেছেন জিমি নিশাম। ৪টি পেয়েছেন ম্যাট হেনরি। একটি উইকেট শিকার করেছেন কাইল জেমিসন।
Discussion about this post