অ্যান্ড্রু এংগ (Andrew Ng) অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন শিক্ষক। তিনি কোর্সেরা (Coursera)-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে চীনা সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট বাইডুর রিসার্চ সেকশনের প্রধান বিজ্ঞানী। এছাড়া তিনি বিশ্ববিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক।
শিক্ষার্থীদের জন্য তাঁর উপদেশ
কোন জিনিসের পেছনে ছুটবে, কী কাজে তোমার মূল্যবান সময় ব্যায় করবে – এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমি তোমাকে দুটো জিনিস বিবেচনা করতে বলব –
১) তুমি যেটা করছ বা করতে যাচ্ছ, সেটা সমাজে, কিংবা মানুষের জীবনে কোনো পরিবর্তন আনবে কী না।
২) কাজটি করে তুমি কতটুকু শিখতে পারবে।
এমনকী এখনও আমি কোনো কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই দুটো জিনিস বিবেচনা করি।
আমাদের সমাজে অসংখ্য সমস্যা রয়েছে আর তাই সমস্যাগুলোর সমাধান করার জন্য অনেক কিছু করার আছে। বিশেষ করে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে আগের চেয়ে অনেক সহজে কোনো আইডিয়া কিংবা পন্য অনেকের কাছে পৌঁছানো যায়। সঠিক পরিকল্পনা ও সেটার সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে একজন মানুষের পক্ষে অনেক অনেক মানুষকে সাহায্য করা সম্ভব। আর এখন তো গণ্ডিটা কেবল নিজের গ্রাম, শহর বা দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সারা পৃথিবীর মানুষের কাছেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৌঁছানো সম্ভব।
তাই নিজেকে প্রশ্ন কর: তুমি যা করার চিন্তা করছ কিংবা স্বপ্ন দেখছ, সেটি যদি সত্যিই সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, এটি কি অনেক মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করবে? অনেক মানুষকে সাহায্য করবে? উত্তর যদি না হয়, তবে অন্য কিছু করার চিন্তা কর। নয়ত তুমি তোমার মাঝে যে অমিত সম্ভাবনা আছে, তার সঠিক ব্যবহার করতে পারবে না।
দ্বিতীয়ত, যখন তুমি তরুণ, নিজের শিক্ষার ব্যাপারে বিনিয়োগ করতে দ্বিধা করবে না। আর হ্যাঁ, আমার কাছে “তরুণ”-এর সংজ্ঞা হচ্ছে যার বয়স ১০০ বছরের কম।
যা কিছুই তুমি আজকে শিখবে, সেটা বাকী জীবনে তোমার অনেক কাজে আসবে। কিন্তু এটি খুব সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে তুমি যখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাট চুকিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করবে, তখন কোনো কিছু শেখার পেছনে সময় ব্যায় করে খুব দ্রুত কোনো ফল পাবে না। তোমার সামনে কোনো পরীক্ষা থাকবে না কিংবা কোনো শিক্ষকও তোমাকে পড়ার জন্য তাড়া দেবে না। কিন্তু তুমি যদি নিজেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে পার, পড়ার মাঝে আনন্দ খুঁজে পাও, নতুন আইডিয়া নিয়ে চিন্তা কর, অন্য মানুষদের সাথে আলাপ-আলোচনায় অংশগ্রহন কর (যাদের কাছ থেকে তুমি কিছু শিখতে পার), তাহলে তুমি যে বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করছ, কয়েক বছরের মধ্যেই সে বিষয়ে তুমি দক্ষ হতে পারবে। লক্ষ কর, কয়েক সপ্তাহ কিংবা কয়েক মাস নয়, কয়েক বছর।
আমার নিজের কথা যদি বলি, আমি পড়তে পছন্দ করি। আমার কিন্ডেলে (ইবুক পড়ার যন্ত্র) এক হাজারেরও বেশি বই আছে। আমি প্রতি রাতে এবং সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে বই পড়ার পেছনে প্রচুর সময় দেই। একাডেমিক রিসার্চ পেপার, ব্যবসা পরিকল্পনা, ইনোভেশন, জীবনী – আরো অনেক রকমের বই পড়ি। মাঝে মাঝে অনলাইন কোর্স করি। এছাড়া পুরনো কিংবা নতুন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেও অনেক ভালোবাসি এবং তাদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারি।
শিক্ষা গ্রহনের প্রক্রিয়াটাও তোমাকে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে সাহায্য করবে যে কী নিয়ে তুমি কাজ করবে। যখন তুমি এমন অনেক উদাহরণ দেখবে যে অন্যরা কীভাবে সমাজ বদলাচ্ছে, তুমি নিজেও অনেক আইডিয়া পাবে যে তুমি কীভাবে দিন বদলের সংগ্রামে যোগ দিতে পার।
আমার বক্তব্যের সারকথা যদি বলি: নিজের শিক্ষায় বিনিয়োগ করতে হবে (সেটা সময় বিনিয়োগ হতে পারে কিংবা অর্থ), এমনকী কষ্ট হলেও সেটা করতে হবে। আর সবসময় সুযোগের সন্ধান করতে হবে যে কীভাবে তুমি এমন কাজ করতে পার যা অন্যকে সাহায্য করবে, সমাজকে বদলে দিবে, পৃথিবীকে বদলে দিবে।
Discussion about this post