বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। একজন সাহিত্য সম্পাদক হিসাবেও তিনি রেখেছেন অনবদ্য অবদান।
১৯৭০ দশকে টিভি উপস্থাপক হিসাবে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তাঁর জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি আলোকিত মানুষ তৈরির কাজে নিয়োজিত ‘বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র’।অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে যে রকম সফলভাবে বই পড়া আন্দোলনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন, তা কোনো প্রশংসাসূচক বাক্য দিয়ে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়।
‘শিক্ষার আলো’ পাঠকদের জন্য রইলো অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের কিছু বিখ্যাত উক্তি।
•••
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।
•••
এ পৃথিবীর একটা কণাও তো
নৈরাশ্য দিয়ে তৈরি নয়।
তাহলে কেন নৈরাশ্য?
কেন নয় আশা?
•••
কে কতটা শিশু তাঁর উপর
নির্ভর করে সে কতটা
কালচার্ড, বার্ধক্য হলো
আনকালচার্ড।
•••
আসলে জীবন ছোট নয় আমাদের সুখের
মুহূর্তগুলো ছোট। তাছাড়া জীবন ছোট
মনে হওয়ার কারণ হচ্ছে স্মৃতির অভাব।
আমরা কখনো বর্তমানে থাকিনা। হয়
থাকি ভবিষ্যতে, না হয় অতীতে। আমরা
পাওয়াকে ভুলে যাই বলেই মনে
হয় কিছুই পাই নাই।
•••
অপ্রয়োজনের জিনিস সুন্দর
হয়, প্রয়োজনের জিনিস
গাড়লের মতো হয়।
•••
মসজিদে যায় সবচেয়ে জ্ঞানী
মানুষগুলো অথচ কথা বলে
সবচেয়ে মূর্খটা!
•••
আমাদের দেশে সবাই একটা “পা”
চায়, পায়ের নীচে পড়ে
থাকতে চায়।
•••
বুদ্ধিজীবীরা আবার আমাকে বুদ্ধিজীবী
মনে করেনা, কারণ আমি হাঁসি।
বিদ্যাবুদ্ধি তো আর কারো চেয়ে কম ছিল
না, শুধু ঐ একটা জায়গাতে মার খেয়ে
গেলাম, আমার হাঁসি। হাসলে পরে তুমি
আর বুদ্ধিজীবী থাকতে পারবে না।
আপনি হাসেন?
তার মানে তো আপনি লাইট।
•••
সেটুকুই আমরা, যেটুকু
আমরা সংগ্রাম করি।
•••
যে কোনো জাতির
প্রতিভাবানেরা সে জাতির
গড়পড়তা মানুষের সম্পূর্ণ
বিপরীত। তারা সবাই সে
জাতির প্রিয় প্রতিপক্ষ।
•••
আমি যদি উন্নত জাতের হাঁস মুরগি
পালন, গোখামার তৈরি, এ ধরণের
কাজগুলো করতাম তাহলে
এতদিনে কত টাকা যে কামিয়ে
ফেলতাম। কিন্তু পড়লাম মানুষের
উন্নতি নিয়ে-আলোকিত মানুষ।
না বুঝি নিজে, না পারি
অন্যকে বোঝাতে।
•••
সুন্দর মুহূর্তগুলো আমরা মনে
রাখিনা, ভুলে যাই। কে ১০০ দিন
রসগোল্লা খাইয়েছিল সেটা
আমরা মনে রাখিনা, কিন্তু কে
একদিন কান মুচড়ে দিয়েছিল তা
মনে রেখে দিয়েছি।
•••
একটা বৃদ্ধের যৌবন হলো তার
জীবনের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও
যৌবনের সমন্বয়। তার সাথে
যুবকের যৌবন কী
করে পারবে?
•••
কেউ বলেনি তুমি পারবে না,
তুমিই বলছ ।
•••
আলোকিত মানুষ বলে কিছু
নেই। ওটা একটা স্বপ্নের নাম।
আমরা শুধু আলোকিত হবার
চেষ্টা করতে পারি। আর চেষ্টা
করাটাই হওয়া।
•••
মানুষ জন্মেছে প্রাণী হয়ে। সেটা এক ধরনের মানুষ। আর এক ধরনের মানুষ হচ্ছে বিকশিত মানুষ। মানুষের বিকাশের জন্য কেবল বই পড়লেই হবে। কারণ যে বই পড়ে, সে কবিতাও পড়ে, গান শোনে, চিত্রকলা বোঝে। পূর্ণিমার আলো, নীল আকাশ সবই বোঝে।
……..
‘একটি জাতির শিক্ষা নিয়ে হেলা-ফেলা করা চলে না। সব উন্নয়নের মূলে রয়েছে শিক্ষা। পৃথিবীর যা কিছু শ্রেষ্ঠ, যা কিছু মহান তা শিক্ষা থেকেই এসেছে।’
……..
‘আমরা এখন একটি অস্থির সময়ে প্রবেশ করেছি। এই সময়ে আমাদের সবার মধ্যে একটি প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়েছে। আমাদের যেমন সামনে এগিয়ে যেতে হবে, তেমনি থামতেও শিখতে হবে। ঠিক সময়ে থামতে শিখলে তোমরা বৃক্ষের মতো ফুল-পাতায় শোভিত হয়ে উঠবে, দেশের ও জাতির কাজে লাগবে।’
……..
‘বইয়ের মধ্যে আলো আছে, তাই বই পড়লে আলোকিত হওয়া যায়। আলো আসে আগুন থেকে। কার আগুন? যিনি বই লেখেন, তার আত্মার আগুন। এ আগুন দেয়াশলাইয়ের আগুনের মতো নয়। বইয়ের মধ্যে থাকে ভালোবাসার আগুন, সৌন্দর্যের আগুন, পৃথিবীকে সুন্দর করার আগুন।’
………………..
পিথাগোরাসের সম্প্রদায়ের লোকেরা বলতেন, সব জিনিসই আসলে সংখ্যা। আমার বক্তব্য…আমি খুব ক্ষুদ্র মানুষ, বক্তব্য নয় এটা, কেবল ফিসফিস কথা—সব জিনিসই আসলই জ্ঞান। আসলে শিক্ষা। এই যে আজকে অ্যারোপ্লেন উড়ছে আকাশে, এই যে রেলগাড়ি চলছে, এই যে আমরা চাঁদে গেছি, এই যে মানুষের বিস্ময়কর সাফল্য, এই যে চিকিৎসাব্যবস্থার অবিশ্বাস্য উন্নতি, এই যে কৃষির আশ্চর্য প্রসার, এই যে অদ্ভুত শিল্পায়ন, এই যে মানবসভ্যতার বিকাশ, ধর্ম-দর্শন-বিজ্ঞান-শিল্পসাহিত্য সবকিছু—এগুলো আসলে কী? এগুলো আসলে তো সবই আমাদের শিক্ষার মাধ্যমে পাওয়া। সুতরাং মানবসভ্যতাটাই একটা শিক্ষার মাধ্যমে পাওয়া, শিক্ষা দিয়ে তৈরি। শিক্ষার মান যত দিন আছে, এই সভ্যতা তত দিন আছে। যেদিন থাকবে না, সেদিন থাকবে না। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতিতে শিক্ষার একটা বিরাট অবদান।
………………..
ছাত্রছাত্রীদের জন্য আমারও একটাই কথা—থামো। দৌড়াও, কিন্তু থামতে শেখো। দাঁড়াতে শেখো। গাছ হতে শেখো। গাছের মতো সমুন্নত, গাছের মতো পোশাক-আবহ, গাছের মতো পাতায় ভরা, ফুলে ভরা, সৌন্দর্যে ভরা। তাহলে এই পৃথিবীতে সত্যিকারভাবে কিছু দিতে পারবে। তা না হলে হাততালি এবং শিস দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।
Discussion about this post