মারুফা হোসেন
এক বছর ধরে আমরা যেন অচল হয়ে পড়েছি। মহামারির থাবা বিধ্বস্ত করে দিয়েছে জনজীবন। তার থেকে রেহাই পায়নি আমাদের অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুরাও। তাদের জীবন প্রায় থেমেই গেছে। আর হঠাৎ করে থেমে যাওয়া জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে এসব বিশেষ শিশুরা হয়ে পড়েছে অশান্ত, হতাশাগ্রস্ত। যে শিশু-কিশোরেরা সুসংগঠিত কাঠামো রুটিন মেনে তাদের জীবন পরিচালনা করতে অভ্যস্ত, তাদের জীবনে এ কোভিড-১৯ এনে দিয়েছে বিপর্যয়।
করোনা শুরু হওয়ার আগে শিশুরা যখন একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনার আওতায় ছিল, তখন তাদের নিয়ে অভিভাবকদের তেমন কোনো বেগ পেতে হতো না। কিন্তু এখন অভিভাবকদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ সময়ে তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, অন্যদিকে মহামারির শঙ্কা তো রয়েছে। তারপরও জীবন তো আর থেমে থাকবে না, আমার যে শিশুটির বয়স ১ বছর আগে ছিল ৩ বছর, আজ তার বয়স ৪ বছর। আমরা কেউই জানি না মহামারি শেষ কবে হবে, তত দিনে শিশুদের বয়স হয়ে যাবে ৫, ৬ বা ৭ বছর। তাহলে আমরা কি শিশুটিকে কোনো ব্যবস্থাপনার মধ্যে না নিয়ে শুধু শুধু সময় ক্ষেপণ করব? না কি বর্তমান পরিস্থিতিতে যেসব কার্যক্রম চলছে, সেগুলোকে নিজেদের আওতায় নিয়ে আসব। এখন এ বিষয়ে ভাবার সময় এসে গেছে।
যেহেতু শিশুরা সব সময় বাসায় থাকে, তাই তাদের একঘেয়েমি চলে আসতেই পারে, আর তার কারণে তাদের নানা আচরণগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই সুযোগ বুঝে তাদের বাসার ছাদ থাকলে ছাদে বা কোনো মাঠে, যেখানে মানুষের সমাগম কম, সেখানে গিয়ে খোলা আকাশের নিচে নিয়ে তাদের পছন্দের খেলাধুলা করানো যেতে পারে। এমনকি খুব প্রয়োজন হলে যেখানে সব রকম স্বাস্থ্যবিধি মেনে থেরাপি দেওয়া হয়, সেখান থেকে থেরাপি নেওয়া যেতে পারে।
১. শিশুকে সোশ্যাল স্টোরির মাধ্যমে জানানো ক্লাস কত তারিখ এবং কখন থেকে শুরু হবে।
২. ক্লাস কীভাবে হবে অর্থাৎ ফোন বা ল্যাপটপের মাধ্যমে হবে, সে বিষয়ে ধারণা দিতে হবে।
৩. ক্লাস শুরু হওয়ার কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে প্রস্তুতি নিতে হবে।
৪. ক্লাস শুরুর আগে আনন্দদায়ক কার্যক্রম, ভিডিও গেম বা অন্য খেলা থেকে বিরত রাখতে হবে।
৫. পরিপাটি হয়ে ক্লাস করার জন্য বসাতে হবে।
৬. ভালো কাজের ক্ষেত্রে রিইনফোর্সমেন্ট বা পুরস্কার দিতে হবে।
৭. বেশি কান্নাকাটি করলে ক্লাস বন্ধ না করে মাকে টিচারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
৮. ক্লাসের জন্য সঠিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
৯. সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাসে বসতে হবে, যেমন টিচিং মেটেরিয়াল।
১০. ক্লাস চলাকালীন ফোনের ব্যবহার করা যাবে না।
সর্বোপরি স্কুল যখনই খুলুক না কেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ থাকবে, মহামারি চলাকালীন বিশেষায়িত স্কুলগুলো যাতে সুষ্ঠুভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালিত হয়, তার একটি দিকনির্দেশনা দেবেন।
মারুফা হোসেন স্কুল ফর গিফটেড চিলড্রেনের (ঢাকা ও রাজশাহী) পরিচালক
Discussion about this post