শিক্ষার আলো ডেস্ক
প্রতিবছর প্রাথমিক সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মেধাবৃত্তি ও সাধারণ বৃত্তি দিয়ে থাকে সরকার। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালে এ দুটি পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীদের পরের শ্রেণিতে অটো প্রমোশন দেওয়া হয়। ফলে পরীক্ষা না হওয়ায় ফলাফলের ভিত্তিতে মেধাবৃত্তি ও সাধারণ বৃত্তি দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, পরীক্ষা না হলেও এ দুটি বৃত্তি দেওয়া হবে। তবে কীভাবে দেওয়া হবে তার বিকল্প পথ খোঁজা হচ্ছে। সেজন্য মন্ত্রণালয় থেকে উচ্চ পর্যায়ের পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে বিদ্যমান নীতিমালার আলোকে কীভাবে বৃত্তি দেওয়া যায়, সে বিষয়ে একটি সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে করা একটি কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুর খবির চৌধুরীকে। সদস্য সচিব করা হয়েছে মাউশির এক্সেস অ্যান্ড কোয়ালিটি এসুরেন্স ইউটিনেটর উপ-পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম চৌধুরীকে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড এবং মাদরাসা অধিদফতরের একজন প্রতিনিধি। আগামী ৭ এপ্রিল কমিটির প্রথম সভা ডাকা হয়েছে।
মেধাবৃত্তির ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, মেধাবৃত্তি মূলত পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়। ২০২০ সালে যেহেতু পরীক্ষা হয়নি, বিদ্যমান নীতিমালার মধ্যেই বিকল্প কিছু খুঁজে বের করতে আমরা বসছি।
তিনি বলেন, জেএসসির মেধাবৃত্তির ক্ষেত্রে প্রাথমিক সমাপনীর ফলাফল আছে, সেটা বিবেচনা নেওয়া হতে পারে। কিন্তু প্রাথমিক সমাপনীর আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা হয়নি। সেক্ষেত্রে কী হবে? এটা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এসব বিষয় নিয়ে কমিটি আলোচনা করে বিকল্প পদ্ধতি বের করবে।
জানা গেছে, সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী, জেএসসিতে মেধাবৃত্তিপ্রাপ্ত প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে মাসে ৪৫০ টাকা দেয় সরকার। আর এককালীন অনুদান (বাৎসরিক) ৫৬০ টাকা করে দেওয়া হয়। অপরদিকে সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে মাসিক ৩০০ টাকা হারে বৃত্তি দেওয়া হয়। এছাড়া সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্তদের বাৎসরিক ৩৫০ টাকা করে দেওয়া হয়। বৃত্তিপ্রাপ্তরা পরবর্তীতে দুই বছর অর্থাৎ এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত এ বৃত্তির সুবিধা পেয়ে থাকে। রাজস্ব খাত থেকে এ বৃত্তির টাকা নির্বাহ করা হয়।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের জেএসসির পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে দেশের ৯টি শিক্ষাবোর্ডের আওতায় মোট ৪৬ হাজার ২০০ জনকে বৃত্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে মেধাবৃত্তি পায় ১৪ হাজার ৭০০ এবং সাধারণ বৃত্তি পায় ৩১ হাজার ৫০০ জন।
অন্যদিকে প্রাথমিক সমাপনীতে ট্যালেন্টপুলে মেধাবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে মাসে ৩০০ টাকা আর এককালীন অনুদান (বাৎসরিক) ২২৫ টাকা করে দেওয়া হয়। অপরদিকে সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে মাসিক ২২৫ টাকা ও বাৎসরিক ৩৫০ টাকা দেওয়া হয়। বৃত্তিপ্রাপ্তরা পরবর্তী তিন বছর অর্থাৎ জেএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত এ বৃত্তির সুবিধা পেয়ে থাকে।
২০১৯ সালের পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক সমাপনী (পিইসি) ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় ফলাফলের ভিত্তিতে সাড়ে ৮২ হাজার শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে মেধাকোটায় (ট্যালেন্টপুল) ৩৩ হাজার ৩০০ এবং সাধারণ কোটায় বৃত্তি পায় ৪৯ হাজার ২০০ জন।
Discussion about this post