বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী ভারতের পুনের সিরাম ইনস্টিটিউট অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত করোনা টিকা কোভিশিল্ডের ৬ কোটি ডোজ প্রত্যেক মাসে উৎপাদন করছে। অন্যদিকে, হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেক কোভ্যাক্সিনের ৫০ লাখ ডোজ উৎপাদন করছে।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ভ্যাকসিনের উৎপাদন এবং সংরক্ষণের জন্য অতিরিক্ত উৎপাদন স্থাপনা-রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে সরকার। নতুন করে ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট ও সংরক্ষণ স্থাপনা তৈরির জন্য দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষর অনুমোদনের দরকার।
করোনাভাইরাসে দৈনিক আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতের সরকার বর্তমানে তিনটি প্রদেশ— মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড় এবং পাঞ্জাবের ৫০টি জেলায় উচ্চ-পর্যায়ের ৫০টি মাল্টি-ডিসিপ্লিন্যারি জনস্বাস্থ্য দল গঠন করেছে।
গত বছর পুনের সিরাম ইনস্টিটিউট চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রত্যেক মাসে কোভিশিল্ডের ১০ কোটি ডোজ উৎপাদনের ঘোষণা দেয়। কিন্তু দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, সিরাম ইনস্টিটিউট এখনও সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি।
অন্যদিকে, বেঙ্গালুরুতে নিজেদের একটি ইউনিটে ভারত বায়োটেক কোভ্যাক্সিন উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও এই ইউনিটটি প্রাণীর ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। হায়দরাবাদ এবং বেঙ্গালুরুতে নিজেদের স্থাপনায় ভ্যাকসিনের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারের কাছে দেড়শ কোটি রুপি চেয়ে চিঠি লিখেছে ভারত বায়োটেক।
মঙ্গলবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৯৬ হাজার ৯৮২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ২৭ লাখ ছাড়িয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন ৪৪৬ জন। মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৪৭ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনাভাইরাস।
করোনাভাইরাসের উল্লম্ফনে ভারতে ভ্যাকসিনের চাহিদা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে দেশটির সরকার ভারতে উৎপাদিত ভ্যাকসিনের রফতানি সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করেছে।
এমনকি বিশ্বের দারিদ্র ও মধ্য-আয়ের দেশগুলোতে ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উদ্যোগ কোভ্যাক্স প্রকল্পেও ভ্যাকসিন সরবরাহ স্থগিত করেছে ভারতের সরকার।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবার বিক্রির বাজারে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চীনের গণ্ডি পেরিয়ে দ্রুতগতিতে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় পরের বছরের ১১ মার্চ করোনা প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস।
বৈশ্বিক এই মহামারি মোকাবিলায় নজিরবিহীন গতিতে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রচেষ্টা চালান বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার বিজ্ঞানীরা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে প্রয়োগও শুরু হয়েছে। ব্লুমবার্গের ভ্যাকসিন ট্র্যাকার বলছে, বিশ্বের ১৫৫টি দেশে ৬৭ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
করোনাভাইরাস মহামারির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে আসা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস বলছে, বিশ্বের দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে মঙ্গলবার। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ কোটি ২৫ লাখ ৭ হাজারের বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১০ কোটি ৬৮ লাখের বেশি।
Discussion about this post