নিউজ ডেস্ক
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেশের বৃহত্তর করোনা হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়েছে। রোববার (১৮ এপ্রিল) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন।
রাজধানীর মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পাইকারি কাঁচাবাজারের ভবনে স্থাপন করা হয়েছে হাসপাতালটি। হাজার বেডের হাসপাতালের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল’।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখানে থাকবে ১০০ শয্যার আইসিইউ, ১১২টি এইচডিইউ। এছাড়া রোগীদের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থাও রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাহিদ মালেক বলেন, গত দেড় মাসে দেশে করোনা সংক্রমণের হার কয়েকগুণ বেড়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর হার। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাত্র ২০ দিনের মধ্যে এই হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করোনার চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেক উন্নত দেশ খোলা আকাশের নিচে তাঁবু টানিয়ে তারা চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেই জায়গায় আমরা একটি উন্নত পরিবেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।
তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রতিটি শয্যায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন রয়েছে। পাশাপাশি ডায়ালাইসিসের জন্য পাঁচটি শয্যা রয়েছে। এছাড়া ১০টি ভিআইপি কেবিন ও ৮টি এসি কেবিন স্থাপন করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসি মার্কেট নির্মাণ করে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে মার্কেটটি চালু হয়নি। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে মার্কেটটিতে করোনা হাসপাতাল করার প্রস্তাব দেই।
হাসপাতাল উদ্বোধন প্রসঙ্গে এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, রোববার হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। আজ আংশিক হলেও এ মাসের শেষ নাগাদ এর কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে।
হাসপাতালটিতে যা যা থাকছে
একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, হাসপাতালটিতে ২১২ শয্যার আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) থাকছে। এছাড়া ২৫০ শয্যার এইচডিইউ (উচ্চ নির্ভরতা ইউনিট), ৫০ বেডের জরুরি বিভাগ (৩০টি পুরুষ, ২০ নারী) ও ৫৪০ (সিঙ্গেল) রুমের আইসোলেশন ব্যবস্থা এখানে রয়েছে। এই রুমগুলো হবে অনেকটা কেবিনের মতো। দ্রুতই বেডের সংখ্যা আরও বাড়বে। আইসিইউ সাপোর্টের যে ফেইজ আছে তার অধিকাংশই এরইমধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে। সেগুলো যুক্ত করে খুব দ্রুত কাজ শুরু করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, উদ্বোধনের পর দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু হবে। পুরো কাজ শেষ হওয়ার পরে সবাই বুঝতে পারবে যে কত বড় মানের একটা কিছু হলো। আমাদের কিছু জনবলও প্রয়োজন। হঠাৎ করে এত বড় হাসপাতাল সম্পূর্ণ জনবল দিয়ে চালু করাটা বাংলাদেশে চ্যালেঞ্জের। সেখানে কিছুটা সময় লাগলেও খুব দ্রুতই তা পূরণ হয়ে যাবে। আমরা আশাবাদী যে কোভিড-১৯ চিকিৎসা ম্যানেজমেন্টের জন্য এখানে ভালো কিছু করতে পারব।
রোগীরা যেভাবে ভর্তি ও সেবা নেবে
হাসপাতালটি চালুর পর রোগীরা কীভাবে ভর্তি হবে সে বিষয়টি জানিয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছেন বা উপসর্গ আছে- এমন রোগীদের এখানে চিকিৎসা দেওয়া হবে। তারা প্রথমে আমাদের ট্রায়াজে প্রবেশ করবেন। সেখানে দুটি জোন আছে। যাদের মৃদু উপসর্গ আছে বা হেঁটেই আসতে পারছে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য তাদের যদি ভর্তি প্রয়োজন না হয় তবে ভর্তি করা হবে না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হবে। পরে এসে তিনি আবার রিপোর্ট করতে পারবেন।
ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা
ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা করোনা সংক্রমিত হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আসবে তারা ট্রায়াজ-২ এ চলে যাবে। সেখানে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা আছে। ছয় বেডের একটি আইসিইউ সেটআপ থাকবে নিচ তলাতেই। সেখানে ভেন্টিলেটরের সুযোগও থাকছে। আর তাই ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডেই ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের স্ট্যাবল হওয়ার সুযোগ আছে। সেখানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পাঠিয়ে দেওয়া হবে দ্বিতীয় তলার ওয়ার্ডে। সেখানে যদি কারও অবস্থা খারাপ হয় তবে তাকে আমরা পাঠিয়ে দেবো আইসিইউ বা এইচডিইউতে। আর যদি একটু স্ট্যাবল হয় বা ঝুঁকির মাত্রা কমে আসে তবে আমরা তাদের কেবিনে দিয়ে দেবো। এই কেবিনগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেনসহ হাই-ফ্লো নজেল ক্যানোলা সুবিধা থাকবে। এক্ষেত্রে মনিটরের ব্যবস্থাও করা হবে খুব দ্রুত। ওখানে তারা কিছুটা স্ট্যাবল হলে তাদের ধীরে ধীরে ডিসচার্জ হওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এটাই আমাদের আপাতত স্টেপ-১ ও স্টেপ-২ পরিকল্পনা।
হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন
হাসপাতালটির পরিচালক আরও বলেন, এটা আসলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হাসপাতাল হতে যাচ্ছে। এখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন কাজ করে যাচ্ছে। আমিও কিন্তু আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের পক্ষেই এখানে কাজ করছি। আমাদের জনবল, আর্থিক সহায়তা, ওষুধসহ বিভিন্ন কিছু দিয়ে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। আর্মড ফোর্সেস থেকেও চিকিৎসক, নার্সসহ কিছু থাকছে। ডিএনসিসি তাদের জায়গা দিয়েছে এবং একই সঙ্গে অন্যান্য কিছু সাপোর্ট দিয়ে আমাদের সাহায্য করে যাচ্ছে। মূলত এই তিনটি প্রতিষ্ঠান মিলেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে ৫০০ চিকিৎসক, ৭০০ নার্স, ৭০০ স্টাফ এবং ওষুধ, সরঞ্জামের ব্যবস্থা করছে মন্ত্রণালয়।
Discussion about this post