অবিশ্বাস্য হলেও সত্য রাজধানীর এমপিওভুক্ত এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বেতন-ভাতা বাবদ প্রতিমাসে নেন এক লাখ বিশ হাজার টাকা। রাজধানীর ফরিদাবাদের বাংলাদেশ ব্যাংক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভাগ্যবান প্রধান শিক্ষকের নাম মোস্তফা কামাল। শুধু নিজেই বেশি টাকা নেন না, তাঁর পছন্দের শিক্ষকদেরও বেশি টাকা পাইয়ে দেন। বিধান না থাকলেও এমপিওভুক্ত করার চেষ্টা করেন।
জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য গোপন করে নিজের পছন্দে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যও নিয়োগ করেন এই প্রধান শিক্ষক। টাকার বিনিময়ে হাজার হাজার সনদ বিক্রির দায়ে সরকার বন্ধ করে দেয় ইহসান বিশ্ববিদ্য়ালয়। অভিযোগ উঠেছে, সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাসের সনদ নেন প্রধান শিক্ষক। তাঁর কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষুব্ধ শত শত অভিভাবক ও অধিকাংশ সহকর্মী। নানা অনিয়ম আর অভিযোগ থাকলেও সহকর্মীরা ভয়ে মুখ খুলতে চান না। হামেশাই মানহানির ভয় দেখান প্রতিবাদী সহকর্মীদের। কথায় কথায় শোকজ আর বরখাস্ত করা হুমকি চলে।
স্কুলটিতে বর্তমানে প্রায় তিন হাজার চারশ শিক্ষার্থী রয়েছে, যার মধ্যে ৯৫ শতাংশ বহিরাগত অর্থাৎ প্রায় নন-ব্যাংকার অভিভাবকদের সন্তান। বিদ্যালয়ের আয়ের সিংহভাগ অর্থই আসে নন-ব্যাংকার ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অথচ তাদের অভিভাবকদের মতামত প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষক রয়েছেন মোট ৭০ জন, যার মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ ১৪ জন এমপিওভুক্ত।
অবৈধভাবে বেশি বেতন-ভাতা নেয়ার বিষয়টি অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য গোপন করে তিনি ষষ্ঠ গ্রেডে বেতন-ভাতা ভোগ করছেন। অথচ সরকারি প্রজ্ঞাপনে সুষ্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, কোনো বেসরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কোনো সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চাইতে বেশি বেতন-ভাতা ভোগ করতে পারবেন না। কিন্তু প্রধান শিক্ষক থোড়াই কেয়ার করেন ওই প্রজ্ঞাপন।
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৯ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ের সরকারি বেতন-ভাতার অংশের বাইরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাড়তি ভাতা প্রদানে ইচ্ছুক হলে তার পরিমাণ এমনভাবে নির্ধারিত হবে যেন, একজন শিক্ষকের মোট প্রাপ্তি কোনভাবেই একই স্কেলভুক্ত সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকের মোট প্রাপ্তির বেশি না হয়।”
কিন্তু প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল বেতন-ভাতা বাবদ মোট এক লাখ ১৯ হাজার ৫২২ টাকা। এর মধ্যে মূল বেতনই ৬০ হাজার ৭৭০ টাকা, বাড়ী ভাড়া ত্রিশ হাজার ৩৮৫ টাকা, অন্যান্য বিশ হাজার ৭৯০ টাকা ও প্রভিডেন্ড ফান্ড ছয় হাজার ৭৭ টাকা। এর বাইরের তার রয়েছে কোচিংসহ নানাখাতে অবৈধ উপার্জন। পক্ষান্তরে এন্ট্রি লেভেলে একজন সরকারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বেতন ও সব রকমের ভাতাসহ ৭০ হাজার টাকার বেশি পান না।
এক লাখ ২০ হাজার টাকা বেতন নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকরা) এসে তথ্য যাচাই করুন। আমাকে কতৃপক্ষ যা দিচ্ছে তাই নিচ্ছি। আমি ৬ষ্ঠ গ্রেডে যে বেতন নিচ্ছি তার মধ্যে ভাতাও রয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেই এ বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক দাবি করেন, মতিঝিল মডেল কলেজ, ভিকারুননিসাতেও অনেক শিক্ষক এমন বেতন পান। আমার বেতন নিয়ে যারা এ ধরনের অভিযোগ করেছেন তারা সংকীর্ণ মনের পরিচয় দিয়েছেন।
Discussion about this post