নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনার কারণে গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের ‘অটোপাস’ দিয়ে অনেকটাই সমালোচনার মুখে পড়েছে শিক্ষা প্রশাসন। তাই আপাতত বড় কোনো পাবলিক পরীক্ষায় অটোপাসের চিন্তা তাদের নেই। ফলে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নিয়ে মহাসংকটে পড়েছে তারা। এ শিক্ষার্থীদের ক্লাস না করিয়ে কোনোভাবেই পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না। আবার করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিক্ষার্থীদের সরাসরি ক্লাসরুমে নেওয়ার চিন্তাও করতে পারছে না।
করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা দশম শ্রেণির ক্লাস এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস করতে পারেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার এই ১৪ মাস সময়ে শহরের নামি-দামি স্কুল-কলেজের স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করলেও মফস্বল ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার পুরোপুরি বাইরে রয়েছে।
জানা যায়, একজন শিক্ষার্থীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। কারণ এ দুটি পরীক্ষাই বলে দেয়, একজন শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে কোন দিকে যাবে। ফলে দুই পরীক্ষার ৪০ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা মহাদুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। কারণ এই শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস করতে পারছে না, অনেকেই পড়ালেখার বাইরে, এমনকি তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিও নেই।
আন্তশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা এখনো এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস করিয়েই পরীক্ষা নিতে চাই। সে জন্য এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে আজকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, হয়তো কালই তা বদলাতে হচ্ছে। ফলে আমরা কবে পরীক্ষা নিতে পারব সে ব্যাপারে এখনই বলা যাচ্ছে না। আমরাও করোনা পরিস্থিতির দিকেই তাকিয়ে আছি।’
শিক্ষাপঞ্জি অনুসারে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি এবং ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে এই সময়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। চলতি বছরের শুরুর দিকে করোনা সংক্রমণ কমে এলে গত ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। সে পরিপ্রেক্ষিতে এসএসসি ও সমমানের জন্য ৬০ কর্মদিবস এবং এইচএসসি ও সমমানের জন্য ৮৪ কর্মদিবসের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছিল। এরপর দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ দুটি পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসায় আবার ২২ মে পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়। ফলে আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার বর্তমান যে অবস্থা তাতে আগামী ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে কি না তা নিয়েও রয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। আর ওই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা গেলেও আগস্ট-সেপ্টেম্বরের আগে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না। যদি ২৩ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না যায়, তাহলে পরীক্ষা নিতে আরো দেরি হয়ে যাবে।
সূত্রমতে জানা যায়, শুধু এবারের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাই নয়, সব শ্রেণির ক্লাস-পরীক্ষা নিয়েই চিন্তিত শিক্ষা প্রশাসন। ফলে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে বিকল্প উপায় খুঁজতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে প্রধান করে ১১ সদস্যের কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে দুটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেছি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কোন উপায়ে পড়ালেখা চলছে এবং কিভাবে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে তা আমরা পর্যালোচনা করছি। তবে কারোনার এই সময়ে কোনো দেশই সরাসরি পাবলিক পরীক্ষা নেয়নি। আর অনলাইনে সর্বোচ্চ এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া যায়; কিন্তু রচনামূলক নেওয়া সম্ভব না। আমরা আরো কয়েকটি বৈঠক করে বিকল্প কী উপায়ে পড়ালেখা চালু রাখা যায়, সে ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পরামর্শ পাঠাব।’
Discussion about this post