আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃতীয় ও সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন জয় এলো প্রবল প্রতাপশালী বিজেপিকে হারিয়ে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি রাজ্যের ১৮টি আসন থেকে এমপি পাঠিয়েছে। কিন্তু ‘খেলা হবে’ পর্বে মমতা দেখিয়ে দিলেন তিনিই ভোটারদের মন পড়তে সবচেয়ে ভালো।
বিধানসভা নির্বাচনে টানা তৃতীয়বার জয়ী হয়ে রবিবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে নিজের অবস্থান আরও সুসংহত করলেন। এর মাধ্যমে বিজেপি ও কংগ্রেস বহির্ভূত রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজের রাজনৈতিক নেতৃত্বও প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে গেলেন।
কয়েকজন তৃণমূল এমপির মতে, এবারের নির্বাচন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জাতীয় পর্যায়ে হাজির হওয়ার মঞ্চ প্রস্তুত করবে।অবশ্য, সাবেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও দলত্যাগী শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে নিজের ভোটের লড়াইয়ে নন্দীগ্রামে হেরে গেছেন মমতা। কিন্তু এতে তার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া আটকাবে না। এবারের নির্বাচনি ফল মমতার ভাইপো অভিষেকের জন্যও বড় বিজয়। তৃণমূলকে আক্রমণ করতে বিজেপি অভিষেকের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছিল।
বিজেপি তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করার ফলে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও শীর্ষস্থানীয় বিজেপি নেতারা বাংলা চষে বেড়িয়েছেন। ‘সোনার বাংলা’র জন্য প্রচারণা চালিয়েছেন। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসনে জয়ী হওয়ায় এবার রাজ্যে সরকার গঠনের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বিজেপি নেতারা।
তৃণমূলের দলীয় সূত্রের দাবি, জাতীয় ও বিধানসভা নির্বাচনের মাঝখানে দুই বছরের ব্যবধান তাদের ‘সঠিক পথ’ নির্ধারণে সহযোগিতা করেছে। এর মধ্যে মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য মমতা একাধিক প্রকল্প চালু করেন। এগুলোর বেশিরভাগই নির্বাচনি কৌশল নির্ধারক প্রশান্ত কিশোরের মস্তিষ্কপ্রসূত।
রবিবার এনডিটিভিকে প্রশান্ত কিশোর বলেন, লোকসভা নির্বাচনের পর শুরুর দিকেই আমরা সমস্যা সম্পর্কে ভালোই অবগত ছিলাম এবং প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করি।
দিদিকে ফোন করো বা কাট মানি নেওয়া মানুষদের বাড়ি ঘেরাও করার প্রকাশ্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য। এছাড়া মমতা বেশ কয়েকজন নেতাকেও দূরে সরিয়ে দেন।
তৃণমূলের এক সিনিয়র এমপি বলেন, শুভেন্দু অধিকারী উপ-মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। তার এই দাবি না মানতে মমতাকে বলেছিলেন প্রশান্ত।
আর যখন শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেন মমতা ঘোষণা দেন তিনি নন্দীগ্রাম থেকে নির্বাচন করবেন। এই নন্দীগ্রামে ভূমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে মমতা রাজনৈতিক উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছিল। দক্ষিণ বঙ্গে তার উপস্থিতি ছিল মূলত বিজেপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ময়দান ছেড়ে দেওয়া ঠেকানো।
তার দল এবারের নির্বাচনকে পুরো বিজেপির বিরুদ্ধে এক নারীর লড়াই হিসেবে সামনে তুলে ধরে। ‘বাংলা চায় তার নিজের মেয়ে’ স্লোগান, বিজেপি মাঠপর্যায়ে দেলীয় বিশৃঙ্খলা এবং ভুল প্রার্থীর মনোনয়ন মমতার গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়িয়ে দেয়।
মমতাকে বড় ধরনের বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিশেষ করে ঢালও দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচার পরায়নতার। প্রার্থী তালিকায় ব্যাপক পরিবর্তন আনে তৃণমূল। বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র তারকাকে মাঠে নামানো হয় তাদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোর জন্য। চেষ্টা করা হয় নির্বাচনকে বাঙালি ও বহিরাগতদের মধ্যে লড়াই হিসেবে তুলে ধরতে। মুসলিমদের ভোট নিজের পক্ষে সংহত করতে পেরেছেন মমতা।
এখন সবার নজর ২০২৪ সালের নির্বাচনের দিকে। কংগ্রেস দুর্বল হওয়ার কারণে মমতার দল তৃণমূল নিজেদেরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করবে। মমতাও দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতা ওমর আব্দুল্লাহ ও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব থ্যাকারের সঙ্গেও আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখছেন। আগামী তিন বছর সুযোগ পেলে বিজেপি বিরোধিতার ক্ষেত্রে নেতৃত্বধায়ী ও আশ্রয়স্থলের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চাইতে পারেন এই নেত্রী। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
Discussion about this post