নিউজ ডেস্ক
করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৫ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি রয়েছে। এছাড়া সুস্থ হওয়ার পর প্রায় ৫৭ শতাংশ শারীরিক দুর্বলতা, ব্যাথা, দুশ্চিন্তাসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।
২০২০ সালের অক্টোবর মাস থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাত মাস ধরে চলমান এ গবেষণায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের ১ হাজার ৫৩০ জনের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়।
শিল্পপ্রতিষ্ঠান এস. আলম গ্রুপ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৭০ শতাংশই চাকুরিজীবি। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের প্রধান লক্ষণগুলো ছিলো জ্বর (৯২ শতাংশ), কাশি (৬৩ শতাংশ), ঘ্রাণশক্তি লোপ (৫২ শতাংশ)। এছাড়াও গলাব্যথা, মাথাব্যথা, পাতলা পায়খানা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ দেখা গেছে। আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে আগে থেকেই ১৫ শতাংশ ডায়াবেটিস, ২৩ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপ, ৯ শতাংশ শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা এবং হৃদরোগের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতায় ভুগছিলেন।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পর তাদের প্রায় ৫৭ শতাংশের কোন না কোন উপসর্গ দীর্ঘদিন যাবৎ বিদ্যমান ছিল। তারমধ্যে শারীরিক দুর্বলতা, ব্যাথা, দুশ্চিন্তা, অবসাদ, কাশি, চুল পড়ে যাওয়া ইত্যাদি। সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হল, গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৫ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি রয়েছে। বিশেষকরে আরটিপিসিআর টেস্টে পজিটিভ রোগীদের প্রায় ৯০ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। এছাড়াও আরটিপিসিআর টেস্টে নেগেটিভ শনাক্ত হওয়া এমন ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ২৬ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি রয়েছে।
প্রধান গবেষক ডা. মো. আব্দুর রব বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছি। কোভিড-১৯ কে আরও বিষদভাবে জানার লক্ষ্যে রোগীদের লক্ষণ, সেরে ওঠার পর দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতি নিয়ে এই গবেষণা সময়োপযোগী।
গবেষণাকর্মটির সমন্বয়ক ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান বলেন, দেশের বাস্তবতায় চিকিৎসা বিজ্ঞানকে উন্নত করার জন্য এ ধরনের গবেষণার কোন বিকল্প নেই। জানামতে জেলা পর্যায়ের কোন হাসপাতালে নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণার এটিই প্রথম। আশা করি, আমাদের এই উদ্যোগ চিকিৎসা ক্ষেত্রে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত গবেষণাকর্মকে উৎসাহিত করবে।
গবেষণা দলের আরেক সদস্য ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, এই গবেষণার অন্যতম সাফল্য হল আক্রান্ত রোগীদের একটি বৃহৎ অংশকে এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং তাদেরকে সরাসরি ইন্টারভিউ ও পরীক্ষার মাধ্যমে তথ্যগুলো সংগহ হয়েছে। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল সরকারের চলমান কোভিড-১৯ টিকা কর্মসূচীকে আরও গ্রহণযোগ্য ও গতিশীল করবে।
তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ডা. এম এ কবির চৌধুরী বলেন, গবেষণায় সংগৃহীত তথ্য ও উপাত্তসমূহ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেয়েছি, যেমন ৬ মাসের অধিক সময় পর্যন্ত আরটিপিসিআর পজিটিভ রোগীদের শরীরে আ্যান্টিবডির উপস্থিতি। এ সকল তথ্যসমূহ আরও বিশদে বিশ্লেষণ করে আমরা যথাযথভাবে আন্তর্জাতিক জার্নালে উপস্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। যা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত গবেষণায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমুন্নত করবে।
এ গবেষণায় আরও যুক্ত ছিলেন ডা. অমি দেব ও ডা. মোরতাহিনা রশিদ।
Discussion about this post