আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি দখলদারদের তাণ্ডবের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসছে মুসলিম বিশ্ব। মসজিদের ভেতর নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব, ইরান, তুরস্ক, বাংলাদেশসহ প্রায় সব মুসলিম দেশ। তবে এই ইস্যুতে অনেকটাই নমনীয় সুর পশ্চিমাদের। মসজিদে ইসরায়েলি তাণ্ডব নিয়ে বেশি কিছু না বললেও তারা সরব হয়েছে ইসরায়েলের দিকে হামাসের রকেট ছোড়া নিয়ে। এ বিষয়ে প্রায় একই ধরনের কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো।
জেরুজালেমের শেখ জাররাহ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে জোর-জবরদস্তি চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। সোমবার ভোরে পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ঢুকে তাণ্ডব চালানোর পর সন্ধ্যায় গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে তারা। এতে প্রাণ হারিয়েছে শিশুসহ অন্তত ২২ জন নিরীহ ফিলিস্তিনি।
সৌদি আরব
আল-আকসায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব। মঙ্গলবার ভোরে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলিদের এই কর্মকাণ্ড গোটা মুসলিম বিশ্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আল-আকসা মসজিদে মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষানীতি লঙ্ঘন করে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে সৌদি আরব। এই ঘটনার জন্য ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সমঝোতা লঙ্ঘন করে যেকোনো ধরনের সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধের উদ্যোগ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
তুরস্ক
গাজায় ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। হামলার পর তিনি ফিলিস্তিনি নেতাদের কাছে ফোন করে ইসরায়েলের ‘সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব’ প্রতিরোধে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার কাছে করা ফোনকলে তিনি ফিলিস্তিনিদের জন্য তুরস্কের সহযোগিতা আরও বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
ইরান
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘মানুষের ভূমি ও বাড়ি চুরি’ এবং একটি ‘বর্ণবাদী সরকার ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার অভিযোগ করেছেন।
ইসরায়েল অবৈধভাবে দখল করে রাখা এলাকার বাসিন্দাদের টিকা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে এবং আল-আকসা মসজিদের ভেতর ‘নিরীহ মুসল্লিদের’ ওপর গুলি চালিয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
শনিবার ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জাতিসংঘে ফোন করে আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি তাণ্ডবের প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং এটি ‘যুদ্ধাপরাধ’-এর সামিল বলে মন্তব্য করেছেন।
মিসর
মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ‘আল-আকসা মসজিদে ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন আক্রমণ’-এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
মিসরের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাজিহ আল-নাজারি সোমবার কায়রোতে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত আমিরা ওরনের সাথে দেখা করে বলেছেন, তারা ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান ও এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন।
বাংলাদেশ
আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা, শেখ জাররাহ এলাকা থেকে ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।
সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মনে করে, ইসরায়েলি বাহিনীর এসব ঘটনা মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির চরম লঙ্ঘন। এটি বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত মানুষের অনুভূতিতেও আঘাত করেছে।
এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানো, দখলকৃত এলাকায় ব্যক্তিগত সম্পত্তি জোরপূর্বক জব্দ করা এবং যুদ্ধাপরাধ হতে পারে – এমন কর্মকাণ্ড থেকে ইসরায়েলকে বিরত রাখার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
ইন্দোনেশিয়া
বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ ইন্দোনেশিয়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, আল-আকসা মসজিদ ও শেখ জাররাহ এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উৎখাত বরদাশত করা হবে না।
এক টুইটে ইন্দোনেশীয় প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেন, ইন্দোনেশিয়া ইসরায়েলের এ ধরনের পদক্ষেপের নিন্দা এবং বারবার আইন লঙ্ঘন করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আহ্বান জানিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া সবসময় ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্র
ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ না জানিয়ে উল্টো সহিংসতা বৃদ্ধির জন্য ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসকে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইসরায়েলে একঝাঁক রকেট হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি অগ্রহণযোগ্য উস্কানি।
তিনি বলেন, আমরা সব পক্ষ থেকে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানাই। তবে ইসরায়েলের নিজস্ব জনগণ ও ভূমি রক্ষার বৈধ অধিকারকেও স্বীকৃতি দিচ্ছি।
ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যার বিষয়ে প্রশ্ন করলে এ মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, উভয় পক্ষের প্রাণহানিই গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে।
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাষ্ট্রের মতো যুক্তরাজ্যও সহিংসতার জন্য ফিলিস্তিনিদেরই দায়ী করেছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেছেন, জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ জায়গাগুলোতে হামাসের রকেট হামলার নিন্দা করছে যুক্তরাজ্য।
এক টুইটে তিনি বলেন, জেরুজালেম ও গাজায় চলমান সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। উত্তেজনা কমাতে উভয় পক্ষ থেকে আমাদের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে হবে এবং বেসামরিক মানুষজনকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর অবসান ঘটাতে হবে।
জার্মানি
বিমান হামলায় গাজায় হতাহতের ঘটনার পর সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি।
দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস টুইট বার্তায় বলেছেন, গাজা থেকে ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে রকেট হামলা এবং তার পাল্টা জবাবে গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা কোনোটিই গ্রহণযোগ্য ও ন্যায়সঙ্গত নয়। এমন সংঘাত কখনই সমাধানের পথ বের করে না। এর পরিবর্তে যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপের দিকে এগোতে হবে।
ফ্রান্স
ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সোমবার বলেছেন, ফ্রান্স দ্রুততম সময়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানো এবং যেকোনো ধরনের উস্কানি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে।
জাতিসংঘ
পূর্ব জেরুজালেমের সাম্প্রতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর থেকে উৎখাত বন্ধ করতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেয়েরেস।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম দেখাতে হবে এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে সম্মান দিতে হবে।
সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি, এএনআই, আরব নিউজ, জাগো নিউজ
Discussion about this post