খেলাধূলা ডেস্ক
নাটকের চেয়েও নাটকীয় ।এমন মহা নাটকীয় ম্যাচও হয়! পুরো ম্যাচজুড়ে উত্তেজনা। টাইব্রেকারে একের পর এক শট হলো। কারও হার মানার লক্ষ্মণ নেই। কিন্তু ২২তম শটে গিয়ে বাজিমাত করলো ভিয়ারিয়াল। শেষ পর্যন্ত মহা নাটকীয় ম্যাচটিতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে টাইব্রেকারে ১১-১০ গোলে হারিয়ে ইউরোপা লিগের শিরোপা জিতে নিলো স্প্যানিশ ক্লাব ভিয়ারিয়াল।
পোল্যান্ডের এনার্জা গদানস্ক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ইউরোপের দ্বিতীয় সারির টুর্নামেন্ট, ইউরোপা লিগের ফাইনাল। মুখোমুখি ইংল্যন্ডের ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং স্প্যানিশ ক্লাব ভিয়ারিয়াল। করোনা মহামারির মধ্যে দুই বছর পর এই প্রথম দর্শকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হলো ইউরোপা লিগের ফাইনাল। মহা নাটকীয় এই ম্যাচটি নির্ধারিত সময় ১-১ গোলে ড্র থাকার পর গড়াল অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে।
সেখানেও হলো না নিষ্পত্তি। কেউ কারো জাল খুঁজে পেলো না। এরপর ম্যাচ গড়াল ভাগ্য নির্ধারণী টাইব্রেকারে। যেখানে দুই দল শট নিলো মোট ২২টি। ২২তম শটটি নিতে আসেন ম্যানইউ গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়া। এক গোলরক্ষক শট নিচ্ছেন আরেক গোলরক্ষককে। কিন্তু ডি গিয়াকে এ পর্যায়ে এসে ঠেকিয়ে দিলেন ভিয়ারিয়াল গোলরক্ষক জেরোনিমো রুলি। বাজিমাত করে দিলেন ২২তম শটে এসে এবং সঙ্গে সঙ্গে বিজয় উল্লাসে মেতে উঠলো ভিয়ারিয়াল ফুটবলাররা।
ভিয়ারিয়ালের উনাই এমরির সামনে প্রথম ম্যানেজের হিসাবে চারবার ইউরোপা লিগ জিতে ইতিহাস গড়ার হাতছানি ছিল, সঙ্গে ইউনাইটেডের সামনে ছিল চার বছর পর প্রথম শিরোপা জয়ের সুযোগ। ঐতিহাসিক পেনাল্টি শ্যুট আউটের পর শেষ হাসি হাসলেন এমরিই, জিতে নিলেন তার চতুর্থ ইউরোপা শিরোপা।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড অধিনায়ক হ্যারি মাগুইর সম্পূর্ণ ফিট না হওয়ায় তাকে বেঞ্চে রেখেই মাঠে নামে ওলে গানার সোলশায়েয়েরের দল। প্রথম একাদশে এডিনসন কাভানি, মার্কাস র্যাশফোর্ড, ব্রুনো ফার্নান্ডেজ ও মেসন গ্রিনউডকে দলে রেখে নিজের মনোভাব স্পষ্ট করে দেন সোলশায়ের। অপরদিকে ভিলারিয়ালের হয়ে বিস্ময়বালক ইয়েরেমি পিনো সর্বকনিষ্ঠ স্প্যানিশ ফুটবলার হিসাবে কোন ক্লাবের হয়ে কোন বড় ইউরোপিয়ান ফাইনালে মাঠে নামেন এই ম্যাচে।
ম্যাচের শুরু থেকেই রাশ নিজেদের হাতে রেখেছিল ইউনাইটেড। বল দখলের লড়াইয়ে তারা প্রতিপক্ষের চেয়ে এগিয়েই ছিল। তবে পরিচিত স্প্যানিশ ঘরানার পাসিং ফুটবল ও জমাট রক্ষণে ভর করে ম্যাচে টিকে থাকে ভিয়ারিয়াল। অবশেষে ২৯ মিনিটের মাথায় কিছুটা ম্যাচের গতির বিপরীতেই ইউনাইটেডের ভুলের সুযোগ নিয়ে মৌসুমে নিজের ৩০তম গোল করে হলুদ সাবমেরিনদের এগিয়ে দেন জেরার্ড মোরেনো।
ইউনাইটেডের হয়ে গ্রিনউডকে দুর্দান্ত ছন্দে দেখালেও গোলের দরজা খুলতে ব্যর্থ হন রেড ডেভিলসরা। প্রথমার্ধ শেষ হয় ভিয়ারিয়ালের পক্ষে ১-০ গোলে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে সর্বশক্তি দিয়ে ভিয়ারিয়ালের গোলে একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে ইউনাইটেড। ৫৪ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে বল এসে পড়ে কাভানির পায়ে। ভিয়ারিয়ালের গোলে বল জড়াতে কোনোরকম ভুল করেননি এই অভিজ্ঞ উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। সমতায় ফিরে আসে ম্যানইউ।
এরপর ম্যাচ যতই এগোয়, তা ফুটবলের বদলে কুস্তির আখড়ায় পরিণত হয়। দ্বিতীয়ার্ধ শেষে আর কোন গোল না হওয়ায়, ম্যাচ গড়ায় এক্সট্রা টাইমে। খানিকটা অদ্ভুদভাবেই দুই দলের চারবার সাক্ষাৎই গোলশূন্য শেষ হয়। ইতিহাস বজায় রেখে এক্সট্রা টাইমের পরও ম্যাচ ড্রয়ে শেষ হয়। তবে এইবার অবশেষে গোলশূন্য ম্যাচের প্রথা ভাঙল। ইউরোপা লিগের শিরোপা নির্ধারণের লড়াই গড়ায় পেনাল্টির লটারিতে।
সেখানে দুই দলই আশ্চর্যজনকভাবে নিজেদের প্রথম ১০ পেনাল্টি কিকেই গোল করতে সফল হয়। তবে শেষমেশ ১১ নম্বর শটে ইউনাইটেড গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়ার শট বাঁচিয়ে দেন রুলি। ফলে অবশেষে ইউরোপা লিগের শিরোপা জিতে নেয় স্পেনের ক্লাবই। এ নিয়ে টানা ১০ বার ইংল্যান্ডের কোন দলকে ইউরোপিয়ান ফাইনালে হারায় স্পেনের ক্লাব।
ভিয়ারিয়ালের হয়ে টাইব্রেকারে প্রথম ৫টি স্পট কিকে গোল করেন জেরার্ড মোরেনো, রাবা, পাচো অ্যালকাসার, আলবার্তো মোরেনো, দানি পারেজো। ম্যানইউর হয়ে প্রথম ৫টি স্পট কিক নেন হুয়ান মাতা, অ্যালেক্স টেলেস, ব্রুনো ফার্নান্দেজ, মার্কাস রাশফোর্ড, এডিনসন কাভানি।
এরপরই শুরু হলো সাডেন ডেথ। দুই দলই একটি করে কিক নেয়ার সুযোগ পাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না কেউ মিস করছে, ততক্ষণ চলতেই থাকবে। ইউরোপা লিগের ফাইনালে তেমনটাই চলছিল। ১১ নম্বর শট পর্যন্ত গড়ায় খেলা। পরের ৬ শটে ভিয়ারিয়ালের হয়ে গোল করেন মোই গোমেজ, রাউল আলবিওল, ফ্রান্সিস কোকুয়েলিন, মারিও, পাউ তোরেস, জেরোনিমো রুলি। ৬টি শটেই বল জড়িয়ে গেলো ম্যানইউর জালে।
ম্যানইউর হয়ে সাডেন ডেথে শট নেন ফ্রেড, ড্যানিয়েল জেমস, লুক শ, অ্যাক্সেল তানজেবে, ভিক্টর লিন্ডেলফ এবং ডেভিড ডি গিয়া। ডি গিয়ার শটটিই ঠেকিয়ে দেন ভিয়ারিয়াল গোলরক্ষক জেরোনিমো রুলি।
Discussion about this post