শিক্ষার আলো ডেস্ক
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার (৩১ মে) মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা বৈঠকে অংশ নেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় আলোচনা করেছি, বর্ডারিং এরিয়ায় যে জেলাগুলো আছে, সেখানে কোভিডের সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে আমি অবহিত করেছি। উনি বলেছেন, লকডাউন ৬ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে আরও বেশি পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশনা দিয়েছেন। বলেছেন, আরও বেশি করে প্রচার-প্রচারণা করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘চীনের ভ্যাকসিন যদি চলে আসে, যেটা আমরা এখন পাওয়ার পথে, এগ্রিমেন্টের পথে। এগ্রিমেন্ট হওয়ার পর আশা করি, জুন মাসে ৫০ লাখ, জুলাই মাসে ৫০ লাখ এবং আগস্টে ৫০ লাখ ডোজ আমরা পেতে পারি। প্রথমদিকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সেই টিকা দেয়ার ব্যবস্থা আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করবো। শিক্ষকদের আমরা দিচ্ছি। আমরা চাই, ভ্যাকসিন নিয়ে তারা স্বাভাবিক লেখাপড়া শুরু করুক। এক বছর লেখাপড়ায় বিঘ্ন হয়েছে।’
‘ফাইজারের টিকা যেটা এসেছে সেটা দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সেটা আমরা নিয়মমাফিক দিয়ে যাব। সিরিয়ালওয়াইজ দিয়ে যাব। সেই সিরিয়ালে যদি কোনো ছাত্র পড়ে তাদের আমরা অগ্রাধিকার দেয়ার চেষ্টা করবো। পর্যায়ক্রমে আমরা ছাত্রদের বিশেষ করে যেখানে লেখাপড়াটা তাড়াতাড়ি শুরু করতে পারেন সেদিকে আমরা মনযোগী হব। অন্যান্য যারা আছেন তারাও পাবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘মেডিকেলসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে। আমরা চাই, সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করুক। এজন্য যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আছে সরকারি-বেসরকারি, ছাত্রছাত্রী-শিক্ষক সবাইকে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়ার চেষ্টা করব।’
তিনি বলেন, ‘সামনে বেশি ভ্যাকসিন আসবে বলে আশা করছি। আলোচনা যেটা হয়েছে- রাশিয়ান ভ্যাকসিনেরও অগ্রগতি লাভ করেছে, আমরা এগ্রিমেন্ট পর্যায়ে চলে গেছি। আশা করি- ওখান থেকেও আমরা হয়তো তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন পাব।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের ভ্যাকসিন অনেক আছে। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কয়েক লাখ টিকা লাগবে, সেটি আমরা দিয়ে দিতে পারব। আমরা তো চীনে দেড় কোটি টিকা অর্ডার করেছি। রাশিয়ার কাছ থেকে ওরকমই আশা করছি। ইতোমধ্যে চেষ্টা চলছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিয়ে। ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে, আমরা কথা বলছি, এগ্রিমেন্ট করেছি সেই ভ্যাকসিন যেন তাড়াতাড়ি দিয়ে দেয়া হয়।’
সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী জেলাগুলোতে লকডাউন চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
সীমান্তবর্তী জেলায় লকডাউন দেয়া হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আস্তে আস্তে (বেশি সংক্রমণ ধরা পড়া) সবগুলো জেলায়ই দেয়া হবে। মন্ত্রিপরিষদের সঙ্গে আলাপ করে সময়টা জানাব। আমাদের পরামর্শ থাকবে যে কয়টি জেলায় কোভিডের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী সেগুলোকে লকডাউন দিয়ে দেয়া।’
তিনি বলেন, ‘দেরি করলে বাড়ার সম্ভাবনা আছে, সংকট তৈরির সম্ভাবনা আছে। উনাদের কমিটি আছে, তারা একটি প্ল্যান-প্রোগ্রাম দেবে। রাজশাহী জোনে ফলমূল হয়, এখন আম-লিচুর সিজন। সেখানে তিন-চার কোটি টাকার বেচা-বিক্রি হয়। সেখানে স্ট্রিক লকডাউন দিলে চাষিরা, ব্যবসায়ীরা সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এটি তারা মাথায় রেখে কাজ করছেন। আমাদের পরামর্শ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লকডাউন দিয়ে দেয়া উচিত, যাতে সারাদেশে এটা ছড়িয়ে না পড়ে।’
‘করোনা যে দেশে বৃদ্ধি পেয়েছে সে দেশের অর্থনীতি কিন্তু সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা চাই না আমাদের ইকোনমি ক্ষতিগ্রস্ত হোক। আমাদের উন্নয়ন অব্যাহত আছে। করোনা কন্ট্রোল আছে বিধায় সম্ভব হচ্ছে।’
টিকা হাতে এলে ফের নিবন্ধন চালু
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়ার ভ্যাকসিন জি-টু-জি পদ্ধতিতে আসবে। উৎপাদনের প্রস্তাবও আমরা দিয়েছি। সেই বিষয়টি একটু সময় নেবে। এখানে ভ্যাকসিন উৎপাদন করার যে ফ্যাক্টরি লাগে তা স্থাপন করতে হবে। এখানে যেগুলো আছে সেগুলো দিয়ে চলবে কি-না রাশিয়ার বিশেষজ্ঞরা দেখে যদি সংযোজন করতে হয় এরপর কাজে নেবে। ওই সময় পর্যন্ত বসে থাকলে চলবে না। এর মধ্যে আমরা ভ্যাকসিন নিয়ে নেব। উৎপাদনের প্রক্রিয়াটা চলমান থাকবে। রাশিয়ার সঙ্গে নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট হয়েছে, এগ্রিমেন্টে সই হলে ক্রয়ের বিষয়টি বাস্তবায়িত হবে।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের পাঁচ কোটি লোককে টিকা দেয়া প্রয়োজন। এই পাঁচ কোটি লোককে টিকা দিলে দেশ সুরক্ষিত হয়ে যাবে। টিকা হাতে এলে নিবন্ধন চালু হয়ে যাবে।’
Discussion about this post