২০২১-২০২২ অর্থ বছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ওপর প্রস্তাবিত ১৫% কর বাতিলের দাবিতে ছাত্র সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। শুক্রবার (৪ জুন) বিকেল পৌনে পাঁচটায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করে সংগঠনটি।
সমাবেশ সঞ্চালন করেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, এ বাজেটকে ব্যবসায়ী আর পুঁজিবাদী সমাজ অভিনন্দন জানিয়েছে কিন্তু সাধারণ মানুষ এ বাজেট মেনে নেয়নি। কারণ তাদের জন্য বাজেটে কোনও অংশ নেই। উল্টো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ার প্রস্তাবনা এসেছে। এ বাজেটের মাধ্যমে ঋণ আর ঘাটতির বোঝা সাধারণ জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থাকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার যে কথা ছিলো তা না করে শিক্ষাখাতকে বাণিজ্যিকীকরণ করা হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ১৫% করের প্রস্তাবনা দিয়েছে তা আমরা কখনোই মেনে নেবো না। অতীতে ছাত্রসমাজ মেনে নেয়নি, এখনও তারা মেনে নেবে না। শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ করার কোনও পায়তারা করা হলে তা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। বরং রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে এ দাবি আদায় করতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।
এসময় তিনি আরও বলেন, শিক্ষাখাতের সঙ্গে বিভিন্ন খাত যোগ করে জনগণের চোখে ধুলা দেওয়া হচ্ছে। দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বাড়তি বিভিন্ন খাতের সঙ্গে সংযোগ করে জনগণের চোখে ধুলা দেওয়া হচ্ছে। জিডিপি বাড়ছে বাড়ছে বলে চিল্লানো হচ্ছে কিন্তু এত জিডিপি বাড়ে মানবসম্পদের কোন উন্নয়ন হচ্ছে না কেন?’
ছাত্র ফ্রন্টের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সংসদের সভাপতি ইন্দ্রনীল দেবনাথ বলেন, ‘কয়েকটি বিষয়ের প্রতি নজর দিলে বুঝতে পারবেন আমরা কেন আন্দোলন করছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে পরিচালিত হয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মালিক কারা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়ের উৎস কী,সরকারের কতটুকু নিয়ন্ত্রণে আছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইন বহির্ভূতভাবে ব্যবসা করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। গতকাল বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর করারোপের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় এটা কোনও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়, এটা মুনাফা অর্জনের কারখানা। ইউজিসি, সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একমাত্র আয়ের উৎস শিক্ষার্থীদের বেতন। সুতরাং ভ্যাট শিক্ষার্থীদেরকে দিতে হবে। আর তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর করারোপের যে প্রস্তাবনা তা বাদ দিতে হবে।
একই সময়ে একই দাবিতে এর পাশেই সমাবেশ করে ছাত্র ইউনিয়নের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংসদ। এখানে সঞ্চালনা করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাংগঠনিক সম্পাদক রেশমা সাবা।
সমাবেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি তামজিদ হায়দার চঞ্চল বলেন, ‘গতকাল বাজেটের মাধ্যমে সরকার শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে জাস্টিফাই করেছে। আর যদি এই বাজেট পাশ হয়, তাহলে অফিসিয়ালি শিক্ষা পণ্য হিসেবে পরিণত হবে। এর মাধ্যমে সরকার শিক্ষা সংকোচন নীতির পায়তারা করছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বলা আছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। আর যদি তারা বুঝতে পারে যে এগুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়, তাহলে কেন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই করোনা পরিস্থিতি যখন শিক্ষার্থীদের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা উচিৎ ছিলো, তখন সরকার শিক্ষার্থীদের ওপর কর আরোপ করছে। আমরা এই প্রস্তাবিত বাজেট তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। যদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত কর বাতিল না হয় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ পূর্বের ন্যায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে।’
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ পার্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মঈন হোসেন মাইন প্রমুখ।সমাবেশ শেষে পৃথকভাবে শাহবাগ থেকে দুটি মিছিল শুরু করে টিএসসিতে গিয়ে শেষ করে সংগঠন দুটি। সৌজন্যে-বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post