খেলাধূলা ডেস্ক
একদিকে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল, অন্যদিকে সর্বোচ্চ তিনবারের শিরোপা জয়ী দল জার্মানি। ফলে লড়াই যে হবে উত্তেজনাপূর্ণ, তার আভাস ছিল আগেই। মাঠের খেলায়ও মিলল এর ছাপ। দুই দলের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে মিলেছে রোমাঞ্চকর এক লড়াই দেখার সুযোগ।
যেখানে ছয় গোলের ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে চলতি ইউরো কাপে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে জার্মানি। নিজেদের ইউরোর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হালি তথা চার গোল হজম করে ম্যাচটি ৪-২ গোলে হেরেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল।
শুধু তাই নয়, ইউরো কাপের ইতিহাসের প্রথম ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে এক ম্যাচে চার গোল হজমের বিব্রতকর রেকর্ডটিও নিজেদের করে নিয়েছে পর্তুগাল। এছাড়া এ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার কোনো মেজর টুর্নামেন্টে (ইউরো অথবা বিশ্বকাপ) এক ম্যাচে চার গোল হজম করল তারা।
এর আগে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে জার্মানির কাছেই চার গোল হজম করেছিল পর্তুগাল। সেদিন জার্মানির জয় ছিল ৪-০ গোলে। এ জয়ের সুবাদে পর্তুগালের বিপক্ষে ২১ বছর ধরে অপরাজিত থাকল জার্মানি। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে পর্তুগালের সবশেষ জয় ছিল ২০০০ সালে।
অথচ আলিয়াঞ্জ এরেনায় হওয়া ম্যাচটিতে বেশি গোল করেছে পর্তুগালের খেলোয়াড়রাই। বিশেষ করে প্রথমার্ধে হওয়া তিন গোলের তিনটিই ছিল তিন পর্তুগিজ খেলোয়াড়ের। কিন্তু এর মধ্যে দুইটিই ছিল আত্মঘাতী। ফলে ২-১ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যেতে হয়েছে ইউরোর বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের।
পরে দ্বিতীয়ার্ধেও হয়েছে সমান তিন গোল। যেখানে দুই গোল করে ম্যাচের ফল নিজেদের পক্ষে করে নিয়েছে জার্মানি। ম্যাচে এক গোল ও এক এসিস্ট করে ৪-২ গোলে পরাজয়ের সাক্ষী হতে হয়েছে পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। সবমিলিয়ে ম্যাচের ছয় গোলের মধ্যে চারটিই ছিল পর্তুগালের খেলোয়াড়দের।
কিন্তু সেই চার গোলের দুইটি আবার নিজেদের জালেই ঢুকিয়েছেন রুবেন ডিয়াজ ও রাফায়েল গুইরেইরো। যে কারণে দ্বিতীয়ার্ধে জার্মানির দুই খেলোয়াড় গোল করেও, তারা ম্যাচটি জিতেছে ৪-২ গোলের ব্যবধানে। জার্মানির পক্ষে গোল দুইটি করেছেন কাই হাভার্জ ও রবিন গোসেনস।
ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই প্রথম গোল করে ফেলেছিল জার্মানি। দুর্দান্ত গতিময় আক্রমণে পর্তুগালের রক্ষণকে এলেমেলো করে দিয়ে লাফিয়ে ওঠা ভলিতে বল জালে জড়িয়েছিলেন রবিন গোসেনস। কিন্তু সেই আক্রমণের শুরুতে অফসাইডে ছিলেন সার্জি জিনাব্রি। ফলে বাতিল হয়ে যায় সেই গোল।
মিনিট দশেক পর উল্টো প্রথম বৈধ গোলের দেখা পায় পর্তুগাল। সেই গোলের আক্রমণের শুরুটা ছিল জার্মানির কর্নার কিক থেকে। টনি ক্রুসের নেয়া কর্নার হেডে ক্লিয়ার করেন রোনালদো। সেখান থেকে বল ধরে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যান বার্নার্দো সিলভা।
তাকে সঙ্গ দিতে সামনে এগিয়ে যান ডিয়োগো জোতা। পরে সুবিধামতো জায়গায় বলটি জোতার উদ্দেশ্যে বাড়িয়ে দেন বার্নার্দো। ততক্ষণে নিজেদের ডি-বক্স থেকে জার্মানির ডি-বক্সে পৌঁছে যান রোনালদো। জোতার এগিয়ে দেয়া বলে পা ছুঁইয়ে দলকে লিড এনে দেন পর্তুগালের অধিনায়ক।
জাতীয় দলের হয়ে এটি তার ১০৭তম গোল। আর মাত্র দুই গোল হলেই ইরানের আলি দাইয়ের করা ১০৯ গোলের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন রোনালদো। এছাড়া এই গোলের মাধ্যমে ইউরো ও বিশ্বকাপ মিলে মিরোস্লাভ ক্লোজার করা ১৯ গোলের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন সিআরসেভেন।
অবশ্য এই গোলের লিডের আনন্দ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি পর্তুগাল। একের পর এক আক্রমণে তাদের রক্ষণভাগের নাভিশ্বাস তুলে ফেলেছিল জার্মানি। যার সুফল তারা পায় ৩৫ মিনিটে গিয়ে। জশুয়া কিমিচের দেয়া ক্রসে ভলি করেন গোসেনস। সেই বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালেই ঢুকিয়ে দেন রুবেন ডিয়াজ।
পর্তুগালের হতাশা আরও বাড়ে চার মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয় আত্মঘাতী গোল হজম করার মাধ্যমে। এবার প্রতিপক্ষের হয়ে স্কোর করেন গুইরেইরো। ডি-বক্সের মাঝামাঝি থাকা জিনাব্রির উদ্দেশ্যে ক্রস দিয়েছিলেন থমাস মুলার। কিন্তু মাঝপথে সেটি ফেরাতে গিয়ে উল্টো আত্মঘাতী গোলই করে বসেন গুইরেইরো।
যার ফলে নিজেরা কোনো গোল না করেও প্রথমার্ধে ২-১ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় জার্মানি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে আর অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়নি তাদের। ম্যাচের ৫১ মিনিটের মাথায় মুলারের কাছ থেকে বল পেয়ে বাম পাশ দিয়ে নিচু ক্রস বাড়ান গোসেনস। ছয় গজের বক্সে অপেক্ষায় থাকা হাভার্জ স্কোরলাইন করেন ৩-১।
চতুর্থ গোলের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি জার্মানদের। সাজানো গোছানো আক্রমণে ম্যাচের ৬০ মিনিটের সময় হালিপূরণ করে তারা। এবার জশুয়া কিমিচের ক্রসে লাফিয়ে ওঠা হেডারে স্কোরশিটে নাম তোলেন পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা রবিন গোসেনস।
চার গোল দিয়ে দেয়ার পর ১৩ মিনিটের মধ্যে চারজন খেলোয়াড় পরিবর্তন করেন জার্মান কোচ জোয়াকিম লো। যার প্রভাব পড়ে জার্মানির মাঠের খেলায়ও। শুরুর গতিময় আক্রমণ আর শেষদিকে দেখা যায়নি। উল্টো ৬৭ মিনিটের সময় দ্বিতীয় গোল হজম করে তারা। রোনালদোর এসিস্ট থেকে পর্তুগালের দ্বিতীয় গোলটি করেন ডিয়োগো জোতা।
বাকি সময়ে ব্যবধান কমানোর প্রাণপন চেষ্টা করেছে ইউরোর বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু গোলের দেখা আর পায়নি। ফলে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয় দিয়ে যাত্রা শুরুর পর দ্বিতীয় ম্যাচেই ৪-২ গোলের ধাক্কা খেতে হলো তাদের। এবার শেষ ম্যাচে ফ্রান্সের বিপক্ষে পয়েন্ট পেতেই হবে পর্তুগালকে।
Discussion about this post