আট ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পাবেন ৮৬৮ জন
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকারস সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত সাতটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ হবে সমন্বিত পরীক্ষার মাধ্যমে। এই নিয়োগ পরীক্ষার পদ্ধতি ও প্রস্তুতি নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রস্তুতিমূলক পরামর্শ দিয়েছেন জনতা ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র অফিসার মো. আলমগীর মাহমুদ পলাশ ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র অফিসার মাহফুজ জামি। লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
যেভাবে পরীক্ষা
ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র অফিসার পদের সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষা হবে তিন ধাপে। প্রথম ধাপে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরে (এমসিকিউ পদ্ধতিতে)। দ্বিতীয় ধাপে ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা এবং সব শেষে ২৫ নম্বরের ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা)। প্রিলিমিনারি বা বাছাই পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান ও কম্পিউটারের ওপর মোট ১০০ নম্বরের প্রশ্ন হয়। এ ক্ষেত্রে গণিতে ৩০, ইংরেজিতে ২৫, বাংলায় ২০, সাধারণ জ্ঞানে ১৫ এবং কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তিতে থাকবে ১০ নম্বর।
প্রিলির বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি
♦ বাংলার প্রস্তুতি যেভাবে : সাধারণত বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্যের ওপর প্রশ্ন করা হয়। তবে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন হয় ব্যাকরণের ওপর। ব্যাকরণের প্রস্তুতির জন্য নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড ব্যাকরণ বইয়ের ওপর দখল থাকা জরুরি। এই প্রস্তুতি অন্যান্য চাকরির পরীক্ষায়ও কাজে দেবে। ভাষা, ধ্বনি, বর্ণ, সমাস, কারক ও বিভক্তি, সন্ধিবিচ্ছেদ, বচন, শব্দের প্রকারভেদ, লিঙ্গান্তর, বাক্য, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ ইত্যাদির ওপর প্রশ্ন বেশি থাকে। তাই এই বিষয়গুলোয় বেশি মনোযোগ দিতে হবে। তবে কিছু কিছু বিষয় আছে, যেগুলো শুধু নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বইয়ের ওপর সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, আরো বিস্তর পড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে ড. হায়াৎ মামুদের ভাষা শিক্ষা বইটি পড়া যেতে পারে—সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বাগধারা, বানান, শব্দের প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ, এককথায় প্রকাশ, প্রবাদ প্রবচন প্রভৃতি। ব্যাকরণ ও সাহিত্যের কিছু বিষয় মনে থাকে না। সেগুলোর কৌশলে বা ছন্দ আকারে মনে রাখার জন্য এম এম মহিউদ্দীনের লেখা ‘শর্ট টেকনিক’ বইটি পড়া যেতে পারে। সাহিত্য অংশে প্রস্তুতির জন্য বাজারের ভালো মানের একটি গাইড বই অনুসরণ করা যেতে পারে। সাহিত্য অংশে বিগত সালের বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো পড়লে সাধারণত কমন পাওয়া যায়। কবি-সাহিত্যিকদের জীবনী, সাহিত্যকর্ম, তাঁদের বিভিন্ন কবিতা ও উপন্যাস, উক্তি, বিখ্যাত পত্রিকার সম্পাদকদের নাম ও প্রকাশের সাল, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক, উপন্যাস প্রভৃতি সম্পর্কে প্রশ্ন হতে পারে।
♦ ইংরেজিতে জোর দিন : অন্যান্য চাকরি পরীক্ষার ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্নের সঙ্গে ব্যাংকের ইংরেজি প্রশ্নের কিছুটা ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়। এ জন্য বুঝে-শুনে প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্যাংকে ইংরেজি অংশে মূলত দুই ধরনের প্রশ্ন হয়—1. Vocabulary Based,
2. Grammar Based
আবার Vocabulary-তেও দুই ধরনের প্রশ্ন হয়, যেমন—1. General Vocabulary, 2. Contextual Vocabulary.
যে ধরনের প্রশ্নই হোক না কেন, মূলত কিছু কমন টাইপ প্রশ্নই করা হয়। Vocabulary-নির্ভর টপিকগুলো হলো—Synonyms & Antonyms, One word Substitution, Replacing underlined word, Analogy, Odd man out, Spelling, Sentence Completion Group verb, Appropriate preposition, Idioms & Phrase.
আর গ্রামারের গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো হলো—Error Finding, Sentence Correction, Correct Sentence Choice, Rearrange Sentence Parts, Grammar Based Fill in the blanks।
প্রিলিমিনারি বা বাছাই পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান ও কম্পিউটারের ওপর মোট ১০০ নম্বরের প্রশ্ন হয়। এ ক্ষেত্রে গণিতে ৩০, ইংরেজিতে ২৫, বাংলায় ২০, সাধারণ জ্ঞানে ১৫ এবং কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তিতে থাকবে ১০ নম্বর
ভোকাবুলারির প্রস্তুতির জন্য প্রথমে মহিউদ্দীনের লেখা Mini Job Vocabulary বইটি থেকে সব ভোকাবুলারি মুখস্থ করতে পারেন। বইটা ছোট, তবে ভোকাবুলারির সবই গুরুত্বপূর্ণ। দেখবেন হয়তোবা অনেকগুলোই আপনি পারেন। এরপর Word Smart বই থেকেও ভোকাবুলারি দেখতে পারেন। গ্রামার অংশের জন্য Cliff’s toefl বই পুরোটা পড়ে ফেলুন। ইংরেজিতে লেখা হলেও বইটির ভাষা সহজ ও সাবলীল। ভালো করে পড়তে পারলে গ্রামারের কাজ অনেকটাই হয়ে যাবে। তা ছাড়া গ্রামারের বিগত সালের প্রশ্ন অনুশীলন করার জন্য বাজারের ভালো মানের একটা গাইড বই অনুসরণ করা যেতে পারে।
♦ চাকরির জন্য গণিত : ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার জন্য গণিতে দক্ষ হওয়ার বিকল্প নেই। তাই গণিতকে হেলাফেলা না করে দুর্বলতা থাকলে তা কাটিয়ে ওঠার জন্য আজ থেকেই চেষ্টা করতে হবে। পাটিগণিত অংশে সময় ও কাজ, সময় ও দূরত্ব (নৌকা, ট্রেন), লাভ-ক্ষতি, বয়স, নল ও চৌবাচ্চা, অনুপাত-সমানুপাত, শতকরা, সুদকষা, পরিমাপ ও একক, গড়, অংশীদারিত্ব ও ভাজ্য, মিশ্র ও দ্রবণ, বিন্যাস-সমাবেশ প্রভৃতি। বীজগণিতের রাশিমালা, সূচক, সমীকরণ, লগারিদম, সেট, সিরিজ প্রভৃতি টপিক থেকে প্রশ্ন বেশি এসে থাকে। জ্যামিতির ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বহুভুজ, স্থানাঙ্ক ও দূরত্ব প্রভৃতি। এ ছাড়া পরিমিতি ও ত্রিকোণমিতি থেকেও মাঝে মাঝে কিছু প্রশ্ন এসে থাকে। ব্যাংকের গণিতের প্রস্তুতির জন্য আগারওয়ালের Quantitative Aptitude for competitive Examinations বইটা দারুণ কাজে দেয়। যেসব টপিক থেকে প্রশ্ন বেশি আসে, শুধু সেসব টপিক থেকেই গণিত অনুশীলন করতে হবে। এ ছাড়া ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকেও প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। আর যাঁদের গণিতের বেসিক বেশি ভালো না, তাঁদের সপ্তম, অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড গণিত বই প্রথমে অনুশীলন করে গণিতের বেসিক ঝালাই করে নিতে হবে। এ ছাড়া বাজারের ভালো মানের অন্যান্য গণিত বইও অনুশীলন করা যেতে পারে। তবে ব্যাংকে যেহেতু গণিত ইংরেজি মাধ্যমে আসে তাই ইংরেজি মাধ্যমে গণিত অনুশীলন করলে পরীক্ষার হলে সহজে উত্তর দেওয়া যাবে।
♦ সাধারণ জ্ঞান অসাধারণ কিছু নয়
সাধারণ জ্ঞান বিষয়টা সাধারণই। তবে বিষয়টাকে হেলাফেলা করা যাবে না। সাধারণ জ্ঞানে দুই ধরনের প্রশ্ন হয়। এক ধরনের প্রশ্ন হয় সাম্প্রতিক বিষয়গুলো থেকে, আরেক ধরনের প্রশ্ন হয় স্থায়ী বিষয়গুলোকে নিয়ে। সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্র বিশাল, তাই নির্দিষ্ট টপিক বলাটা কষ্টকর। তার পরও বিগত বছরের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে—কিছু বিষয় থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। সেগুলো হলো—সমসাময়িক রাজনীতি, নারীনীতি, সমাজনীতি, পরিবেশনীতি, নির্বাচন, খেলাধুলা, পুরস্কার প্রভৃতি। এ ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষাবিষয়ক তথ্য, বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিবিষয়ক তথ্য (জিডিপি, মাথাপিছু আয়, মুদ্রা), জাতীয় ব্যাংকের নাম, জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকসহ এদের সব অঙ্গসংগঠন, বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও ব্যাবসায়িক চুক্তি এবং বাংলাদেশের ইতিহাস ১৯৪৭-১৯৭১ সাল পর্যন্ত। সাধারণ জ্ঞানে ভালো প্রস্তুতির জন্য দৈনিক পত্রিকার বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক পাতা, আন্তর্জাতিক পাতা, উপসম্পাদকীয় পাতা ও খেলাধুলার পাতা নিয়মিত পড়তে হবে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত খাতায় নোট করে রাখা যেতে পারে। বিবিসি ও সিএনএনের খবর শুনতে পারলে ভালো কাজে দেবে। এ ছাড়া বাজারে প্রচলিত সাধারণ জ্ঞানের ভালো মানের একটি বই পড়া যেতে পারে।
♦ কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তির প্রস্তুতি হোক জোরালো
কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি অংশে প্রস্তুতির জন্য মাধ্যমিকের কম্পিউটার বইটি পড়া যেতে পারে। তা ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিকের তথ্য-প্রযুক্তি বইটা পড়তে পারলে ভালো হয়। আর গাইড বইয়ের ক্ষেত্রে ইজি কম্পিউটার বা বাজারের ভালো মানের যেকোনো বই পড়া যেতে পারে। কম্পিউটারের ইতিহাস, কম্পিউটারের প্রকারভেদ, ক্রমবিবর্তন, সংগঠন, সিস্টেম ইউনিট, আউটপুট ইউনিট, মেমোরি, স্টোরেড ডিভাইস, কম্পিউটার বাস, কম্পিউটার সফটওয়্যার, অপারেটিং সিস্টেম, ডাটাবেইস, ডিজিটাল লজিক, সেলুলার ফোন, কমিউটার নেটওয়ার্ক, ক্লাউড কম্পিউটিং, ইন্টারনেট, ই-মেইল, ই-কমার্স, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইউটিলিটি প্রগ্রাম, এমএস ওয়ার্ড, এমএস এক্সেল প্রভৃতি টপিক থেকে প্রশ্ন এসে থাকে। বিগত সালে ব্যাংকসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো বেশি চর্চা করতে হবে। এ ছাড়া দৈনিক পত্রিকাগুলোর তথ্য-প্রযুক্তি পাতা পড়া যেতে পারে।
কোথায় কত পদ
সোনালী ব্যাংক-২৩৭টি, জনতা ব্যাংক-৪৪০টি, রূপালী ব্যাংক-৭৭টি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক-৯টি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-৩৪টি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক-৩২টি, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক-২৪টি ও বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন-১৫টি।
Discussion about this post