কিছুদিন পরই বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে রাষ্ট্রয়াত্ত বিভিন্ন ব্যাংকে জনবল নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষায় ভালো করতে হলে প্রস্তুতিটাও নিতে হবে নিয়মমাফিক। কিভাবে সেই প্রস্তুতি নিতে হবে জানিয়েছেন পদ্মা ব্যাংকের সহকারী অফিসার রাহাত এম হক। যিনি ইতিমধ্যে সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন।
জেনে নিন কিভাবে নিবেন প্রস্তুতি:
ইংলিশ প্যাসেজ: অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সম্পূর্ণ প্যাসেজটি না পড়েই প্রশ্ন পড়তে থাকবেন। ‘শিরোনাম’ রিলেটেড প্রশ্ন সবার শেষে দিবেন কারণ বাকি গুলার উত্তর দেয়ার পরে দেখবেন একটা ধারনা চলে আসবে।
ইংলিশ বাংলা, Essay writing/focus writing:
যেকোনো ধরণের টপিক থাকুক না কেন কখনো শুরুতেই গিয়ার-এ চলে যাবেন না। শুরুতেই টপিক রিলেটেড কথা লিখবেন না। কিছুটা তামিল মুভির মত। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা সেটা হলো, মাঝখানে যাই লিখেন না কেন, প্রথমার্ধ আর শেষার্ধ সবসময় লজিক্যাল কথা অবশ্যই লিখতে হবে। কিছু কথা মুখস্থ লিখে দিবেন। আর পাতার উপর পাতা লিখে নিজের পরীক্ষাটা নষ্ট করবেন না। মার্কস ৩০ থাকলেও ২ অথবা ১ পৃষ্ঠার বেশি লিখবেন না। একই কথা বারবার লিখবেন না।
এছাড়া focus writing-এর জন্য যেই জিনিসগুলো focus করবেন ওইগুলো অন্য কালি দিয়ে লিখবেন। এখানে মুখস্থ/গৎবাঁধা লিখলে হবেনা। Focus points আলোচনা করতে হবে।
ট্রান্সলেশন (Bangla/English):
এই ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার এপ্লাই করা যেতে পারে (নির্ভর করে সময়ের উপর)। সেটা হলো, এই পার্টটায় মার্ক কমে যায় গ্রামার ভুল আর কাটাকাটি করার জন্য। ওই সময় কী লিখবো না লিখবো, কোন ওয়ার্ড আগে লিখবো কোনটা পরে এই চিন্তা করতে করতে সময় শেষ। এরপরে লিখার পর মনে হল, ওই ওয়ার্ডটা আগে লিখলে আরো ভাল হত। আর কাটাকাটি তো আছেই।
এক্ষেত্রে যদি ঝটপট এক লাইন এক লাইন করে রাফ করে ফেলেন তাহলে কাটাকাটিও হবেনা, কম হবে প্লাস। কোন লাইন আগে পরে হবে বুঝতে পারবেন। আর মনে রাখবেন এটা ভাবানুবাদ! একদম লাইন বা লাইন অনুবাদ না করলেও চলবে। পরীক্ষককে বুঝাতে পারলেই চলবে। আর কাটাকাটি করে সম্পূর্ণ লিখা আর সুন্দর করে ২ লাইন লিখলে লাভ কোনটা? মনে রাখবেন ভাবানুবাদ করতে হবে, অনুবাদ না।
প্রতিবেদন (বিজনেস লেটার):
এই পার্টগুলো সবচেয়ে সোজা এবং মার্কস উঠানো সবচেয়ে সহজ। কিভাবে? প্রথমেই জেনে রাখেন পরীক্ষকরা প্রথমেই দেখে আপনার ফরম্যাটিং (৬টা পার্ট) ঠিক আছে কিনা। তারপর দেখবে বিষয় ঠিক আছে কিনা। তারপর বাকিটা। ব্যাংক-এর লিখিত পরীক্ষায় বেশিরভাগ সময় বিজনেস লেটার আসে ঋণ সম্পর্কিত। মনে রাখবেন যা বিষয় থাকবে, সেটার বিপরীতে একটা না একটা কারণ অবশ্যই দেখাবেন। তবে ২/৪ লাইন এর বেশি না। সবসময়ই এক পেজে লিখার চেষ্টা করবেন। আর ২ পেজ চিন্তা করলে বাম পাশ থেকে লিখা শুরু করবেন। এই পার্ট-এর জন্য ম্যাক্সিমাম ৩/৫ মিনিট রাখবেন।
গণিত: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জব ডিসাইডিং পার্ট।
> সবচেয়ে ছোট এবং জানা ম্যাথগুলো করে ফেলেন।
> ভুলেও কোন শর্টকাট করে করবেন না।
> যতই রিপিট প্রশ্ন আসুক, এইখানে মুখস্থ করে কোনো ফল পাবেন না।
> ম্যাথ করার সময় পাশে পাশে সাইড নোট দেন (অন্য কালি হলে ভালো)
> উত্তর আলাদাভাবে শেষে আবার লিখেন।
> কোনভাবেই কাটাকাটি করবেন না বেশি।
> অর্ধেক পেজ থেকে লেখা শুরু করবেন না।
> কোন ম্যাথ না পারলেও ওই রিলেটেড নিয়ম অনুযায়ী কোন কিছু করে আসবেন।
> উত্তর ফ্রেকশন আসলে ওইভাবে রেখে দেন সময় না নষ্ট করে।
> পারলে খাতার মাঝখানে ২ ভাগ করে নিবেন। এটা বুয়েট-এর নিয়মের ভিতর একটা নিয়ম অংক করার।
> আর ২ পেজে করতে চাইলে বাম পাশ থেকে শুরু করবেন।
কোন পার্ট আগে দিবো?:
১. প্রথমে অংক যেকোনো দুইটা। এরপরে বাকিগুলা পারার মত হলেও দিবোনা। (সময়: ২০মি:)
২. তারপর যেকোনো একটা অনুবাদ (সময়: ৫-৮মি:)
৩. তারপর বিজনেস লেটার (সময়: ৩-৫মি:)
৪. তারপর একটা অংক (সময়: ১০মি:)
৫. তারপর আরেকটা অনুবাদ (সময়: ৫-৮মি:)
৬. তারপর যদি প্যাসেজ থাকে দিবেন (সময়: ১০মি:)
৭. তারপর একটা অংক (সময়: ১০মি:)
৮. তারপর Focus/Essay যেকোনো একটা (সময়: ১০-১২মি:)
৯. তারপর একটা অংক (সময়: ১০মি:)
১০. তারপর আরেকটা Focus/Essay (সময়: ১০-১২মি:)
মোট সময়: প্রায় ১১০ মি:
কেন এভাবে দিবেন?:
★ কারণ প্রথমেই যদি আপনি সব অংক দিতে চান তাহলে অংকের টেনশনে বাকি পার্টগুলো খারাপ দিয়ে ফেলবেন।
★ লিখিত পরীক্ষা তড়িঘড়ি করে দেয়া যাবেনা।
★ প্রথমেই যদি অংক বাদ দিয়ে বাকি পার্টগুলো দিতে চান তাহলে আর যাই হোক লিখিত টিকবেন না। কারণ পরে আপনি অংক করার সময় পাবেন না অথবা তাড়াহুড়ায় ভুল করে দিয়ে আসবেন। একটা অংক অথবা কোন অংক না করে কখনই আপনি লিখিততে টিকবেন না। আপনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অথবা দেবতার সন্তান যেই হোন না কেনো এই রিলেটেড যা শুনবেন, সব গুজব।
আরো কিছু কথা:
১। উপরের সবকিছু খুব দ্রুত এবং সময়ের ভিতরে করতে হবে।
২। যতটুক সম্ভব কাটাকাটি কম করবেন।
৩। ভুলেও কোন পেজ খালি রাখবেন না। খালি থাকলে কেটে দিবেন
৪। হাতের লিখাটাও কিন্তু একটা ফ্যাক্টর। (মাথায় রাখবেন)
৫। হেডিং-এর জন্য নীল কালি আর বাকি সবকিছুর জন্য কালো কালি। যারা জেল পেন দিয়ে লিখবেন হাতের লিখা সুন্দর করার জন্য, বিশ্বাস করেন কখনই তাড়াতাড়ি লিখতে পারবেন না। আমিও আগে এই ভুল করেছি, এখন আপনার ব্যাপার। নরমাল ১০ টাকা দামের পেন সবচেয়ে বেস্ট, ধরতেও আরাম, লিখাও তাড়াতাড়ি হবে।
৬। লিখিত পরীক্ষা ২ ঘণ্টার হয়ে থাকে, কিন্তু আপনি বাসায় কম করে হলেও ১০টা মডেল টেস্ট দিবেন ১ ঘণ্টা করে।
Discussion about this post