টাইম ম্যানেজমেন্টও পরীক্ষারই একটি অংশ। একটি ভাল পরীক্ষার পেছনে- তোমার প্রস্তুতি কেমন সেটির ভূমিকা ৫০%, পরীক্ষার হলে কোন Strategy অনুসরণ করছো তার ভূমিকাও কিন্তু ৫০%!
তাই নির্ধারিত সময়ের ভেতর কীভাবে সব লেখা শেষ করা যায়- চলো জেনে নেই কিছু কৌশল!
১. পরীক্ষার প্রথম পাঁচ মিনিট- খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এই সময়টি হাতে রাখতে হবে শুধু প্রশ্ন পড়ার জন্য। এরকম বহুবার ঘটেছে যে হয়তো প্রশ্নে ছোট করে লেখা আছে “পাঁচটি থেকে যেকোন তিনটি উত্তর করতে হবে” কিন্তু সেটি খেয়াল না করায় পাঁচটিই উত্তর করে অনেক সময় এবং শ্রম স্রেফ অপচয় হয়েছে! তাই প্রশ্ন পড়ার ক্ষেত্রে কোন অবহেলা নয়। এই সময়ে তোমাকে তিনটি কাজ করতে হবে-
* কয়টি প্রশ্নের মধ্যে কতোগুলোর উত্তর করতে হবে সেটি মনোযোগ দিয়ে দেখা।
* কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর করা তোমার জন্য সহজ, কোনগুলো কঠিন সেটি মনে মনে যাচাই করে নেওয়া।
* প্রশ্নগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে এমনভাবে পড়া, যেন একই প্রশ্ন দ্বিতীয়বার পড়া না লাগে।
(এখন বেশিরভাগ পরীক্ষাতেই প্রশ্নে দাগ দেওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু যদি এই বিধিনিষেধ না থাকে- প্রশ্নের মূল বিষয়গুলো পেনসিল দিয়ে দাগিয়ে নিলে অনেক উপকার হবে।)
তোমার সুবিধামতো অন্যভাবেও ভাগ করতে পারো সময়। যে প্রশ্নটিতে অনেক কিছু লেখার আছে সেটি পাঁচ মিনিট বেশি সময় নিয়ে লিখলে, যেটির উত্তরে তোমার তেমন কিছু জানা নেই তার পেছনে বেশি সময় খরচ করার মানে হয় না।
সময় শুধু ভাগ করলেই চলবে না, সেটিকে ঠিকভাবে মেনে প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে! সাধারণত কী হয়- আমরা প্রথম প্রশ্নের উত্তর অনেক যত্ন করে অনেক সময় নিয়ে লিখি এবং শেষে এসে সময় থাকে না তখন খাতার উপর রীতিমতো ঝড় চলতে থাকে! খাতার প্রথম পৃষ্ঠা আর শেষ পৃষ্ঠা পাশাপাশি দেখতে গেলে এটি যে একই মানুষের লেখা সেটি বুঝতে কষ্ট হয়!
৩. যে প্রশ্নটি আমরা ভাল পারি (সোজা কথায় বলতে গেলে ‘কমন’ পড়েছে যে প্রশ্নটি!) সেটির উত্তর করতে কম সময় লাগে। তাই সহজ প্রশ্নগুলোর উত্তর শুরুতেই করে ফেলো। এতে তোমার আত্মবিশ্বাস যেমন বেড়ে যাবে, যিনি তোমার খাতা দেখবেন তার মনেও তোমার সম্পর্কে একটি ভাল ধারণা তৈরি হবে। সহজ প্রশ্নগুলো দ্রুত শেষ করে ফেললে শেষে কিছু অতিরিক্ত সময় পাওয়া যাবে যা কঠিন প্রশ্নগুলো ভেবে চিন্তে লেখার কাজে ব্যবহার করা যাবে।
৪. পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সবাই বই পড়ি প্রচুর, প্রস্তুতি নিতে পড়ার বিকল্প নেই। কিন্তু লিখে অনুশীলন করি কয়জন? না লেখার ফলে যে সমস্যাটি হয়- পরীক্ষার হলে লেখা গতি বেশ কম থাকে অভ্যাসের অভাবে, হাত ব্যথা হয়ে যায়। অনেকের লেখার লাইন আবার রেল লাইনের মতো বেঁকে যেতে থাকে। বিচ্ছিরি অবস্থা!
পরীক্ষায় সময় স্বল্পতার কারণে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এগুলো মনের উপর আরও বেশি চাপ তৈরি করে। দেখা যায় উত্তর খুব ভালোভাবে জানা কিন্তু ঠিকমতো লেখা হয়ে উঠে না! তাই আমরা যখন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিবো, তখন পড়ার পাশাপাশি একটু কষ্ট করে সময় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো লিখেও অনুশীলন করবো। তাহলে হাতের লেখা যেমন ঝরঝরে, সুন্দর আর দ্রুত হবে, তেমনি পয়েন্টগুলোও আরো ভালোভাবে মনে গেঁথে যাবে।
৫. শেষকথা- এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা- পরীক্ষার হলে কোনভাবেই উদ্বিগ্ন হওয়া যাবে না। দুশ্চিন্তা করলে তো হেরে গেলে! দেখা যায় একটা প্রশ্নের উত্তর ঠিকমতো মেলাতে না পারলে মাথা গরম হয়ে যায়, তখন বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তরও খারাপ হতে থাকে!
একটু যদি ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করো- একটা প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দুশ্চিন্তা করে তোমার যে সময়টা নষ্ট হচ্ছে সে সময়ে তুমি আরেকটা প্রশ্নের পাঁচটা লাইন বেশি লিখতে পারতে, পাঁচটা মার্কস বেশি পেতে! তাই, সবসময়- Keep Calm & Stay Cool ?
অনেকে আবার একটি কাজ করো- পরীক্ষা দিয়ে এসে কয়টি নৈর্ব্যক্তিক মিলেছে, কয়টি প্রশ্ন সঠিক হয়েছে সেগুলো মেলাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ো। অথচ এই সময়টিতে পরের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ছিলো, তুমি আগের পরীক্ষা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করছো। এরচেয়েও দুশ্চিন্তার ব্যাপারটি হলো তোমার নৈর্ব্যক্তিক ইত্যাদি মেলাতে গিয়ে যদি দেখো অনেক ভুল হয়েছে- তখন তোমার মনটা খারাপ হয়ে যাবে, আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। পরীক্ষার মৌসুমে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলার চেয়ে ভয়াবহ আর কিছু হয় না!
তাই সবসময়- Focus on “WHAT’S NEXT?”
যা হয়ে গেছে তা যেতে দাও। সব দিন সমান যায় না। কিছু ভাল যাবে, কিছু খারাপ হবে এটাই স্বাভাবিক। নতুন দিন, নতুন পরীক্ষা, নতুন চ্যালেঞ্জ!
সবার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো!
Discussion about this post