আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ছয় শক্তিধর দেশের সঙ্গে ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক চুক্তি ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ (জ্যাকোপা) কার্যকর করতে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তাতে কিছু বিষয়ে গুরুতর আপত্তি রয়েছে ইসরায়েলের।
রোববার (২৭ জুন) ইতালির রাজধানী রোমে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ।
সংবাদ সম্মেলনে লাপিদ বলেন, ‘ভিয়েনায় ইরানের পরমাণু চুক্তি কার্যকর ও বাস্তবায়ন বিষয়ক যে আলোচনা চলছে, তাতে কিছু বিষয়ে ইসরায়েলের গুরুতর আপত্তি রয়েছে; এবং ইসরায়েল বিশ্বাস করে, এসব আপত্তি ও মতভেদের মিমাংসা হতে পারে সরাসরি ও পেশাদার কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে।’
ইসরায়েলে নতুন জোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছে দু’সপ্তাহ আগে; সেই সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন ইয়ার লাপিদ। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এটি ছিল তার প্রথম মুখোমুখী বৈঠক। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং ইয়ার লাপিদের আলোচনা খুবই ইতিবাচক ও আন্তরিকতাপূর্ণ ছিল।
তারা আরও জানিয়েছেন, ইরানের পরামাণু চুক্তি ও উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিককরণ- এই দু’টি বিষয় ছিল আলোচনার মূল ইস্যু। এর বাইরে গাজা ভূখণ্ডে মানবিক সহায়তা প্রদান ও পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও চীন- এই ছয় রাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ চুক্তি জ্যাকোপা স্বাক্ষর করে ইরান। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী- ইরান ধীরে ধীরে পরমাণু প্রকল্প থেকে সরে আসবে এবং এর পরিবর্তে দেশটির বিরুদ্ধে যেসব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে- সেগুলো পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আন্তরিক প্রচেষ্টাতেই সম্ভব হয়েছিল এই ঐকমত্য।
ইরানের চিরবৈরী হিসেবে পরিচিত দুই দেশ সৌদি আরব ও ইসরায়েল শুরু থেকেই জ্যাকোপার বিরোধিতা করেছে। সেই পথ ধরে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জ্যাকোপাকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যত নেই’ ইত্যাদি অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে। ফলে চুক্তিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় এবং কার্যত সুতোয় ঝুলতে থাকে জ্যাকোপা।
তবে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর ইরানের পরমাণু চুক্তি পুনরায় কার্যকর করার বিষয়টি সামনে আসে। বাইডেন চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনার আগ্রহও জানান, কিন্তু পাশাপাশি শর্ত দেন- চুক্তিতে উল্লেখিত পরমাণু প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক শর্তগুলো যথাযথভাবে মানতে হবে ইরানকে।
এর মধ্যে বাইডেন নিজে এবং তার প্রশাসনের কর্মকর্তারা যদিও বেশ কয়েকবার ইসরায়েলকে এই বলে আশ্বাস দিয়েছেন যে- যুক্তরাষ্ট্র সবসময়েই ইসরায়েলের পাশে আছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের মত- রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণে পূর্বসুরী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় জো বাইডেন অনেক সুবিবেচক ও সংযত।
রোমে সংবাদ সম্মেলনে লাপিদ বলেন, ‘গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের রাজনীতিতে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার ফলে ভুগতে হচ্ছে ইসরায়েলকে। আমরা একসঙ্গেই সেই ভুলগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেব।’
সূত্র: রয়টার্স
Discussion about this post