ধীরে ধীরে শিথিল করা হচ্ছে লকডাউন। ধারণা করা হচ্ছে—১৬ মে-এর পর থেকে লকডাউন শর্তসাপেক্ষে তুলে নেওয়া হতে পারে। তবে, অনেকেই এই লকডাউন তুলে নেওয়ার বিপক্ষে। আবার কেউ কেউ বলছেন, জীবন বাঁচানোর জন্য লকডাউন রাখা হলে একসময় না খেয়ে মানুষ মারা যেতে শুরু করবে। এ পরিস্থিতিতে সবার সামনে একটাই প্রশ্ন উঠে আসছে জীবন নাকি জীবিকা? কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দিবে মানুষ?
বিজ্ঞানীরা করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলছেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণ আরো দুই বছর থাকবে। এর সংক্রমণের মাত্রা কমে আসতে পারে। কিন্তু ভাইরাস আবিষ্কার ও তা মানুষের শরীরে দেওয়ার আগে তা নির্মূল করা সম্ভব হবে না। এ পরিস্থিতিতে আমাদের করোনার সঙ্গে বেঁচে থাকার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
এ বাস্তবতা মেনে নিয়েই ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে, ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলা করে বেঁচে থাকার অভ্যাস করতে হবে। গত শুক্রবার এই ঘোষণা দেওয়া হয়। ফলে, বোঝাই যাচ্ছে, খুব সহজে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে যে রক্ষা পাওয়া যাবে না তা মেনে নিয়েই পরবর্তী করণীয় ঠিক করছেন বিভিন্ন দেশের নীতি নির্ধারকরা।
করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারি আগামী দুই বছর ধরে তাণ্ডব চালাতে পারে। আর যতদিন পর্যন্ত না বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের দেহে এই ভাইরাস প্রতিরোধের ব্যবস্থা গড়ে না উঠছে বা তাদের টিকার আওতায় না আনা হচ্ছে—ততদিন এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ গবেষণা ও নীতি পরামর্শ কেন্দ্রের প্রতিবেদনে। এভাবেই বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘস্থায়ী বিপদের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশে শিথিল করা হয়েছে লকডাউন। পরিবহন চালু না হলেও মানুষ রাজধানীতে প্রবেশ করছে। পথেঘাটে চলাচল শুরু হয়ে গেছে। জীবিকার টানে জীবন বাঁচাতে মানুষ ঘর ছেড়ে বের হয়ে আসছে। মার্কেট খুলছে। কেনাকাটা শুরু হয়ে গেছে। যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লকডাউন শিথিলের তীব্র বিরোধিতা করতে দেখা যাচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিত্সিকও বলছেন, লকডাউন তোলা ক্ষতিকর হবে। এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সিপিডি মনে করে জীবন ও জীবিকা দুটোই প্রয়োজনীয়, তবে জীবিকার তুলনায় জীবনের মূল্য বেশি। তাই জীবন বাঁচাতে হবে আগে। জীবন না থাকলে জীবিকা দিয়ে কী হবে? সিপিডির আসন্ন অনলাইন জরিপে বর্তমান প্রেক্ষাপটে শপিং মল না খোলার পক্ষে ৯৩ শতাংশ এবং ৯৬ শতাংশ শপিং মলে না যাওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিপিডি মনে করে, শপিংমল, পরিবহন, কাঁচাবাজার—এসব জায়গায় মানুষের সমাগম বেশি হয়। যেখানে মানুষের সমাগম বেশি হয়, সেখানে করোনা ভাইরাসের বিস্তারও বেশি।’
এ প্রসঙ্গে এক আলোচনায় অর্থনীতিবিদ মামুন রশীদ বলেছেন, লকডাউন বেশি দিন চললে অর্থনৈতিক ক্ষতি আরো অনেক অনেক গুণ বাড়বে। অন্যদিকে লকডাউন তুলে নিলে অর্থনীতিতে কর্মচাঞ্চল্য আসলে মানুষ অনেক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। আমাদের খাদ্যের বা পণ্যের অভাব নেই, সমস্যা সরবরাহ ব্যবস্থা আর সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিয়ে। ত্রাণের টাকা হোক আর নিজের আয় হোক, টাকা আসলেই বিক্রি বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে, মার্কেট খোলার পক্ষে মত দিয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ধানমন্ডি হকার্সের দোকানি আলমগীর রহমান বলেন, গত প্রায় দুই মাস কোনো ব্যবসা নাই। দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন কীভাবে দেব। নিজের পরিবারের খরচও তো চলে না। আমাদের হাতে কোনো টাকা নাই। ব্যবসা চললে তো ওষুধ কিনতে পারব। ব্যবসা না চললে না খেয়েই মারা যাব।
এই কথারই প্রতিধ্বনি পরিবহন শ্রমিকদের কণ্ঠে। পরিবহন চালুর দাবিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। গত শনিবার সকালে তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা পরিবহন চালুর দাবি জানান। আন্দোলনরত শ্রমিক মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা করোনাতে মরব না। মরব ভাতের অভাবে। কারণ ঘরে চাল নাই। গাড়ি বন্ধ, পরিবার নিয়ে এভাবে কয় দিন থাকা যায়?’
আরেক শ্রমিক মো. ইউসুফ বলেন, ‘গত দেড় মাস কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। পরিবহন চালাতে না পারায় বেতনভাতা পাচ্ছি না। মালিকরাও কোনো সহযোগিতা দিচ্ছে না। বাধ্য হয়েই রাস্তায় নেমেছি। সরকার যখন সবকিছুতে স্বাস্থ্যবিধির শর্ত দিয়ে খুলে দিচ্ছে তাহলে পরিবহন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে তা খুলে দিতে পারে।’
স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাইরে বের হোন
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিত্সক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, জীবন জীবিকার গ্যাঁড়াকলে আটকে গেছে মানুষ। বিশেষ করে, নিম্ন আয়ের মানুষ আর ঘরে থাকতে পারছে না। আয়ের জন্য পথে নেমে এসেছে তারা। তাই, লকডাউন শিথিল করতেই হবে। এর বিকল্প নেই। তবে, তা খুলতে হবে ধীরে ধীরে। অনেক দেশে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। লকডাউন শিথিলের দাবিতে মানুষকে মিছিল করতেও দেখা যাচ্ছে। ঘরে আটকে রাখা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে বাইরে বের হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এর আর কোনো বিকল্প নেই। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, গিজগিজে ভিড় এড়িয়ে চলা। কিছুক্ষণ পর পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। মুখে হাত না দেওয়া। তাহলেই আমরা এই রোগের সংক্রমণের হাত থেকে নিজেকে, পরিবারকে বাঁচাতে পারব। জীবন ও
Discussion about this post