ডা. রবি বিশ্বাস
শিশুকে বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পারিবারিক কাজে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে, যা শিশুর বাড়তি সময় কাটাতে, পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য অক্ষুণ্ণ রাখতে সহায়ক হবে
শিশুর সুস্থতার অন্যতম নিয়ামক হলো তার সঠিক ওজন। ওজন কম হলে যেমন দুশ্চিন্তা, বেশি হলেও তা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর্থসামাজিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশেও বেড়ে চলেছে শিশুদের অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার সমস্যা, যা ইতোমধ্যে সংশ্নিষ্ট মহলের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। বড়দের চেয়ে শিশুদের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণে রাখা বেশি কষ্টকর, ভুক্তভোগীরা তা সবচেয়ে ভালো করেই জানেন। শিশুর ওজন যখন একবার বাড়তে থাকে, তখন তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হয়, সামান্য একটু এদিক-ওদিক হলে সফলতা অর্জন কঠিন হয়ে পড়ে।
অধিক ওজন বৃদ্ধির প্রধান কারণ- বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবার ও দরকারমতো শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের অভাব।
করোনাকালে যখন দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ, শিশুরা স্কুলে যেতে না পেরে ঘরের ভেতরে বদ্ধ জীবন কাটাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের জোগান, সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অলস জীবনযাপন সহজেই কোনো কোনো শিশুর ওজন মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। যদিও করোনাকালে অনেক কিছুই আমাদের ইচ্ছাধীন নয়, তথাপি কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে; যা শিশুর অতি ওজন বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে সহায়তা করবে।
– শিশুকে যতটা সম্ভব (কমপক্ষে দিনে ১-২ ঘণ্টা) অ্যাকটিভ বা গতিশীল রাখার চেষ্টা করতে হবে। হালকা ব্যায়াম, যেমন ঘরের ভেতর স্কিপিং বা সুযোগ থাকলে বাসার ছাদে কিছুক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করতে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
– টিভি দেখা, কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের ব্যবহার দিনে দুই ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
– শিশুকে বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পারিবারিক কাজে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে, যা শিশুর বাড়তি সময় কাটাতে, পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য অক্ষুণ্ণ রাখতে সহায়ক হবে।
– চেষ্টা করতে হবে স্কুল খোলা থাকাকালে রুটিন মেনে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে। কোনো অবস্থাতেই অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও ভাজা, বিশেষ করে দোকান থেকে কেনা খাবার (ফাস্টফুড) খেতে দেওয়া উচিত হবে না।
– সুষম খাবার খেতে উৎসাহিত করতে হবে। অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত, বিশেষ করে মিষ্টি ও তেলসমৃদ্ধ খাবার পরিবেশনে সতর্ক থাকতে হবে। শাকসবজি ও ফল বেশি খেতে উৎসাহিত করতে হবে।
– আইসক্রিম ও চকলেট জাতীয় খাবার ঘরে আনা বা রাখা যাবে না, যা খেতে শিশুরা বেশি পছন্দ করে এবং দ্রুত শিশুর ওজন বাড়ায়।
– পানীয় হিসেবে পানিকেই গ্রহণ করতে হবে, কোনো ধরনের মিষ্টি জুস বা কোমল পানীয় গ্রহণ পরিহার করতে হবে।
– মজাদার খাবার গ্রহণ নিঃসন্দেহে উত্তম বিনোদন। আমাদের চেষ্টা করতে হবে একঘেয়েমি কাটানোর জন্য শিশুকে খাবারের বাইরে অন্যভাবে যেমন- একসঙ্গে বসে আড্ডা দেওয়া, খেলা করা, মুভি দেখা ইত্যাদির মাধ্যমে পর্যাপ্ত আনন্দ দিতে।
– শিশুর সঠিক ও নিয়মমাফিক ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
– মানসিক স্বাস্থ্য অক্ষুণ্ণ রাখতে তাদের বাড়তি সাহচর্য দিতে সদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
– সপ্তাহে একবার ওজন মাপার ব্যবস্থা করা দরকার।
– যাদের ওজন খুব বেশি বেড়ে যাচ্ছে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কষ্ট হচ্ছে, তাদের জন্য প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের সাহায্য নিতে হবে।
– খাদ্য ও ব্যায়াম- এ দুইয়ের বাইরে অন্য কোনো কারণে, বিশেষ করে হরমোনজনিত কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন বাড়ছে কিনা অথবা বাড়তি ওজনের কারণে আনুষঙ্গিক কোনো শারীরিক রোগ বা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
[শিশু হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ,সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল]
Discussion about this post