নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকার চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করছে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ককে প্রধান করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির দেয়া প্রতিবেদন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদনের পর শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। এ সিদ্ধান্তের আলোকে শিক্ষার্থীদের আগের বছরের ন্যায় মূল্যায়ন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, এবার এসএসসি ও এইচএসসিতে পরীক্ষা ছাড়াই বিকল্প নির্ধারণ করে শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়ার ব্যাপারে মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়েই এগুচ্ছে মন্ত্রণালয়। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে না। কারণ ‘পরীক্ষার বিকল্প’- নিশ্চিত না করে আগাম ঘোষণায় বিতর্ক বা সমালোচনার মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, সময়ের স্বল্পতা ও করোনার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় পরীক্ষা যে নেওয়া যাচ্ছে না, সেটি নিশ্চিত হয়েই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি বলেছেন, এক বছর পরীক্ষা না দিলেও জীবনের এমন কোনো বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে না। সবার আগে সুস্থ থাকতে হবে। অতিমারির সময়ের বাস্তবতাকে অস্বীকার করলে চলবে না।
অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী গত বুধবার জাতীয় সংসদে বলেছেন, শিগগিরই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এ বছরের সিদ্ধান্ত আমরা শিগগিরই জানাব। কী পদ্ধতি আমরা করব, সবকিছুই আমরা জানাব।
সম্প্রতি আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে প্রধান করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি ছাড়াও কমিটিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা রয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।
পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে মন্ত্রণালয় এবং ওই কমিটির একাধিক সূত্রে বলা হয়েছে, গত বছর এইচএসসি ও সমমানের ফল যেভাবে হয়েছে, ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসির ফলও এবার সেভাবে হতে পারে। ২০২০ সালে জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে গড় মূল্যায়ন করে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হয়েছিল।
এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফল তাদের জেএসসি ২৫ শতাংশ ও এসএসসি ৫০ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ নম্বর অ্যাসাইনমেন্টের ওপর মূল্যায়নের ভিত্তিতে দেওয়া হতে পারে। এসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি পরীক্ষার ফলের ৫০ শতাংশ আর বাকি ৫০ শতাংশ নম্বর স্কুল পারফরম্যান্স বা অ্যাসাইনমেন্টের ওপর মূল্যায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মডেল টেস্টের নামে একাধিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। সেগুলোও মূল্যায়ন বিবেচনায় আসতে পারে। যদিও কোনো টেস্ট পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল বোর্ডের। পরীক্ষার বিকল্প হিসেবে পাঠদান না করায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকেই শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ারও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এ অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন করেও ফল ঘোষণা করা যায় কিনা, তাও ভাবা হচ্ছে।
আন্তঃবোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে বোর্ডগুলোর প্রস্তুতি এখনো রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হবে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি অনুকূলে না হলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবর্ষ রক্ষা করতে বিকল্প পরিকল্পনা করতে করতে হবে। সে ক্ষেত্রেই পরীক্ষা ছাড়া কীভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব সে সংক্রান্ত পরামর্শ ও গাইডলাইন তৈরির কাজ শুরু করা হবে।
Discussion about this post