জিবলু রহমান
বর্ণাঢ্য জীবনের কৃতী-পুরুষ প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম ২৮ জুন ১৯২০/১৪ আষাঢ়, ১৩২৭ সোমবার চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানার (সাবেক পটিয়া) অন্তর্গত বরমা ইউনিয়নের দেবন্দী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই তাঁর পিতা মতিয়ুর রহমান ইন্তেকাল করেন। তিনি মা ও গ্রামের মহিলা ওস্তাদের নিকট কুরআন এবং পরবর্তীতে আরবী, উর্দু ও ফারসী শিক্ষা গ্রহণ করেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে প্রতিটি পরীক্ষায় কৃতিত্বের ছাপ রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে ১৯৪৬ সালে তিনি কর্মময় জীবন শুরু করেন। ছাত্র জীবনেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সংস্কারমূলক কর্মকান্ডে জড়িত থেকেছেন, কিন্তু ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির সাথে সাথেই তিনি বৃহত্তর জাতীয় জীবনের উন্নতির চিন্তা-চেতনায় তাঁর কর্মতৎপরতা শুরু করেন।
বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য, বিস্তৃতি ও মর্যাদার প্রশ্ন নিয়ে অনেকেই চিন্তা-ভাবনা ও লেখালেখি করেছেন, কিন্তু প্রিন্সিপাল আবুল কাসেমই ‘তমদ্দুন মজলিস’ প্রতিষ্ঠা করে প্রথম ভাষা-আন্দোলনের সৃষ্টি করেন, যা ইতিহাস স্বীকৃত সত্য। বাংলার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থকে তিনি তাঁর পারিবারিক জীবনের উর্ধ্বে স্থান দেন, ইতিহাস তাই প্রমাণ দেয়। একদিকে বাংলার মানুষের মুখের বুলি বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন এবং অন্যদিকে বাংলার মূখ্য জনগোষ্ঠী মুসলমানদের মধ্যে কুসংস্কার ও ভুল ধ্যান-ধারণা দূরীকরণে ইসলামী আন্দোলন শুরু করেন। এমনকি রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনায় সংস্কারের লক্ষ্যে কিছু সময়ের জন্য রাজনীতিতে জড়িত হয়ে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। এই সব ক্ষেত্রে পথিকৃত হিসেবে তাঁর নাম ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয়ে গেছে। এটা এখন চিরন্তন সত্য হিসেবে ইতিহাসে স্থান নিয়েছে।
মরহুম বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, ‘….আজকে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে খন্ডিত ও বিকৃত করে অন্য খাতে নেয়ার চেষ্টা চলছে। জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে এ ধরনের তৎপরতা মেনে নেয়া যায় না। (সূত্র : প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম ও ভাষা আন্দোলন : মোস্তাফা কামাল)।
ঐ গ্রন্থেই জনাব অলি আহাদ বলেছেন-‘জাতীয় ইতিহাসে ভাষা আন্দোলন একটি প্রতিবাদী চেতনার নাম। এ চেতনা আত্মোপলব্ধির ও সত্তা আবিষ্কারের….নিঃসংশয়ে স্বীকার করতেই হবে ভাষা আন্দোলন গোড়াপত্তনে শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক আবুল কাসেমের অবদান অনবদ্য ও উত্তরসূরীদের জন্য অনুকরণীয়।’
বাংলায় ‘কাব্যে উপেক্ষিত নায়িকা’ বলে একটি সুন্দর কথা আছে। এদেশের সামগ্রিক ভাষা আন্দোলনকে যদি একটি ছন্দময় কাব্য হিসেবে বিবেচনা করা যায়, তাহলে প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম সেই কাব্যের উপেক্ষিত নায়ক। (জনাব গাজীউল হক-প্রাগুক্ত)।
উল্লেখ করেছি প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম কিছু সময়ের জন্য রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেই সময় বহু উন্নয়নমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে বাংলা একাডেমীর প্রতিষ্ঠাসহ রাস্তা নির্মাণ ও খাল খনন, বরফা-হাশিমপুর রোড, বরকুল-বৈলতলী রোড, দেবন্দী-কেশয়া রোড অন্যতম। ভাতখাল, মাশিরখাল ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করেন। তিনি দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনও শুরু করেন। কিন্তু রাজনীতিবিদদের বেঈমানী, মুনাফেকী ও নীতিহীনতা এবং সহকর্মীদের দোদুল্যমানতা ও বিভ্রান্তি দেখে নিজেকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে নেন। তিনি বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের কাছে বাংলা ভাষাকে সহজ ও গতিশীল করার কাজে আত্মনিয়োগ করে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত দেশের মানুষের সেবায় অতিবাহিত করেন।
সাপ্তাহিক ‘সৈনিক’ ও মাসিক ‘দ্যুতি’ পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করে বহু প্রতিভাবান তরুণ কবি-সাহিত্যিক সৃষ্টি করেন। আজও সাপ্তাহিক ‘সৈনিক’ ও মাসিক ‘দ্যুতি’ বাংলার মানুষের চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে অগ্রদূত। ড. আতিয়ার রহমান তাঁর গবেষণামূলক একটি লেখায় বলেছেন, ‘…..সাপ্তাহিক সৈনিক গবেষণার ক্ষেত্রে একটি সোনার খনি। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বাংলা ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনা করে বাংলার মাধ্যমে লেখাপড়ার পথকে সুগম করেছেন তিনি। তাঁর রচিত উচ্চ মাধ্যমিক পদার্থিকা (রাইটার্স গিল্ড পুরস্কার প্রাপ্ত), উচ্চ মাধ্যমিক রসায়ন, ল্যাটরেটরী পদার্থিকা, ল্যাবরেটরী রসায়ন, ডিগ্রী পদার্থিকা, ডিগ্রী রসায়ন, উচ্চ মাধ্যমিক ত্রিকোণোমিতি, উচ্চ মাধ্যমিক ডিনামিকস, উচ্চ মাধ্যমিক স্ট্যাটিসটিক্স, উচ্চ মাধ্যমিক ক্যালকুলাস, লগ তালিকাসহ অন্যান্যের সহযোগিতায় বিজ্ঞানের বিভিন্ন বই বাংলা ভাষায় প্রকাশ করেন।
পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না উর্দু (সহ লেখক-১৯৪৭), ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস (১৯৫২), শাসনতান্ত্রিক মূলনীতি (১৯৫৩), একুশ দফার রূপায়ন (শিক্ষা অর্থনীতি ও সমাজনীতির বিষয়-১৯৫৫, মুক্তি কোন পথে) সহ-লেখক অধ্যাপক শাহেদ আলী-১৯৫২, একমাত্র পথ (সহ লেখক অধ্যাপক শাহেদ আলী-১৯৪৯, বিবর্তনবাদ, সৃষ্টিতত্ত্ব ও আল্লাহর অস্তিত্ব-১৯৫২, শ্রেণী সংগ্রাম ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি-১৯৫৩, ভুলের পুনরাবৃত্তি-১৯৫৩, ইসলামী রাজনীতি-১৯৬৭, বিজ্ঞান বস্তুবাদ ও আল্লাহর অস্তিত্ব-১৯৬৯, আমাদের ভাষার রূপ (সহ-লেখক ১৯৬৮, আধুনিক চিন্তাধারা (বিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, সাহিত্য ও দর্শন), কোরানিক অর্থনীতি-১৯৭১, ইসলাম কি দিয়েছে ও কি দিতে পারে (সমাজতত্ত্ব ও অর্থনীতি), বিজ্ঞান সমাজ ধর্ম (বাংলা একাডেমী ও বাংলাদেশ ইসলামী ফাউন্ডেশন পুরস্কারপ্রাপ্ত), Science and Modern Thought’ প্রভৃতি বই সমূহের রচয়িতা। এই সমস্ত বই আমাদের জাতীয় জীবনে কি প্রভাব ফেলেছে এবং ফেলতে পারে তা আমাদের ভাববার বিষয়। (সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব ২৮ জুন ২০০৩)
তার উদ্যোগে ১৯৫৪ ইং সালে কার্জন হলে সাংস্কৃতিক সম্মেলন ও কবি কাজী নজরুল ইসলামকে অর্থ সাহায্য এবং ১৯৬৭ সালের ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান ভাষা সম্মেলনের আয়োজন করেন। (সূত্র : দৈনিক ইনকিলাব ২৮ জুন ২০০৩)
পকিস্তান আমলে আমাদের ভাষার রূপ, হরফ, পরিভাষা, বানান, ব্যাকরণ-এই ভাষায় অনুবাদ ইত্যাদি সম্পর্কে বহু প্রশ্ন ও সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এই প্রশ্ন ও সমস্যা স্বাভাবিক। কারণ বৃর্টিশ আমলে আমাদের ভাষা ও সাহিত্য ছিল গুটিকয়েক পন্ডিত ও শিক্ষিতের সম্পত্তি।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর বাংলা ভাষা শিক্ষার মাধ্যম ও সরকারী ভাষা হিসেবে চালু হবার মর্যাদা পায়। মুক্তিযুদ্ধের কয়েখ বছর আগেই জোর দাবী উঠে, আমাদের ভাষাকে অল্পসংখ্যক লোকের বাহন ও বিলাসিতার উপকরণ হিসেবে আবদ্ধ করে রাখলে চলবে না-এই ভাষায় শতকরা একশত জনকেই শিক্ষিত করে তুলতে হবে-আর এই ভাষার মাধ্যমে যাতে সমস্ত অধিবাসী সহজে ব্যাপকভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্য আয়ত্ত করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
এই সমস্ত আলোচনার জন্য ১৯৬৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তান বাংলা ভাষা সম্মেলন ঢাকার করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বাংলা কলেজ পরিচালনা পরিষদের প্রস্তাব নিয়ে জুলাই মাসে বাংলা কলেজ হলে এক প্রস্তুতিসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় প্রবীণ সাহিত্যিক ভাষাবিদরা অংশ নেন; আর ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে সভাপতি, ড. কুদরতে খোদা, ইব্রাহীম খাঁ, আবুল মনসুর আহমদ, আবুল কালাম শামসুদ্দিন ও অন্যান্য নামকরা কয়েকজন সাহিত্যিকদের সহ-সভাপতি আর প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমকে সেক্রেটারী করে একটি সংগঠনী কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই পাক-ভারত যুদ্ধ সংগঠিত হয়। তার ফলে সম্মেলনের কাজও আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৬৬ সালের অক্টোবর মাসে আবার একটা সম্মেলনের কথা চিন্তা করা হয়। এবার বাংলা কলেজের ছাত্র মজলিসের কর্মীরা এই উদ্যোগে এগিয়ে আসে। ১৬ অক্টোবর তারিখে ৩১-২, আজিমপুর রোডে এই প্রদেশের প্রবীণ সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ভাষাবিদ, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী আর শিক্ষাবিদদের নিয়ে একটি উপদেশক পরিষদ ও একটি সংগঠনী কমিটি গঠিত হয়। এই সংগঠনী কমিটির উদ্যোগে ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭ সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে ‘বাংলা ভাষা সংস্কার ও ভাষা সম্মেলন’ শীর্ষক প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম পঠিত প্রবেন্ধর এক অংশে বলেন, ‘….আমাদের ভাষার ব্যাপারে যুগ-সন্ধিক্ষণের মুখে আসিয়া দাঁড়াইয়াছি। যে ভাষা কোনদিন রাষ্ট্রভাষা কিংবা সর্বস্তরে শিক্ষার মাধ্যম ছিল না সেই ভাষাকে সরকারি- বেসরকারি কলেজ ও লেখাপড়ার মাধ্যম হিসেবে উপযুক্তভাবে গড়িয়া তুলিতে হইতেছে। এই গড়িয়া তোলার ধারায় ভাষার রূপ বদলায়, পুরাতন রক্ষণশীলতার অদরকারী ও ক্ষতিকর বাঁধন ছিড়িয়া যায়। উন্নত ইংরেজীকে বাদ দিয়া দেশের ভাষাকে ধরিয়া নেওয়ার মাঝে শুধু ভাবালুতা আছে তা নয়। নিজের ভাষা সহজ বলিয়া অতি সহজে একে শিখা যায়-অতি সহজে এর মারফত বিদ্যা ও জ্ঞান লাভ করা যায়-অতিসহজে ও কম খরচে দেশের বেশুমার অশিক্ষিত জনগণকে শিক্ষিত করিয়া তোলা যায়।
কিন্তু জনগণের সহজ ভাষাকে যদি আমরা অদরকারীভাবে কঠিন ও দূরায়ত্ত পন্ডিতি ভাষা করিয়া শিকায় তুলিয়া রাখি, ব্রাহ্মণবাদের অনুসরণে একে জনগণ হইতে দূরে সরাইয়া রাখি, তাহা হইলে ইংরেজীকে সরাইয়া দেওয়ার যুক্তি থাকে কই? আমাদের মাতৃভাষা মানে আমাদের মায়েরা-আমাদের জনসাধারণ যে ভাষায় কথা বলে সেই ভাষা। প্রয়োজনের তাগিদে আমরা সেই ভাষাকে নিশ্চয়ই সুন্দর ও মার্জিত করিব-দরকার হইলে অপর ভাষা হইতে সহজ সুন্দর শব্দ নিয়া হজম করিয়া আপন করিয়া নিব; কিন্তু তাই বলিয়া পান্ডিত্য করিয়া নিজেদের সহজ সরল শব্দ বাদ দিয়ে অপর ভাষার দুর্বোধ্য শব্দ ও জটিল ব্যাকরণ আনিয়া একে গুটিকয়েকের সাহিত্যের ও পান্ডিত্যের মওকা করিয়া দিতে পারি না। আমাদের মনে রাখিতে হইবে দেশের শতকরা ৯০ জনকে অশিক্ষিত ও অজ্ঞ রাখিয়া তাদের জ্ঞান ও সাহিত্য হইতে দূরে সরাইয়া রাখিয়া মুষ্টিমেয় কয়েকজনের সাহিত্যচর্চায় এই দেশকে কোন মতেই আশানুরূপ আগাইয়া নেওয়া যাইবে না।
আমাদের ভাষার বর্তমান সমস্যা দাঁড়াইয়াছে মোটামুটি কয়েকটিঃ * ইহার হরফ ও বানান সমস্যা। * ইহার ব্যাকরণ সমস্যা। * ইহার পরিভাষা সমস্যা। * ইহার সাধারণ রূপ। * পাঠ্য বই ও অনুবাদ সমস্যা।* সরকারি অফিসে বাংলা চালুকরণ ইত্যাদি…….।’
১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের ফলে তখনকার প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন বাংলা ভাষা প্রচলনের দাবিদারদের সাথে যে চুক্তি করেছিলেন-সে অনুসারে মাওলানা আকরম খানকে সভাপতি করে পূর্ববঙ্গ ভাষা কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি আমাদের বহু অনাবশ্যক বর্ণবাদ দিয়ে বানানকে সহজ করার ও আমাদের পূর্ব পাকিস্তানে চালু সহজ সুন্দর শব্দগুলিকে আমাদের লেখায় প্রাধান্য দেওয়ার সুপারিশ করেন। ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ফেরদাউস খান, সৈয়দ আলী আহসান, আব্দুল হাই, ট্রেনিং কলেজের প্রিন্সিপাল ওসমান গনি, ড. কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল হাসনাত, মুনীর চৌধুরী ও অন্যান্য সাহিত্যিক ও ভাষাবিদদের নিয়া একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির রিপোর্ট ১৯৬৩ সালের বৈশাখ সংখ্যার বাংলা একাডেমী পত্রিকায় ও বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই কমিটিও ণ, ষ, ঈ, ী, ঊ, ঋ, ৯, ঞ, ৎ প্রভৃতি বর্ণ, চিহ্ন ও যুক্তাক্ষর বাদ দিয়ে বানান সহজ করার সুপারিশ করেন। ১৯৫০ সাল হতে সৈনিক পত্রিকায় ও বিভিন্ন বই পুস্তকে সহজ বানান চালু করার চেষ্টা অব্যাহত ছিল। সেই সময় হতে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বহু জ্ঞানী ব্যক্তি ও সাহিত্যিক এই সম্বন্ধে বিস্তৃত আলোচনা করে আসছিলেন। এইভাবে সরকার নিয়োজিত কমিটির সুপারিশ-বাংলা একাডেমীর বিশেষজ্ঞ কমিটির সিদ্ধান্ত এবং সব মহলের তাগিদ সত্ত্বেও ব্যাপক আকারে আমাদের ভাষার এই জরুরী কাজটি সমাধা হয়নি।
ভাষা ও বানান সংস্কার আন্দোলন সৃষ্টি ও পরিচালনা, বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা তাঁর অন্যতম কর্মপ্রচেষ্টা। নেদুকুবি (নেশা, দুর্নীতি, কুসংস্কার বিরোধ) আন্দোলন সৃষ্টি করেন ১৯৭৪-৭৫ সালে। আমেরিকা-রাশিয়ার ঠান্ডা যুদ্ধের পঞ্চাশের দশকে তৃতীয় ব্লক আন্দোলনের ডাক দেয়া ছাড়াও আদর্শ পল্লী গঠনের প্রস্তাব করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রদূত বাংলার মহাপুরুষ প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম আমাদের কাছে যেমন এক আলোকরশ্মি, তেমনই আজকের জাতীয় জীবনে তিনি অনেকটা অবহেলিত এবং অনালোচিত ও উপেক্ষিত উপকথা।
Discussion about this post