খেলাধূলা ডেস্ক
প্রায় ২১ বছর আগে ২০০০ সালে কিশোর বয়সে যোগদান করেছিলেন বার্সেলোনায়। এরপর থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত একদিনের জন্যও বার্সা পরিচয় সরেনি মেসির নামের পাশ থেকে।পেশাদার ক্যারিয়ার শুরুর পর থেকেই স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার খেলোয়াড় আর্জেন্টাইন জাদুকর লিওনেল মেসি।
কিন্তু কোপা আমেরিকার ডামাডোলে গত ৩০ জুন শেষ হয়ে গেছে মেসির সঙ্গে বার্সেলোনার সবশেষ চুক্তি। যার ফলে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ফ্রি এজেন্ট খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছিলেন মেসি। অর্থাৎ বিনা ট্রান্সফার ফি’তে যেকোনো ক্লাবে যোগ দিতে পারতেন তিনি।
তবে বার্সার ভক্ত-সমর্থকদের দুশ্চিন্তা দূর করার সকল ব্যবস্থাই করে ফেলেছে ক্লাব কর্তারা। এরই মধ্যে মেসির সঙ্গে নতুন চুক্তির সবকিছুই চূড়ান্ত করে ফেলেছে তারা। শিগগিরই ঘোষণা করা হবে মেসির সঙ্গে ৫ বছরের নতুন চুক্তি। যেখানে আগের বেতনের অর্ধেক পারিশ্রমিকেই খেলতে রাজি হয়েছেন মেসি।
দীর্ঘ ২১ বছর পর ফ্রি এজেন্ট হওয়া এবং পুনরায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার বিষয়টিকে ঐতিহাসিক হিসেবে উল্লেখ করেছে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা। তাদের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই ঐতিহাসিক চুক্তির নেপথ্য ঘটনা।
পারিশ্রমিক কর্তন
নতুন চুক্তিতে আগের চুক্তির অর্ধেক আয় করবেন মেসি। এ বিষয়ে ক্লাব ও খেলোয়াড়ের মধ্যে কোনো আলোচনারই প্রয়োজন পড়েনি। বার্সার পক্ষ থেকে এটি বলা হলে দ্বিতীয় কোনো কথা ছাড়াই তা মেনে নেন মেসি। কেননা বর্তমানে আর্থিকভাবে খুব নাজুক অবস্থায় রয়েছে বার্সেলোনা।
তাই নিজের পারিশ্রমিক কমিয়ে হলেও প্রিয় ক্লাবে থাকতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি মেসিকে। তার চুক্তিতে বেঁচে যাওয়া অর্থ দিয়ে নতুন মৌসুমের দল গোছানোর কাজটিও সহজ হবে বার্সেলোনার জন্য।
নতুন চুক্তির মেয়াদ
নতুন চুক্তিতে মেয়াদ কতদিনের হবে, তা নিয়ে খানিক জটিলতা দেখা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ৫ বছরের চুক্তিতে রাজি হয়েছেন মেসি। তবে ক্লাবের পক্ষ থেকে কখনও ২ বছর, আবার কখনও ১০ বছরের চুক্তির কথাও শোনা গিয়েছে। এছাড়া খেলোয়াড়ি জীবন শেষে অ্যাম্বাসেডর হিসেবে থাকার ব্যাপারেও গুঞ্জন ছিল কিছুদিন।
শেষ পর্যন্ত সেগুলোর কোনোটিই আলোর মুখ দেখেনি। আপাতত খেলোয়াড় হিসেবেই ৫ বছরের চুক্তি করেছেন মেসি। তবে এখনও একটি সংশয় থেকেই যাচ্ছে। তা হলো এরই মধ্যে ৩৪ বছর হয়ে যাওয়া মেসি আদৌ পুরো পাঁচ বছর বার্সায় থাকবেন নাকি দুই মৌসুম পর চলে যাবেন মেজর লিগ সকারে।
ট্যাক্স অফিসের ব্যাপারে সতর্কতা
ইনকাম ট্যাক্সের বিষয়ে কোনো ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না মেসি। তিনি বার্সার কাছ থেকে পূর্ণ নিশ্চয়তা চেয়েছেন যে, পারিশ্রমিক যতোই হোক, সেটা যেনো শতভাগ আইনিভাবে হয়। যে কারণে চুক্তি চূড়ান্ত করার আগে ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেন দরবার করতে হয়েছে বার্সাকে। ট্যাক্স অফিস থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরেই রাজি হয়েছেন মেসি।
স্পন্সরদের ভূমিকা
বার্সেলোনার নতুন প্রেসিডেন্ট হুয়ান লাপোর্তা চেয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব মেসির সঙ্গে চুক্তিটি হয়ে যাক। তা শুধুই স্পোর্টিং কারণেই নয়, স্পন্সরদেরও চাপ ছিল। ক্লাবের বেশ কয়েকটি স্পন্সর অপেক্ষায় ছিল মেসির চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার। বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় দলে থাকলে উচ্চমূল্যের স্পন্সর পাওয়া যেমন সহজ, তেমনি তিনি না থাকলে স্পন্সররাও মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।
এ কারণেই ক্লাবের মূল স্পন্সর রাকুটেনসহ অনেকেই বারবার প্রশ্ন করে গেছে যে আদৌ নতুন চুক্তি করবেন কি না মেসি। কিছু স্পন্সর নতুন প্রস্তাব দিয়েছে আর কিছু প্রতিষ্ঠান মেসি থাকার শর্তে নতুনভাবে স্পন্সরশিপ শুরুর প্রস্তাব দিয়ে রেখেছিল।
স্পোর্টিং প্রজেক্ট
বার্সেলোনার সঙ্গে নতুন চুক্তি করার আগে মেসির সবচেয়ে বড় চাওয়া ছিল একটি স্পোর্টিং প্রজেক্ট। আর্জেন্টাইন সুপারস্টার নিজেই বার্সায় থাকতে আগ্রহী ছিলেন সবসময়, যদি ক্লাবের পক্ষ থেকে শিরোপা জেতার পথে যথাযথ প্রজেক্ট দেখানো হয়। তিনি নিজেও ক্লাবের আর্থিক দৈন্যতার ব্যাপারে ওয়াকিফহাল ছিলেন।
তবে এরিক গার্সিয়া, মেম্ফিস ডিপাই, সার্জিও আগুয়েরোর মতো খেলোয়াড়দের দলে ভিড়িয়ে বার্সেলোনা জানান দিয়েছে তারা নতুন মৌসুমে পূর্ণ চেষ্টা করবে শিরোপা জেতার লক্ষ্যে। আর এ কারণেই মূলত থেকে যেতে রাজি হয়েছেন মেসি।
Discussion about this post