ক্রিকেটের এক তুমুল বিতর্কিত শব্দ ‘মানকাডিং”। গতকাল যুবাদের ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান মুশফিক হাসানকে আফগান যুবা অধিনায়ক নানগেয়ালিয়া খারোটের মানকাডিং করার পর ফের আলোচনায় এসেছে এ আউট হওয়ার ধরণ। ইন্টারনেটে অনেকেই এক হাত নিয়েছেন সফরকারী দলের অধিনায়কের, কেউ আবার প্রশংসা করেছেন তার ‘গেম অ্যাওয়ারনেসের।” বরাবরের মতো এবারও মানকাডিং নিয়ে উঠেছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়!
মানকাডিংয়ের ইতিহাসটা বেশ পুরোনো। ১৯৪৭ সালে সিডনি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যান বিলি ব্রাউন নন স্ট্রাইকিংয়ে থাকা অবস্থায় ক্রিজের বাইরে বেরিয়ে আসার পর তাকে রান আউট করে দেন বোলার ভিনু মানকড়। সেটাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মানকাডিংয়ের প্রথম ঘটনা। বোলার মানকড়ের নাম থেকেই এ রান আউটের নাম করণ করা হয়েছে মানকাডিং।
তবে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট আর বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে আজকাল প্রায়ই দেখা যায় মানকাডিং। বিশেষ করে ২০১৯ সালের আইপিএলে জস বাটলারকে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের করা মানকাডিং নিয়ে পুরো ক্রিকেট দুনিয়াই দুই ভাগ হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের মানকাডিংও সাড়া ফেলেছিল বেশ, সৃষ্টি হয়েছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
সম্প্রতি এক ইনিংসে চার মানকাডিংয়ের ঘটনাও ঘটেছে। আইসিসি উইমেন্স টি-২০ বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ার ম্যাচে উগান্ডার বিপক্ষে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন ক্যামেরনের পেসার মেইভা ডৌমা।
মানকাডিংয়ের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তির অভাব নেই। যারা বিপক্ষে, তাদের একটি বড় অংশের যুক্তি হলো এভাবে ব্যাটসম্যানকে আউট করা ক্রিকেটের স্পিরিটের বিরোধী। অন্যদিকে অপর মেরুর পালটা যুক্তি হলো, মানকাডিং নয় বরং ক্রিজের বাইরে অবস্থান নিয়ে রান নেওয়ার সময় বাড়তি সুবিধা আদায় করাটাই ক্রিকেটের স্পিরিট বিরোধী। মানকাডিং যেহেতু ক্রিকেটের আইনসিদ্ধ, তাই এটিকে ‘আনফেয়ার’ কিছু বলতে নারাজ তারা।
মানকাডিং আউটটিকে ক্রিকেট থেকে তুলে দিতে চান অনেকে। ব্যাটসম্যান ক্রিজের বাইরে থাকলে আম্পায়ার তাকে সতর্ক করবেন অথবা সেই রানটি স্কোরবোর্ডে যোগ হবে না- এমন প্রস্তাবনাও আছে অনেকের কাছে। মানকাডিংয়ের পক্ষের লোক যারা- তাদের কাছেও যুক্তি প্রস্তুত আছে। যেহেতু বোলাররা দাগের বাইরে গিয়ে বল করলে তাদের সতর্ক করা হয়না- তাহলে কেন বাড়তি সুবিধা পাবেন ব্যাটসম্যানরা?
ক্রিকেট ইতিহাসের মহারথীরাও এ নিয়ে ভাগ হয়েছেন দুই দলে। অশ্বিনের মানকাডিং ঘটনার পর তাকে সমালোচনার তীর বিদ্ধ করেছিলেন ইয়ন মরগান, জেসন রয়, শেন ওয়ার্ন সহ অনেকে। বাংলাদেশের মোহাম্মদ রফিকও যে মানকাডিং পছন্দ করেন না তা বোঝা যায় ২০০৩ সালের ঘটনা থেকে। মুলতানে পাকিস্তানের বিপক্ষে সুযোগ পেয়েও মানকাডিং করেননি এ সাবেক ক্রিকেটার। আবার এর পক্ষ নিয়েছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার।
হঠাৎ একটি উইকেট ঘুরিয়ে দিতে পারে ম্যাচের বাঁক। তাই মানকাডিংয়ের পক্ষে-বিপক্ষে যে দলই ভারী হোক না কেন, যেহেতু এ উইকেট ক্রিকেটের আইনসিদ্ধ তাই ব্যাটসম্যানদের সতর্ক থাকাই শ্রেয়।
সুত্র- bdcrictime.com
Discussion about this post