শিক্ষার আলো ডেস্ক
আজ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের মৃত্যুবার্ষিকী । ১৯৩২ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করে শহীদ হন তিনি।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ই মে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বর্তমান পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম রাণী, ছদ্মনাম ফুলতারা।
ভীষণ মেধাবী কিন্তু অন্তর্মুখী, লাজুক এবং মুখচোরা স্বভাবের প্রীতিলতা ছেলেবেলায় ঘর ঝাঁট দেওয়া, বাসন মাজা ইত্যাদি কাজে মা-কে সাহায্য করতেন। তবে সবে শৈশব পেরিয়ে যখন কৈশোরে পা রাখলেন তখন প্রীতিলতার মনে “ঝাঁসীর রাণী” বইটি পড়ার সময় ঝাঁসীর রাণী লক্ষীবাইয়ের জীবনী গভীর রেখাপাত করে।
দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় নিকট-আত্মীয় বিপ্লবী দলের কর্মী পূর্ণেন্দু দস্তিদার প্রীতিলতার কাছে সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত কিছু গোপন বই জমা রাখেন। লুকিয়ে লুকিয়ে তখন তিনি পড়েন “দেশের কথা”, “বাঘা যতীন”, “ক্ষুদিরাম” আর “কানাইলাল”। এসব বই প্রীতিলতাকে বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে। উল্লেখ্য, এই পূর্ণেন্দু দস্তিদারই পরে প্রীতিলতা ও ছোট ভাই অর্ধেন্দু দস্তিদার স্মরনে চট্টগ্রামের পটিয়ায় শহীদ মিনার নির্মাণ করেন।
রাজনীতিতে প্রীতিলতার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ শুরু হয় ১৯৩০ সালে কলকাতার বেথুন কলেজে পড়তে যাওয়ার পর। সেখানে পূর্ণেন্দু দস্তিদার, মনোরঞ্জন রায়, কল্পনা দত্ত প্রমুখের সান্নিধ্যে এসে তিনি বিভিন্ন বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন।
অবশেষে আন্দোলনের কৌশল হিসেবে ১৯৩২ সালের ৫ই জুলাই তাঁকে বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে যেতে হয়। মাষ্টারদা সূর্য সেন এর পরিকল্পনা মাফিক ২৩শে সেপ্টেম্বর পাহাড়তলী ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণে ১০-১২ জনের একটি দলকে নেতৃত্ব দেন প্রীতিলতা।
কলকাতায় প্রীতিলতার ভাষ্কর্য
এই অভিযানের পর পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে দেশের জন্য আত্মবিসর্জন দেন এই সংগ্রামী নেত্রী। মাত্র ২১ বছরের জীবনে তিনি যে দেশপ্রেম, ত্যাগ এবং সংগ্রামী আন্দোলনের উদাহরণ রেখে গেছেন তা সকল মানুষের জন্য অনুস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
প্রীতিলতার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের অবস্থা নিয়ে বন্ধু ও সহযোদ্ধা কল্পনা দত্ত লিখেছেন, “প্রীতির বাবা শোকে দুঃখে পাগলের মত হয়ে গেলেন, কিন্তু প্রীতির মা গর্ব করে বলতেন, ‘আমার মেয়ে দেশের কাজে প্রাণ দিয়েছে’। তাঁদের দুঃখের পরিসীমা ছিল না, তবু তিনি সে দুঃখেকে দুঃখ মনে করেননি। ধাত্রীর কাজ নিয়ে তিনি সংসার চালিয়ে নিয়েছেন, আজো তাঁদের সেভাবে চলছে। প্রীতির বাবা প্রীতির দুঃখ ভুলতে পারেননি। আমাকে দেখলেই তাঁর প্রীতির কথা মনে পড়ে যায়, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেন”।
Discussion about this post