অনলাইন ডেস্ক
ই-কমার্স খাতের নিয়ন্ত্রণে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ডিজিটাল কমার্স আইনও করবে সরকার। বিকাশমান ই-কমার্স খাতকে সহযোগিতা করা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে মানুষ যাতে প্রতারিত না হয়, সেজন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।
বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, তথ্যও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে ডিজিটাল কমার্স ব্যবসায় সাম্প্রতিক সমস্যা বিষয়ে আয়োজিত এক পর্যালোচনা সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এসব কথা বলেন। প্রায় দুই ঘণ্টার এই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক এবং প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রতি ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকাসহ বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের থেকে আগাম টাকা নিয়ে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে পারছে না। আবার যাদের থেকে পণ্য নিয়েছে তাদেরও টাকা দিতে পারছে না। এতে দেশের লাখ লাখ মানুষের শত শত কোটি টাকা এসব কোম্পানির কাছে আটকে গেছে। পুরো ই-কমার্স খাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন পক্ষ থেকে ই-কমার্স খাতের নিয়ন্ত্রণ, আইন নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ সভা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
টিপু মুনশি বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে তাতে ১০-১২ কোম্পানি ঘটিয়েছে। এর মধ্যে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জের লোকজন জেলে আছে। ধামাকা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এটাও বাস্তব যে, দেশে এখন হাজার হাজার ই-কমার্স কাজ করছে। করোনাকালে যারা কাজ হারিয়েছে তারা অনেকে ই-কমার্সে ব্যবসা করে জীবনযাপন করছেন। ফলে ই-কমার্স বন্ধ করা যাবে না। ফলে ই-কমার্স চলতে দিতে হবে। যারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আগামীতে যাতে এ ধরনের কিছু না ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ইভ্যালিসহ অন্য যেসব প্রতারক ই-কমার্স কোম্পানিতে মানুষ টাকা দিয়ে পাচ্ছে না, তাদের টাকার দায় সরকার নেবে না। কারোর ব্যবসার দায় নেওয়ার কাজ সরকারের নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিকভাবে চলছে কিনা তা দেখা। ব্যবসায়ীদের সাহায্য করা। কিন্তু কেউ লোভের বশে লোকসান করলে তার দায় নেওয়া নয়। ইভ্যালিতে অনেকে লোভে পড়ে টাকা খাটিয়ে লোকসানে পড়েছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের বিক্রিতে বড় কোম্পানি যারা প্রচারে যাবে তাদের প্রচারণার সময় সতর্কীকরণ লিখতে হবে ‘সরকার এ ধরনের প্রতারণার দায়-দায়িত্ব নেবে না’। ইভ্যালির ৫০০ কোটি টাকার বেশি বাজারে দায় রয়েছে। অর্ধেক দায় রয়েছে ক্রেতার কাছে। অর্ধেক পণ্য সরবরাহকারীদের কাছে। ইভ্যালির কাছে শুনেছি ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকার সহায় সম্পত্তি আছে। বাকি টাকা কোথায় গেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হবে। তাদের টাকা কোথায় আছে, তারা কীভাবে দেবে তা নিয়ে একটা পরিকল্পনার চেষ্টা করা হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার তো টাকা নেয়নি। একেকজন এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কিনে লাভ করেছে। তারপর আরও বেশি বিনিয়োগ করেছে। সরকার তো সেই লাভের ভাগীদার নয়। মানুষকে সতর্ক হওয়া দরকার। এখন ইভ্যালি ও অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে- তারা টাকা কী করেছে; তাদের কাছে কী সম্পদ আছে। কোনো সম্পদ থাকলে তা দিয়ে কতটা ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়, তা দেখা হবে। পুরোপুরি তদন্ত করে কতটুকু তারা ক্ষতিপূরণ দিতে পারে, কতটা তাদের কাছে আছে সম্পদ; তা নিয়ে এসে মানুষকে দেওয়া যায় কিনা, তা দেখা হবে।
ইভ্যালি চালানো বা বন্ধ করাও আলোচনার বিষয় বলে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কোম্পানি কীভাবে চলবে বা কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে তার পরিকল্পনা কোম্পানির মালিককেই নিয়ে আসতে হবে। তার ব্যবসার পরিকল্পনা সে করবে। যার একদম কিছু নেই, শূন্য হাত; তাকে জেল থেকে বের করে দিয়ে লাভ হবে না। অন্ততপক্ষে মানুষকে ঠকিয়েছে, সে জন্য জেল তো খাটতে হবে। তার যদি কোনো প্ল্যান থাকে, সেটা যদি আইনসাপেক্ষ ও যৌক্তিক হয়, তাহলে আমরা সেটাও নেব- যে সে এইভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চায়।
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ই-কমার্স খাতে ইতোমধ্যে যে প্রতারণার বিষয়টি ঘটেছে, সেটি কীভাবে; বিচার কীভাবে করা যায় এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনায় মার্চেন্ট ও ক্রেতারা প্রতারিত না হন সে বিষয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ই-কমার্স বন্ধ করারও প্রস্তাব এসেছে আলোচনায়। কিন্তু ১০/১৫ কোম্পানির খারাপ কাজের জন্য ই-কমার্স বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। কারণ ই-কমার্সের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ জীবন-জীবিকা খুঁজে পেয়েছে। তবে এ খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখার জন্য ই-কমার্স রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে কোনো পূর্ণাঙ্গ আইন নেই। নীতিমালার অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। এ জন্য একটি ডিজিটাল কমার্স আইন করতে হবে।
তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন পক্ষের কাছে অনেক অভিযোগ আসছে। কিন্তু কোনো কেন্দ্রীয় অভিযোগ ব্যবস্থাপনা নেই। সে জন্য একটি সেন্ট্রাল কমপ্লেন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম করা হবে, যাতে অভিযোগগুলো মনিটরিং ও নিষ্পত্তি করা যায়। আর যারা ইতোমধ্যে প্রতারণা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রচলিত আইনে কিছু ক্ষেত্রে ঘাটতি আছে। ই-কমার্সে প্রতারণ হলে যাতে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে বিচার করা যায়, সে জন্য এ দুই আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে।
Discussion about this post