বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
পৃথিবীর উত্তরের মেরু অঞ্চল আর্কটিক জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার সাক্ষী। এ অঞ্চলের তাপমাত্রা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে, কমছে বরফ। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই অঞ্চলের আর্কটিক সমুদ্রের ৯০ শতাংশ বরফের স্তরই আগের চেয়ে পুরুত্ব হারিয়েছে। আর্কটিকের ব্যারেন্ট সমুদ্র অংশে একটি গবেষণা চালিয়েছে ১২০ জন পরিবেশ বিজ্ঞানী।
তারা বলছেন, গবেষণা করে তারা পেয়েছেন, এই অঞ্চলের বরফের স্তর পাতলা হয়ে গেছে। পোলার বেসিন থেকে যে বরফ আসত, সেই বরফের পরিমাণও কমে গেছে। এই সাগর রাশিয়ার পূর্ব উপকূল আর নরওয়ের মূল ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত। আর্কটিকের খুব ছোট অংশ এটি। কিন্তু হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধান আর রাশিয়া ও নরওয়ের জেলেদের জন্য মাছ ধরার উল্লেখযোগ্য এই অঞ্চল।
আর্কটিক অঞ্চলে গ্রীষ্ম মৌসুমে যে পরিমাণ বরফ থাকে, এবার সেটা ১২ বারের মতো সর্বনিম্ন পর্যায়ে গেছে। ২০২১ সালে প্রায় ৫০ লাখ স্কয়ার কিলোমিটার কমেছে আর্কটিকের বরফ। এর আগে আর্কটিকে রেকর্ড পরিমাণে বরফ কমেছিল ১৯৭৮ সালে। ২০০৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৫ শতাংশ কমে গেছে এ অঞ্চলরে বরফ।
নাসার ৪৩ বছরের স্যাটেলাইটের তথ্য বলছে, আর্কটিক জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার দৃষ্টান্ত হতে যাচ্ছে। বিশ্বের অন্য যে কোনো অঞ্চলের তুলনায় এই অঞ্চলের তাপমাত্রা দ্বিগুণ গতিতে বাড়ছে।
২০১২ সালে সর্বনিম্ন গলেছিল আর্কটিকের বরফ। ২০২১ সালে তার চেয়ে ৪০ গুণ বেশি গলেছে এই অঞ্চলের বরফ। ১৯৮১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সর্বনিম্ন যে পরিমাণ বরফ গলার কথা ছিল, ২০২১ সালেই সে পরিমাণ বরফ গলে গেছে। এ বছর ৬ লাখ স্কয়ার মাইল এলাকার বরফ গলে পানি হয়ে গেছে। দিন দিনই পাতলা হয়ে যাচ্ছে পুরু বরফের স্তর। এখন আর্কটিকে যে পরিমাণ বরফ আছে তা চার দশক আগের তুলনায় এক চতুর্থাংশ কমে গেছে। সেই দিন দূরে নেই যখন আর্কটিক পুরোটাই গলে যাবে।
বিশ্বের সমুদ্রগুলোতে যে পরিমাণ উষ্ণতা বেড়েছে, তার ৪ শতাংশই বেড়েছে আর্কটিকের সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বাড়ার কারণে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উত্তর সাগরের মেরিন লাইফকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে পানির উষ্ণতা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্রিটেন আর ইউরোপও। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ইউরোপিয়ান লবস্টার, কাকড়ার প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ আর অতিরিক্ত জলজ প্রাণি ও খনিজ সম্পদ আহরণের কারণে সমুদ্রের পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। পৃথিবীর বাস্তুসংস্থান স্বাভাবিক রাখতে সমুদ্রের ভূমিকার কোনো তুলনা নেই।
১৯৯৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সমুদ্রের তাপমাত্রা ০.০১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বেড়েছে প্রতি বছর। কৃষ্ণ সাগরে অক্সিজেনের পরিমাণ ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বছরে মাইনাস ০.১৬ মোল করে কমেছে। দক্ষিণ ভূমধ্যসাগরের ঢেউয়ের গতিবিধির পরিবর্তন হয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে। বাড়ছে বন্যা, বাল্টিক সাগর আর গালফ অব বোথনিয়ার অবস্থা আরো খারাপ। বেড়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, বেড়েছে বিপজ্জনক ঢেউ।
সূত্র: দ্য ন্যাশনাল নিউজ
Discussion about this post